Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২০ মে, ২০২৪,

অসাবধানতা ও সাঁতার না জানায় হাওরে একের পর এক মৃত্যু

আশরাফুল ইসলাম তুষার, কিশোরগঞ্জ

আশরাফুল ইসলাম তুষার, কিশোরগঞ্জ

জুলাই ১১, ২০২৩, ০১:০৮ পিএম


অসাবধানতা ও সাঁতার না জানায় হাওরে একের পর এক মৃত্যু

কিশোরগঞ্জের হাওরের স্বচ্ছ পানি আরও কাছে থেকে উপভোগ করতে অনেক পর্যটকই নেমে পড়েন নদীতে। এতেই ঘটছে দুর্ঘটনা। তীব্র স্রোত, চোরাবালি, নৌকাডুবি ও সাঁতার না জানার কারণে পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছেন পর্যটকরা।

সাঁতার না জানা, পর্যটকদের নিরাপত্তায় গাইডলাইন না থাকা এবং তাদের ঠিকমতো সচেতন না করায় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সতর্কতা-সংবলিত সাইনবোর্ড, স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ, লাইফ জ্যাকেট প্রদানের পাশাপাশি নৌ ও থানা পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও মৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে না।

পর্যটকদের অভিযোগ,হাওরের পর্যটনকেন্দ্রে কয়েক হাজার পর্যটক কোথায় ঘুরবে না কিংবা সাঁতার কাটবে না, তার নির্দেশনা দেন না দায়িত্বরত পুলিশ কিংবা স্বেচ্ছাসেবকরা। মাঝেমধ্যে মাইকিং এবং কয়েক জায়গায় সাইনবোর্ড টানিয়ে দায়িত্ব শেষ করা হয়।

ঘুরতে যাওয়া কলেজ ছাত্র মাহফুজ জানায়,পর্যটকদের নিরাপত্তায় কেউ আন্তরিক নয়। স্বেচ্ছাসেবক থাকলেও কেউ কোনো নির্দেশনা দিচ্ছে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,গত সোমবার ১০ জুলাই দুপুরে অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের কাকুরিয়া গ্রাম থেকে একটি গরু নিয়ে পাঁচ নারী-পুরুষ ও দুই শিশু ছোট ডিঙ্গি নৌকায় করে বাজিতপুর উপজেলার হাছানপুর গ্রামে যাচ্ছিলেন। অষ্টগ্রামের কাস্তুল ইউনিয়নের ভাতশালা এলাকায় পৌঁছলে তীব্র স্রোতে নৌকাটি ডুবে যায়।

এ সময় অনেকেই দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। কেউ কেউ মোবাইল ফোনে ছবি তুলছিলেন। কিন্তু কেউ তাদেরকে উদ্ধারে এগিয়ে যায়নি।এ সময় ঘুরতে আসা সাবিকুল ইসলাম নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে ডুবে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধার করতে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি এক শিশু ও এক নারীকে পানি থেকে উদ্ধার করেন। পরে নিজেই হাওরের পানিতে তলিয়ে যান সাবিকুল।

অন্য যাত্রীরা তীরে উঠতে সক্ষম হন।খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল অভিযান চালিয়ে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে সাবিকুলের মরদেহ উদ্ধার করে।এর আগে গত ৪ জুলাই করিমগঞ্জে এক বন্ধুর বিয়েতে এসে হাওরের পানিতে ডুবে দুই বন্ধুর মৃত্যু হয়। উপজেলার গুণধর উচ্চবিদ্যালয়ের দক্ষিণে বড় হাওরে পাঁচ বন্ধু মিলে গোসল করতে গেলে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

একই দিন কুলিয়ারচর ও কটিয়াদিতে পানিতে ডুবে আরও দুই তরুণের মৃত্যু হয়। এর আগে গত বছর বর্ষার সময় হাওরের পানিতে শিশু, পর্যটকসহ অন্তত ২০ জনের মতো মানুষ মারা গেছে। অসাবধানতা ও সাঁতার না জানার কারণে মৃত্যুর এ মিছিল বলে মন্তব্য স্থানীয় লোকজনের। ২০২১ সালের বর্ষাতেও হাওরে ডুবে ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

গচিহাটা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আক্তারুজ্জামান খান বলেন,প্রায় সব পয়েন্টে পর্যটকদের সতর্ক করা হয়।পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা, স্থানীয় মানুষজন সবাই সতর্ক করা সত্বেও সাতার না জেনে জলে নেমে মানুষ মারা যায়।

সাঁতার জানলেও স্রোতে যেন কেউ গোসল করতে না নামেন, সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকার কথা বললেন কিশোরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা আবুজর গিফারী।তিনি বলেন, বর্ষায় কিশোরগঞ্জের হাওরে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়।

এবার সাঁতার না জানা সত্ত্বেও পানিতে নামায় কয়েকজন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। সেটা খুবই দুঃখজনক। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। তবে সবাইকে আরও সতর্ক থাকা উচিত। পাশাপাশি পানিতে বেড়াতে গেলে অবশ্যই যেন লাইফ জ্যাকেট পরে নেন সবাই।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে হাওর অধ্যুষিত করিমগঞ্জ, ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলীর নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যেসব জায়গা বিপজ্জনক, সেসব জায়গায় সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপনের পাশাপাশি নৌকায় ভ্রমণ ও পানিতে গোসলের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া হাওরের মাঝে যেন কেউ রাত্রীযাপন না করেন এবং সন্ধ্যার আগেই যেন হাওর থেকে নিরাপদ জায়গায় উঠে আসেন, সে বিষয়েও সতর্ক করা হচ্ছে।

এইচআর
 

Link copied!