Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪,

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে নবীগঞ্জে চা শ্রমিকদের আন্দোলন প্রত্যাহার

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি

আগস্ট ১৯, ২০২৩, ০৫:১৬ পিএম


প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে নবীগঞ্জে চা শ্রমিকদের আন্দোলন প্রত্যাহার

প্রধানমন্ত্রীর অধিদপ্তরের নির্দেশে মন্ত্রী পরিষদ নবীগঞ্জ উপজেলার ইমাম ও বাওয়ানির চা বাগানের শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ভাতাধিসহ যাবতীয় দাবি পাওনা পরিশোধে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

শনিবার (১৯ আগস্ট) সকালে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এবিষয়ে চা শ্রমিকদের জানিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। ইমাম চা বাগানের ডাকবাংলোয় আয়োজিত মতবিনিময় সভা শেষে চা শ্রমিকরা তাদের একমাসের ধর্মঘট, মানববন্ধন ও অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

গত ১ মাস ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের চা শ্রমিকরা। চলমান তলব, রেশন, বকেয়া মজুরি, বোনাস, উৎসব ভাতা, ভবিষ্যত তহবিলের বকেয়া টাকা, চিকিৎসা, স্থায়ী বাসস্থান নিশ্চিত করণের দাবিতে দফায় দফায় নানা কর্মসূচি পালন করে আসলেও কার্যত কোনো সমাধান। তবে শনিবার মন্ত্রী পরিষদ সচিবের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আবারও কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে।

হবিগঞ্জ জেলার হবিগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নে অবস্থিত ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের পাওনা বেতন ও অন্যান্য ভাতা পরিশোধের লক্ষ্যে আগামী ২২ আগস্ট দুপুরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সমূহ, বাংলাদেশ চা বোর্ড , প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জেলা প্রশাসক হবিগঞ্জ ও মালিকপক্ষের সাথে বৈঠকে বসবে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ। ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের শ্রমিকবৃন্দ দীর্ঘদিন যাবত বেতন ও অন্যান্য ভাতাদি পাচ্ছেন না ৷

দীর্ঘ ৬ সপ্তাহ যাবত সাপ্তাহিক তলব ও রেশন না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন ৷ গত ১১ জুলাই ২০২৩ তারিখে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজারে ইমাম ও বাওয়ানি বাগানের শ্রমিকবৃন্দ, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিকপক্ষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মালিকপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ পরিশোধ না করার প্রেক্ষিতে পুনরায় ২৬ জুলাই ২০২৩ তারিখে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, হবিগঞ্জে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবীগঞ্জ, বাগানের শ্রমিকবৃন্দ, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ এবং ইমাম বাওয়ানি বাগানের মালিকপক্ষ একটি বৈঠক করেন৷

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ জুলাই বকেয়া তলব রেশন ও  বিগত দুই বছরের বকেয়া বেতন পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয় ৷  অর্থ পরিশোধের জন্য মালিকপক্ষ অঙ্গীকার করলেও তা পরিশোধ করেননি৷

বিষয়টি হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করলে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ আগামী ২২ আগস্ট ২০২৩ তারিখে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাটি ডেকেছে ৷ এ সভার বিষয়ে ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের শ্রমিকদের অবহিত করতে গতকাল সকাল ১১টায় ইমাম চা বাগানে আসেন হবিগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জনাব মো. রফিকুল আলম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব প্রিয়াংকা পাল ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নবীগঞ্জ জনাব ইমরান শাহারীয়ার, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এম.এ আহমদ আজাদ, সাবেক সহ সভাপতি এম.মুজিবুর রহমান, চা বাগানের ম্যানাজার ফখরুল ইসলাম, চা বোর্ডের রেজাউল করিম, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, ইমাম চা বাগানের সভাপতি রামভজন রবিদাশ প্রমুখ।

শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করে ২২ আগস্ট ২০২৩ তারিখে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিষয়টি দ্রুত সমাধানের বিষয়ে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন৷ এ সময়ে চা বাগানের পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও সাধারণ শ্রমিক বৃন্দ জেলা প্রশাসক, হবিগঞ্জ মহোদয়ের উদ্যোগে আস্থা ব্যাক্ত করেন ৷

চা শ্রমিকদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নে অবস্থিত ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগান। এ দুটি বাগানে কাজ করেন ৩৬০ জন চা শ্রমিক।

শ্রমিকদের দাবি, ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের ৩৬০ জন শ্রমিকের শ্রমচুক্তি মোতাবেক শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি/এরিয়ার অর্থ বাবদ ২০১৯-২০ ও ২০২১-২২ অর্থ বছরের ৮১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, এরিয়া বোনাসের ১৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা পরিশোধ করছেনা মলিকপক্ষ। এছাড়া চা বাগান শ্রমিক ভবিষ্যত তহবিলের (পিএফ) ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা মালিক পক্ষ পিএফ কার্যালয়ে জমা প্রদান না করার ফলে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকগণ পিএফ অর্থ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে চা শ্রমিকদের রোদ-বৃষ্টিতে বাসস্থানে অবস্থান করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত তারা।

হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক দেবী চন্দ বলেন- (২২ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের সংকট সমাধানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে মালিকপক্ষকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। সেই বৈঠক থেকে সমাধানে যথাযাথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এদিকে সচিবালয়ে বৈঠকের উদ্যোগ গ্রহণ করায় (২১ আগস্ট) চা শ্রমিকদের কর্মসূচি সাময়িক ভাবে স্থগিত করেছে।

এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ার বলেন, আমরা আশাবাদী মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর অধিদপ্তর স্থায়ীভাবে সমাধান করবেন। দুটি চা বাগানের শ্রমিকদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক দেবী চন্দ্র তিনি সমস্ত দাবি দাওয়া তুলে ধরবেন।

এআরএস

Link copied!