এনামুল হক (পটুয়াখালী) বাউফল
সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩, ০৩:১২ পিএম
এনামুল হক (পটুয়াখালী) বাউফল
সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩, ০৩:১২ পিএম
আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পটুয়াখালী বাউফল আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন। বিশেষ করে সরকারি দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বিরোধী দল বিএনপি ও অন্য রাজনৈতিক দলের এখনো এ নির্বাচন ঘিরে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা না গেলেও এ আসনে দলগুলোর প্রার্থীর ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে। থেমে নেই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতা।
১৯৭৯ সাল থেকে টানা ৪০ বছরে সাত বার আ. লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি হয়েছিলেন আসম ফিরোজ। সাগর কন্যা খ্যাত পটুয়াখালীর এ আসন টি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনটি ১৫টি ইউনিয়ন, ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত । যার মোট ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৯৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৫৩ জন। পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার ৪১ জন । তবে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ হলে মোট ভোটারের সংখ্যা আরো সাড়ে ৪ থেকে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
জানা যায়, ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ. লীগের আব্দুল আজিজ খন্দকার এ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন।
‘৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে রিক্সা প্রতিক নিয়ে আসম ফিরোজ ‘৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এর আসম ফিরোজ, আওয়ামী সরকারের এ তিন মেয়াদ নিয়ে সাত বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আসম ফিরোজ। ২০০১ সালে ৮ম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করলে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপি সহিদুল আলম তালুকদার। এ আসনটিতে আ. লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দীর্ঘকালের।গত দুই দশকে দলের অভ্যন্ত্মরে হানাহানি, সংঘাত, রক্তপাতে নিহত হয়েছেন একাধিক দলীয় কর্মী।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থাকলেও তা সহিংসতায় রূপ নেয়নি কখনো। অভিযোগ রয়েছে এই আসনের আওয়ামী লীগ এর বর্তমান এমপি আসম ফিরোজ দীর্ঘদিন একক নেতৃত্বের কারনে দল কে ব্যাক্তিগত লীগ, ও পরিবার লীগে পরিনত করেছে। হাতে গোনা কয়েকজন নেতাকর্মী দিয়ে দল পরিচালনা করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বানিজ্য দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ না থাকা, সারা দেশে উন্নয়নের গনজোয়ার থাকলে ও এই উপজেলায় তেমন কোন দৃস্টি নন্দন কর্মকান্ড না হওয়ায় এতে করে সাধারণ জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীরা হতাশ হয়েছেন।
বিগত উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলের দলের ত্যাগী নেতাদের স্হান না হওয়া এবং কিছু হাইব্রিড মাইম্যান দলের গুরুত্বপূর্ণ স্হানে জায়গা হওয়ায় দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ২০১২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই আসনে এর প্রমাণ ও মিলেছে। তবে এই আসনে অন্য দলের থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা খুব শক্তিশালী প্রার্থী বারবার প্রমাণ মিলেছে ভোটের ময়দানে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বারবারের বিজয়ের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে কঠিন লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন এই আসনের আওয়ামীলীগের প্রার্থী যিনি আসবেন।
এবার এ আসনে আ. লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন কয়েকজন। তারা হচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আসম ফিরোজ, সাবেক কৃষক লীগের সাধারন সম্পাদক, সামসুল হক রেজা, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক আব্দুল মোতালেব হাওলাদার, পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, জিয়াউল হক জুয়েল। এভিআর গ্রুপ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান হাসিব আলম তালুকদার, মার্কেনটাইল ব্যাংক ভাইস চেয়ারম্যান, ফিরোজ আলম।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রিয় বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক, মুনির হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল আলম তালুকদার, সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি, ইন্জিনিয়ার ফারুক আহম্মেদ। এ ছাড়াও যোটে রয়েছেন জামায়েত ইসলামি ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সাধারন সম্পাদক ড: শফিকুল ইসলাম মাসুদ
এ আসনটি বরাবরই আ. লীগের আসন হিসেবে পরিচিত। আ. লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দাবি করেন নৌকা প্রতীক যে পাবেন তিনিই নির্বাচিত হবেন। অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মনে করেন আ. লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগে তারা এ আসনটি দখল করে নিতে পারবেন।
এই আসনের বর্তমান এমপি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আসম ফিরোজ তিনিও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবেই চ্যালেঞ্জিং হবে বলে নির্বাচন বিশ্লেষকদের ধারণা। এ ছাড়াও আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে এখন থেকেই যাদের নাম শোনা যাচ্ছে সর্বত্র মহলে তারা হলেনঃ উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক আব্দুল মোতালেব হাওলাদার, এক সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন, এরপর যুবলীগের সভাপতি হয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য থেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এরপর তিনবার দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। বর্তমানে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নিজ এলাকা বগা ইউনিয়ন পরিষদে তিনি তিনবার চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বর্তমানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, ও পৌরসভার মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল, তিনি ২০১২ সালের পৌর নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন।এর পর থেকেই আওয়ামী লীগ এর একটা বড় অংশ নিয়ে উপজেলা রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন এরপর ২০২০ সালে দ্বিতীয়বা তিনি বিনাপ্রতিদ্ন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার সমর্থকরা বলছেন মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল এলাকাবাসীর কাছে ক্লিন ইমেজের হিসেবে সমাদৃত। দল তাকে মনোনয়ন দিলে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচিত হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন।
হাসীব আলম তালুকদারের বাবা স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করেন তার পরিবারের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে হাসিব আলম তালুকদার এলাকায় জনকল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছেন। শীতবস্ত্র বিতরণ, দুস্থ মানুষকে সহায়তা, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো উন্নয়েন আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। বাউফলের রাজনীতিতে তিনি নতুন মুখ। তিনি পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ এর সাধারন সদস্য, প্রধানমন্ত্রী পরিবারের আস্থাভাজন ও তার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি নৌকার মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী তার কর্মী সমর্থকেরা।অ্যাডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজার বাবা মরহুম আবদুল আজিজ খোন্দকার এ আসনে থেকে এমপি নির্বাচিত হন। বাবার আদর্শকে লালন করে খোন্দকার শামসুল হক রেজা রাজনীতিতে আসেন। ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ফিরোজ আলমের বাবা আবদুল গফুর মিয়া বাউফল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি বাবার পরিচয় কে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন।
এদিকে বিএনপি নেতা মুনির হোসেন কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের কাছে পরিচিত মুখ হলেও এলাকার রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় ছিলেন না। মাঝে মধ্যে এলাকায় এসে তার কিছু অনুসারী নিয়ে ঘোরাফেরা করেছেন। মুনির হোসেনের বাবা পটুয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক। তিনি চাইছেন, তার ছেলে এলাকার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হোক এবং বিএনপির মনোনয়ন তার ছেলেকে দেওয়া হোক।
শহিদুল আলম তালুকদার ১৯৯৬ সালে বিএনপির মনোনয়ন পান। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে মাত্র ২৬ ভোটে পরাজিত হন। তার কারণেই এ আসনে বিএনপির নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে পেরেছে। এরপর ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে পুনরায় বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এ নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হন। আইনি জটিলতার কারণে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অযোগ্য বিবেচিত হলে তার পরিবর্তে বিএনপি থেকে ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী আ স ম ফিরোজের কাছে পরাজিত হন। ২০১৮ সালে বিএনপির সাবেক এমপি সহিদুল আলম তালুকদারের স্ত্রী সালমা আলম লিলিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনিও পরাজিত হন।এ ছাড়াও বাউফল উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ডেল্টা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। ফারুক তালুকদার বাউফল বিএনপির দুর্দিনের কান্ডারি হিসেবে নেতাকর্মীর মাঝে পরিচিত। বিগত নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী আ স ম ফিরোজের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৫৬ হাজার ভোট পান।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে তিনিও মনোনয়ন চাইতে পারেন।এ আসন থেকে জামায়েতে ইসলামের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক, জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য সাবেক কেন্দ্রীয় সাবেক ছাত্র শিবির সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ মনোনয়ন চাইবেন। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের আসন ভাগাভাগি হলে এ আসনে তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে তার অনুসারীদের দাবি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও এলাকায় কাজ করছেন।এলাকার সচেতন ভোটারদের মতে, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে না এলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী যাকেই করা হবে, সেই বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। তবে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তবে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রার্থীর সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।
আরএস