Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪,

বরিশালে কিশোর গ্যাং’র দখলে বিনোদনের স্থান

বরিশাল ব্যুরো

বরিশাল ব্যুরো

অক্টোবর ১৭, ২০২৩, ০৩:০১ পিএম


বরিশালে কিশোর গ্যাং’র দখলে বিনোদনের স্থান

বরিশাল মহানগরীর বিনোদনের সীমিত স্থানগুলো এখন বখাটে এবং কিশোর গ্যাং-এর নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় নারী ও শিশুরা নিরাপত্তাহীন। নগর ভবনের স্বেচ্ছা অন্ধত্বে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানসহ হাতে গোনা শ্রান্তি বিনোদনের সবগুলো স্থাপনার আশপাশসহ অভ্যন্তর ভাগও ক্রমশ অবৈধ দোকানপাটে ভরে গেছে।

সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সুষ্ঠু নজরদারীর অভাবে সংগঠিত এবং অসংগঠিত উঠতি ও কিশোর মাস্তানের দল বেশীরভাগ শ্রান্তি বিনোদনের স্থানগুলোর অঘোষিত দখল নিয়েছে।

ফলে নগরীর প্রায় সব শ্রান্তি ও চিত্ত বিনোদনের স্থানগুলোতেই এখন সুস্থ সামাজিক পরিবেশ বিপন্ন। মাস্তানদের আড্ডাবাজিসহ নানা সমাজ বিরোধী কর্মকাণ্ডে নগরীর চিত্ত বিনোদনের স্থানগুলো এখন আর সমাজের শান্তি প্রিয় মানুষের প্রশান্তির স্থান নেই। ফলে প্রায় বিনোদন সুবিধাবিহীন এনগর জীবনে একটু শ্রান্তির স্থানগুলো নারী ও শিশুদের স্বস্তি দিতে পারছে না। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত নারী ও  শিশু সহ অভিভাবক মহলও।

এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখাসহ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও প্রতিটি পার্কে ফোর্স রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে আরো মনযোগী হতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদানের কথাও জানান পুলিশ কমিশনার। গত কয়েক বছর ধরেই নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, স্বাধীনতা পার্ক, ৩০ গোডাউন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহনারা বেগম পার্কের সমাজিক পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নগরবাসী।

এসব কথিত বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে সুস্থ-সামাজিক পরিবেশের সাথে নারী এবং শিশুদের নির্বিঘ্নে বিচরন ও বিনোদনের পরিবেশ ক্রমাগত বিলুপ্ত হচ্ছে। যান্ত্রিক এবং কোলাহলপূর্ণ এনগর জীবনের ক্লান্তি থেকে একটু শ্রান্তি পেতে এসব পার্কে এসে শিশু ও নারীরা প্রায়শই চরম বিরক্তিসহ বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে পরিবার পরিজন নিয়ে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বেড়াতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন মহানগর ট্রাফিক পুলিশের এক সার্জেন্টের স্ত্রী। এ ঘটনার পরে মহানগর পুলিশ কিছুটা নড়েচড়ে বসেছে। সার্জেন্টের স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় কিশোর গ্যং-এর এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও বাকিরা পলাতক। সিটি মেয়রের মায়ের নামে নগরীর মধ্যে দিয়ে চলমান জাতীয় মহাসড়কের ওপর গড়ে তোলা বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহানারা বেগম পার্কটিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকার নারী ও শিশুরা শ্রান্তি বিনোদনে এলেও এখানের পরিবেশও বিপন্ন।

একদিকে একটি জাতীয় মহাসড়কের ওপর এ পার্কটিতে প্রবেশ যেমন যথেষ্ট ঝুকিপূর্ণ, তেমনি এখানে উঠতি মাস্তান ও কিশোর গ্যাং’র বেপরোয়া কর্মকান্ড আগত নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করায় যথেষ্ট বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিদিন। এমনকি পার্কটির পাশে বিশাল লেক-এর চার ধারের বেশীরভাগই অবৈধ পথ খাবারের দোকান গোটা এলাকার সুস্থ সামাজিক পরিবেশকে অনেক আগেই বিপন্ন করে তুললেও তা দেখার কেউ নেই।  এসব পথ খাবারের অনেক দোকানে মধ্যরাত পর্যন্ত কি কেনাবেচা হয়, তা নিয়ে এলাকাবাসীরও প্রশ্ন রয়েছে।

দিনরাত এখানে বখাটে ছাড়াও বিভিন্ন কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বিরামহীন আড্ডাবাজি অনেক সময়ই বেলেল্লাপনাকেও হার মানাচ্ছে। ফলে এ পার্কে আগতদের প্রায় সবাই এখানের পরিবেশ নিয়ে অসন্তুষ্ট। পার্কটির অভ্যন্তর ভাগ সহ লেকটির পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিম পাড়ের রাস্তাটিও কিশোর মাস্তানদের অবাধ বিচরন ক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। আড্ডাবাজ এবং সংগঠিত ও অসংগঠিত কিশোর মাস্তান বাহিনীর সরব উপস্থিতি একটু শ্রান্তি খুঁজতে আসা নারী-পুরুষ ও শিশুদের স্বস্তি কেড়ে নিচ্ছে।

এমনকি এ উদ্যানের ওয়াকওয়ে’তে নিয়মিত বাতি না জ্বলায় সন্ধ্যার পরে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কাগজপত্রে বঙ্গবন্ধু উদ্যান ধুমপান মুক্ত এলাকা হলেও এখন বিড়ি-সিগারেটের সাথে গাঁজার গন্ধেও নারী ও শিশুদের প্রাণ ওষ্ঠাগত।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের জমিতে গড়ে তোলা এ পার্কটি বিজলি বাতি ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের হলেও এর অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ জেলা প্রশাসনের হাতে। কিন্তু এ উদ্যানের উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষায় সরকারী কোন প্রতিষ্ঠানের দায় আছে বলে এখন আর কেউ মনে করেন না।

নগরীর পাশে বহমান কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে বিআইডব্লিউটিএ’র অধুনালুপ্ত মেরিন ওয়ার্কশপের জমিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা পার্ক’টি নগরবাসীর চিত্ত বিনোদনের অন্যতম একটি স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হলেও কিশোর মাস্তান বাহিনীর উৎপাতে সেখানের সুস্থ পরিবেশও বিপন্ন। একই পরিস্থিতি সিএসডি গোডাউন সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদী তীরের বধ্যভূমিসহ ‘শতায়ু অঙ্গন’ এলাকায়ও। নদীর পাড়ে কোলাহলমুক্ত একটু প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটাতে এখানে নারী-পুরুষ ও শিশুরা ভীড় জমালেও কোন স্বস্তি নেই। এখানেও সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কিশোর ও উঠতি মাস্তানদের উৎপাতে সুস্থ সামাজিক পরিবেশ বিপন্ন। সাথে অবৈধ দোকানের ভীড়ে পা ফেলা দায়। অথচ এসব শ্রান্তি বিনোদনের স্থানগুলো গড়ে তুলতে সরকারী কোষাগার থেকে বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও তার রক্ষণাবেক্ষনে কোন সমন্বিত উদ্যোগ নেই।

নগরীর আমতলা মোড়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট-এর জমিতে গড়ে তোলা ‘স্বাধীনতা পার্কটি’র অবস্থা একই। এখানেও দিন-রাত কিশোর ও উঠতি মাস্তানদের অবাধ কর্মকান্ডে বন্দী সুস্থ সামাজিক পরিবেশ। ফলে এ পার্কে সকাল-সন্ধ্যা যারা হাটতে বা ঘুরতে আসেন, তাদেরকে প্রায়শই যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।

এআরএস

Link copied!