Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪,

স্বর্ণকারের দোকানের অ্যাসিডের ব্যবহার, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর

ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪, ০৯:৫২ এএম


স্বর্ণকারের দোকানের অ্যাসিডের ব্যবহার, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

ফরিদপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ নীলটুলি স্বর্ণকার পট্টিতে দিনেরাতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে পোড়ানো হচ্ছে নাইট্রিক ও সালফিউরিক অ্যাসিড। বাণিজ্যিক এলাকার সঙ্গে এটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকাও।

শহরের প্রধান রাস্তা মুজিব সড়কের সবচেয়ে ব্যস্ততম অংশ এখানেই। সড়কের দুই পাশে রয়েছে অনেকগুলো স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল। যেখানে অ্যাসিডের ঝাঁঝালো গন্ধে জনসাধারণের চলাচল করাই দায়। শুধু শহরেই নয়, উপজেলাগুলোর প্রতিটি বাজারেই এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

এর ফলে স্থানীয় অধিবাসীদের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। সন্ধ্যা নাগাদ বাতাসে এই অ্যাসিডের মাত্রা ভয়াবহ আকারে পৌঁছে। দিনের পর দিন এভাবে চলতে থাকলেও দেখার যেন কেউ নেই।

ফরিদপুরে নীলটুলি স্বর্ণকার পট্টিতে শতাধিক জুয়েলারি দোকান ছাড়াও শহরের বিভিন্নস্থানে গড়ে ওঠা স্বর্ণকারের দোকানে অবাধে ব্যবহৃত হচ্ছে নাইট্রিক ও সালফিউরিক অ্যাসিড। অ্যাসিড পোড়ানোর নীতিমালা থাকলেও তা কেউ মানছেন না।

সরেজমিনে নীলটুলি স্বর্ণকারপট্টিসহ বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা যায়, অ্যাসিড পোড়ানোর জন্য আলাদা কক্ষ ও চিমনি ব্যবহার করার বিধান থাকলেও অধিকাংশ দোকানেই সেটি নেই। এসব স্বর্ণের দোকানের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি নেই। ওই এলাকায় অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে সকাল থেকে রাত অবধি কয়েক হাজার কর্মচারী ও দোকান মালিক অবস্থান করেন। তারাও এই দূষণের শিকার। অ্যাসিড পোড়ানোর কারণে তাদের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হচ্ছে।

ফরিদপুর জর্জ কোর্টের আইনজীবী সেলিমুজ্জামান বলেন, স্বর্ণকারপট্টির এই সড়কে যাতায়াতের সময় ধোঁয়ার কারণে আমার তো বটেই পথচারীদের প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আমিন বাপ্পি জানান, বারবার বলেও কোনো লাভ হয় না। অ্যাসিডের ধোঁয়া পথচারী, বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন অফিসের লোকজনের স্বাস্থ্যহানি এবং পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোনার গহনা তৈরির জন্য অ্যাসিড ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। সোনা থেকে খাদ বের করার জন্য নাইট্রিক অ্যাসিড দিয়ে পোড়াতে হয়। আর গহনার সৌন্দর্য বাড়াতে ব্যবহার করা হয় সালফিউরিক অ্যাসিড। ব্যবহারের সময় এই অ্যাসিড বাতাসে মিশে বিষাক্ত জ্বলীয়বাষ্পে রূপ নেয় এবং তা শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এতে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগ দেখা দেয়। এজন্য আইন অনুযায়ী স্বর্ণের দোকানগুলোতে ২০ ফুট উঁচু চিমনি ও স্বর্ণ তৈয়ারীর নিজস্ব কারখানা থাকতে হবে। কিন্তু সরকারি নিয়মনীতির প্রতি তোয়াক্কা নেই স্বর্ণকারের দোকানগুলোতে।

চিকিৎসকেরা জানান, এর প্রভাবে মানুষের শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ ছাড়াও হার্টের সমস্যা হতে পারে। নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডযুক্ত ভারি গ্যাস সালফিউরিক অ্যাসিড বাতাসের সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হৃদরোগসহ নানা উপসর্গের জন্ম দিচ্ছে।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, তিনবার নাইট্রিক অ্যাসিড আর একবার সালফিউরিক অ্যাসিড না মেলালে স্বর্ণের কোন কাজ তারা করতে পারে না। তবে এর গ্রহণযোগ্য মাত্রা কতটুকু সেটি বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি এন্ড কর্পোরেশনের পরিচালক বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ফরিদপুরের উপপরিচালক মো. সাঈদ আনোয়ার বলেন, বিষয়টি তেমনভাবে জানা নেই। কেউ অভিযোগও করেনি। তবে যেহেতু আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম, আমরা এবিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়মের আওতায় আনার জন্য প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হবে।

ইএইচ

Link copied!