Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪,

ফেনীতে নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে ‘বাধ্য’ শিক্ষার্থীরা

ফেনী প্রতিনিধি

ফেনী প্রতিনিধি

মার্চ ১২, ২০২৪, ০৪:৩০ পিএম


ফেনীতে নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে ‘বাধ্য’ শিক্ষার্থীরা

ফেনী জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ্যবইয়ের বাইরেও সহায়ক বইয়ের নামে নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে শিক্ষার্থীদের চাপ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একশ্রেণির ব্যবসায়ী ও শিক্ষকদের একটি সিন্ডিকেট উচ্চমূল্যের এসব বই করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবখানেই প্রায় সব শ্রেণিতে এসব গাইড বইয়ের দাম বাড়িয়ে ওই সিন্ডিকেট লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য চালাচ্ছে।

অথচ, আইন অনুযায়ী, পাঠ্যপুস্তকের নোটবই প্রকাশনা ও বিক্রি করা নিষিদ্ধ। এ আইন উপেক্ষা করেই ফেনী শহরসহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অহরহ নিষিদ্ধ এ গাইড বই বিক্রি হচ্ছে প্রশাসনের চোখের সামনেই।

সূত্র জানায়, আইন অনুযায়ী এনসিটিবির অননুমোদিত বই পাঠ্যতালিকাভুক্ত করা যাবে না। কিন্তু বেশিরভাগ স্কুলে পাঠ্যতালিকা (বুকলিস্ট) তৈরিতে নিয়ম ভঙ্গ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর পাঞ্জেরী-লেকচার কোম্পানির যে বই ১ হাজার ৩শ থেকে ১ হাজার ৫শ টাকা বিক্রি হয়েছিল এবার তা বেড়ে ২ হাজার ২শ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। এডভান্সড কোম্পানির বই বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১শ টাকা।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের নতুন কারিকুলাম অনুসারে প্রকাশিত সরকারি বইয়ের কোন নোট গাইড ও সহায়ক বইয়ের প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন অনেকে। তবে এদের কেউ কেউ নতুন কারিকুলাম বোঝার সুবিধার্থে সহায়ক গাইড কেনার পক্ষে মত দেন।

তবে বিষয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওপেন সিক্রেট হলেও কোন শিক্ষক এ নিয়ে কথা বলতে রাজি নন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, নতুন কারিকুলামের বই পাঠদানের জন্য সরকার শিক্ষকদের প্রতি টিচার্স গাইড হস্তান্তর করেছেন। তাছাড়া ক্লাসের শিক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন করে পিয়ার, পেয়ার ও গ্রুপ ওয়ার্কের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যেটি অনুসরণ করলে ছাত্রদের বাড়তি অন্য কোন বই কেনার প্রয়োজন নেই।

একটি সূত্র জানায়, স্থানীয় পুস্তক ব্যবসায়ীদের একটি চক্র জনপ্রতিনিধিদের নাম ভাঙ্গিয়ে জেলার প্রায় সবকটি স্কুলে ঢাকার কয়েকটি প্রকাশনীর বই পাঠ্যতালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় সবচেয়ে বেশি নাম উঠে এসেছে পাঞ্জেরী প্রকাশনীর। কিছু কিছু স্কুলে লেকচার, অনুপম প্রকাশনী ও অ্যাডভান্সড পাবলিকেশনের বইও পাঠ্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। এজন্য ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে শিক্ষকদের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।

অপর একটি সূত্র জানায়, সরকার দলীয় নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে গিয়ে প্রচারণা চালায় লেকচার কোম্পানির বিক্রয়কর্মীরা।

সম্প্রতি সোনাগাজীর আল-হেলাল অ্যাকাডেমিতে প্রচারণা চালাতে গেলে বিক্রয়কর্মীকে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে দেন শিক্ষক। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে ওই শিক্ষককে হুমকি-ধামকি দেয়া হয়।

তাছাড়া শহরের গিরিশ-অক্ষয় একাডেমি ও জিএ একাডেমিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেকচার গাইড কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় দুই কাউন্সিলরের নাম ব্যবহার করে এ ব্যাপারে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই কায়দায় গ্রামাঞ্চলের স্কুলেও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিদের মাধ্যমে লেকচার গাইডে প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফি উল্যাহ বলেন, এখন আর আগের মতো গাইড বই প্রয়োজন নেই। নতুন কারিকুলামে ক্লাসেই সব শিখে ফেলার নিয়ম রয়েছে।

ইএইচ

Link copied!