Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪,

মির্জাপুরে বংশাই নদীর বালু-মাটি লুট, পাড় ভাঙনের শঙ্কা

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি:

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি:

মে ২৯, ২০২৪, ০৩:১৩ পিএম


মির্জাপুরে বংশাই নদীর বালু-মাটি লুট, পাড় ভাঙনের শঙ্কা

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বংশাই নদীর বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজিং করে বাল্কহেড ভর্তি করে নদীর বালু-মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। সরকারদলীয় প্রভাবশালীরা একাজের সাথে জড়িত বলে ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর দাবি। ফলে হুমকিতে পড়েছে নদীপাড়ের ঘরবাড়ি, স্কুল, মসজিদ, কৃষিজমি ও রাস্তা-ঘাট।
সরজমিনে, উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের বংশাই নদীর রহিমপুর এলাকায় গিয়ে মিলেছে নদীর বালু-মাটি উত্তোলনের দৃশ্য। রীতিমতো সন্ত্রাসী কায়দায় বীরদর্পে করা হচ্ছে এসব।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রায় এক দেড় মাস যাবৎ রহিমপুর এলাকায় দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এভাবে নদীর বালু-মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের স্পট থেকে হাফ কিলোমিটার দূরে লতিফপুর-চাঁনপুর ব্রিজের পাশেই বাল্কহেড থামিয়ে রাখা হয়। রাত হলে বৃদ্ধি পায় ড্রেজারের (খননযন্ত্র) সংখ্যা। সুযোগ বুঝে বসতবাড়ীর কাছাকাছি ড্রেজিং শুরু করে বালু ব্যবসায়ীরা। বালু-মাটি লুটপাটকারীদের প্রতিনিধিরা দিনরাত সেখানে পাহারা দিয়ে থাকেন। প্রতিবাদ করলে মারপিট ও থানা পুলিশের ভয় দেখানো হয়। বালু খোকোরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় নদী পাড়ের বসবাসরত দরিদ্র পরিবারগুলো তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না।

আরও জানা যায়, দিনরাত মিলে ওই এলাকা থেকে প্রায় বাল্কহেড ভর্তি বালু উত্তোলন করে পাশ্ববর্তী গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলায় বিক্রি করা হয়। একটি বাল্কহেড লোড দিতে একটি ড্রেজারের ৩০ মিনিট সময় লাগে। একটি বাল্কহেডে প্রায় ৫০০০ ঘটফুট বালু লোড হয়ে থাকে। যার প্রতি ঘটফুটের বাজার মূল্য ১২-১৫ টাকা। সে

হিসেবে প্রতি ২৪ ঘন্টায় ৫০-৬০ টি বাল্কহেড ভর্তি বালু লোড করা হয়। এভাবে অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বালু-মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রতি ২৪ ঘন্টায় ২৫-৩০ লক্ষ টাকার বালু বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অবৈধ বাল্কহেড বসিয়ে পাইপ লাগিয়ে বালু উত্তোলন করছে। অথচ, ২০১০ সালের বালু মহাল আইনে বলা হয়েছে, বিপণনের উদ্দেশে কোন উন্মুক্ত স্থানে ও নদীর তলদেশ থেকে বালু-মাটি উত্তোলন করা যাবে না। কিন্তু এ নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে দিনে-রাতে অবৈধভাবে বালু-মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে খামারপাড়া গ্রামের শফিক নামের এক ব্যক্তি বালু উত্তোলনের বিষয়টি দেখভাল করেন। ঘটনাস্থলে তাকে না পেয়ে মুঠোফোনে একাধিক যোগাযোগ করা হলেও তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয় শফিক, লিটন, কাজল ও জোবায়ের গংয়ের একটি সিন্ডিকেট সরকারদলীয় প্রভাব খাটিয়ে বালু-মাটি উত্তোলন করছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা বাছাতন বলেন, এরআগে বালু তোলা বন্ধ করার জন্য প্রতিবাদ করায় বালু উত্তোলনকারীদের ভয়ে আমার স্বামী, ছেলে, আমার দেবর ভাসুর ১৫ দিন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন।

রহিমপুর গ্রামের আজিজ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, বহু জায়গায় এসব নিয়া দৌড়াদৌড়ি করছি, অভিযোগ দিছি। এতে আমাদের ওপর অনেক বাধা আসে, রাস্তা ঘাটে আমাগো হুমকি ধামকি দেয়। আপনেরা আমাগো বাঁচান।

নাহিদ হাসান নামের আরেক ব্যক্তি জানান, অবৈধ বালু-মাটি উত্তোলনের ব্যবসা বন্ধের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে তারা জানালেও তা বন্ধ হয়নি। শুধু ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলে ওই সময় দু’-একদিন বালু উত্তোলন বন্ধ রাখা হয় এবং সুযোগ বুঝে তা পুনরায় চালু করা হয়।

রমজান আলী বলেন, গতবছর বালু উত্তোলন বন্ধ করতে যাইয়া মারামারি হইছিলো। আমার দুই লক্ষ টাকা জরিমানা হইছে। আমারে ধইরা নিয়া যাইয়া ৭ দিনের জেল দিছিলো। কার কাছে বিচার চামু, টাকার সামনে দুনিয়া অন্ধকার!

এদিকে তথ্য সংগ্রহ করে ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আসার পথে সন্ত্রাসী কায়দায় এক যুবক সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল থামিয়ে নানা প্রশ্ন করেন। তিনি নিজেকে ওই বালু উত্তোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত জানিয়ে নিউজ না করার জন্যও বলেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ নুরুল আলম বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একাজের সাথে যত ক্ষমতাবানরাই জড়িত থাকুক তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা।

বিআরইউ

Link copied!