Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫,

দোহার-নবাবগঞ্জে ইছামতির মৃত্যু—পরিবেশগত অবহেলার প্রতিচ্ছবি

সাদের হোসেন বুলু, নবাবগঞ্জ (ঢাকা)

সাদের হোসেন বুলু, নবাবগঞ্জ (ঢাকা)

মে ১৬, ২০২৫, ০৫:১৬ পিএম


দোহার-নবাবগঞ্জে ইছামতির মৃত্যু—পরিবেশগত অবহেলার প্রতিচ্ছবি

রাজধানীর পাশেই দোহার ও নবাবগঞ্জের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী ইছামতি নদী এখন প্রায় মৃতপ্রায়। দখল, দূষণ ও প্রভাবশালী মহলের লাগামহীন অত্যাচারে নদীটি আজ মৃত খালে পরিণত হয়েছে। 

দেশের সর্বোচ্চ আদালত নদীকে "জীবন্ত সত্তা" হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও বাস্তবে নদী দখল ও দূষণের মতো অপরাধ থেমে নেই। অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, অবৈধ দখল ও বর্জ্য ফেলে এক শ্রেণির মানুষ নদীটিকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে—যা দেশের পরিবেশগত অবহেলারই বাস্তব প্রতিচ্ছবি।

দায় কার?

ইছামতি নদী বাঁচাও আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠকেরা অভিযোগ করেছেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উদাসীনতা ও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই ইছামতির এই করুণ দশা। এ বিষয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আবুল ইসলাম বলেন, "কোনো নদী কেবল সরকারি প্রচেষ্টায় টিকে থাকতে পারে না; স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া তা সম্ভব নয়। আমরা ইছামতি নদী রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।"

দখল-দূষণের ভয়াবহ চিত্র

নবাবগঞ্জের কৈলাইল, শিকারীপাড়া, বারুয়াখালী, আগলা, বাহ্রা, কলাকোপা ও বান্দুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে নদী দখল ও দূষণের চিত্র স্পষ্ট। স্থানীয়রা জানান, এক সময় এই নদী ছিল কৃষি, মাছ চাষ এবং নৌযান চলাচলের মূল মাধ্যম। বর্তমানে নদীর পানি কালো ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়েছে, মাছশূন্য হয়ে গেছে নদীটি। নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে বহু আগেই।

স্থানীয় কৃষক আবদুল মান্নান (কৈলাইল) ও হায়াত আলী (বান্দুরা) বলেন, “আগে নদীর পানি দিয়ে জমিতে চাষ করতাম, রান্না করতাম। এখন সে পানি ব্যবহার করা যায় না।”

নদীটির এই অবস্থার জন্য দায়ী করা হচ্ছে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন, বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, নদীর পাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ক্লিনিক, হাটবাজারসহ নানা স্থাপনা এবং ঢাকার শিল্পকারখানা থেকে কালিগঙ্গা নদী হয়ে আসা বিষাক্ত বর্জ্য। এতে পানি হয়ে উঠেছে বিষাক্ত ও ব্যবহারের অনুপযোগী।

আইন কেবল কাগজে-কলমে

স্থানীয় ইউপি সদস্য রিমা আক্তার বলেন, “ইছামতির মৃত্যু মানে শুধু একটি নদীর বিলুপ্তি নয়, বরং এটি দেশের পরিবেশগত অব্যবস্থাপনার প্রতীক। নদী রক্ষা কমিশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া, না হলে নবাবগঞ্জের মানচিত্র থেকেই মুছে যেতে পারে ইছামতির নাম।”

ইএইচ

Link copied!