ফয়সাল হাওলাদার, মেহেন্দিগঞ্জ থেকে
জুলাই ২৭, ২০২৫, ১২:২০ পিএম
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সামিউল করিমের (১১) কবর জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী।
শনিবার দুপুরে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের দেশখাগকাটা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বিমানবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল এ শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পরে তারা কবর জিয়ারত ও মোনাজাতে অংশ নেন। মোনাজাত পরিচালনা করেন স্থানীয় মসজিদের খতিব।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা নিহত সামিউলের বাবা-মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমবেদনা জানান।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধানের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন মীর্জা নাজমুল কবীর।
তিনি বলেন,“এটি আমাদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি। আমরা নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। নিহত সামিউলের কবর জিয়ারত ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এই প্রত্যন্ত গ্রামে এসেছি। বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।”
সামিউল করিম সামি মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার খারকি এলাকার রেজাউল করিমের ছোট ছেলে। তার একমাত্র বড় বোন স্নেহা এবারের এসএসসি পরীক্ষায় একই স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
গত মঙ্গলবার সকালে সামিউলের মরদেহ ঢাকা সিএমএইচ থেকে গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সকাল ১০টায় তার নানার নামে প্রতিষ্ঠিত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জানাজা শেষে চানপুর ইউনিয়নের দেশখাগকাটা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সন্তানের মৃত্যু চোখের সামনে দেখেছেন বাবা রেজাউল করিম।
তিনি বলেন,“সোমবার সকালে সামিউলকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে অনেকক্ষণ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দুপুরে ছুটির পর যখন সে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে আমার দিকে আসছিল, তখন পাঁচ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ঠিক তখনই জ্বলন্ত একটি বিমানের ধ্বংসাবশেষ তার পেছনে আঘাত হানে। মুহূর্তেই পেছনের অংশ ঝলসে যায়। আমি শুধু কাঁদছিলাম, সাহায্য চাইছিলাম।”
তিনি জানান, পরে এক সেনা সদস্য নিজের পোশাক খুলে দিয়ে ছেলেকে মোড়াতে সাহায্য করেন। সামিউলকে সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকরা শেষপর্যন্ত জানান, তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
রেজাউল করিম বলেন,“আমার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানাব। কিন্তু আমি চোখের সামনে ওকে হারালাম। কী যন্ত্রণায় পুড়ল আমার বাচ্চাটা... কীভাবে আমি এই দৃশ্য ভুলে ঘুমাব, কীভাবে বাঁচব... সব শেষ হয়ে গেল।”
ইএইচ