সাইফুল ইসলাম, নান্দাইল (ময়মনসিংহ)
আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
আধুনিক কৃষিযন্ত্রের দাম নাগালের বাইরে হওয়ায় পুরোনো যন্ত্রেই ভরসা রাখছেন অনেক কৃষক। স্থানীয় কৃষকেরা চাষাবাদের পর পুরোনো যন্ত্রপাতি এনে বিক্রি করেন এই হাটে। প্রয়োজন মতো এখান থেকেই কিনে নেন অন্য কৃষকরাও।
ময়মনসিংহের নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জের সীমানায় মধুপুর বাজারে গড়ে উঠেছে এমন এক ব্যতিক্রমী হাট। স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, পুরোনো হলেও কার্যকর এই যন্ত্রপাতিই এখন তাদের সাশ্রয়ী ভরসা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জের সীমানায় ঈশ্বরগঞ্জের মগটুলা ইউনিয়নের মধুপুর বাজারের পাশেই পুরোনো কৃষিযন্ত্রের হাট রয়েছে।
নান্দাইল-ত্রিশাল আঞ্চলিক সড়কের লগোয়া খোলা জায়গায় সারি সারি সাজানো ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, থ্রেসার মেশিনসহ অন্যান্য কৃষিযন্ত্র রাখা রয়েছে। কেউ প্রয়োজন অনুযায়ী কিনছেন, কেউ আবার প্রয়োজন শেষ হয়ে বিক্রি করছেন।
হাট সংশ্লিষ্টরা জানান, এই হাট নির্দিষ্ট দিনের নয়। প্রধানত চাষাবাদের মৌসুম শেষে বা জমি প্রস্তুতির সময় বাজারটি জমে ওঠে। কেউ পুরোনো যন্ত্র বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন, আবার কেউ কম দামে কিনতে আসেন। ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইল ছাড়াও ত্রিশাল, গফরগাঁও, হোসেনপুর, তাড়াইল, গৌরীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা কম মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি কিনতে এখানে আসেন।
সম্প্রতি এই হাটে পাওয়ার টিলার কেনার সময় কথা হয় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের নাউরী গ্রামের কৃষক আব্দুল মোতালিবের সঙ্গে। তিনি জানান, নতুন পাওয়ার টিলারের দাম প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, যা অনেক কৃষকের পক্ষে কেনা সম্ভব হয় না। এই হাটে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় পাওয়ার টিলার পাওয়া যায়, তাই তার মতো অনেক কৃষকের ভরসা এখন এই পুরোনো কৃষিযন্ত্রের হাট।
হাটে আসা নান্দাইল উপজেলার চর বেতাগৈর ইউনিয়নের চরশ্রীরামপুর গ্রামের মো. মোখলেছুর রহমান জানান, কম দামে কিনে কিছুদিন ব্যবহার করে আবার এখানেই বিক্রি করা হয়। এই হাট থাকায় গরিব কৃষকদের অনেক উপকার হয়েছে। গত চার-পাঁচ বছরে কিছু দোকান থেকে এখন পুরো মাঠজুড়ে কৃষিযন্ত্রের হাট গড়ে উঠেছে। এতে কর্মসংস্থানও হয়েছে। তারা এই হাটকে ‘গরিব কৃষকের হাট’ বলে থাকেন।
পুরোনো কৃষি যন্ত্রপাতি বিক্রেতা মো. হারুন মিয়া জানান, তিনি মেরামতের কাজ করেন। দরিদ্র কৃষকরা কম দামে যন্ত্রপাতি কিনতে তার কাছে খোঁজ করেন। কয়েক বছর ধরে পুরানো ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, থ্রেসার মেশিনসহ বিভিন্ন যন্ত্র ক্রয় করে সংগ্রহ করেন। ঈশ্বরগঞ্জসহ আশপাশের উপজেলার কৃষকেরা মৌসুমে কম দামে এখান থেকে কৃষিযন্ত্র কিনে নিয়ে যান। মৌসুম শেষে প্রয়োজনীয় টাকার জন্য সেগুলো আবার বিক্রি করেন। এতে তার কিছু লাভ হয় এবং কৃষকেরাও কম মূল্যে যন্ত্রপাতি পেয়ে খুশি হন। আমন মৌসুম সামনে রেখে পুরানো পাওয়ার টিলারের চাহিদাও বেড়েছে বলে তিনি জানান।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রিপা রাণী চৌহান বলেন, এ উপজেলায় পুরোনো কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়ে তিনি অবগত নন, তবে এটি স্থানীয় কৃষকদের জন্য সহায়ক। কারণ পুরোনো যন্ত্রপাতি তাদের ক্রয়ের সক্ষমতার মধ্যে থাকে। তবে এসব যন্ত্র ব্যবহারে দক্ষতা ও সচেতনতা জরুরি।
নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাঈমা সুলতানা বলেন, এটি খুবই ভালো উদ্যোগ, যার মাধ্যমে গরিব কৃষকরা সাশ্রয়ী মূল্যে কৃষিযন্ত্র কিনতে পারছেন। এছাড়া কৃষি অফিস থেকেও ভর্তুকি মূল্যে কৃষিযন্ত্র দেওয়া হচ্ছে।
ইএইচ