শেকৃবি প্রতিনিধি, মো. মমিন সরকার
জুলাই ১৫, ২০২২, ০২:৪৭ পিএম
রাজধানী ঢাকার বুকে সবুজ গ্রাম খ্যাত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি)। গবেষণা, শিক্ষা ও সম্প্রসারণ-তিন মূল মন্ত্রকে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়টি গৌরবের ২২ বছরে পদার্পন করেছে আজ (১৫ জুলাই)। উচ্চতর কৃষি শিক্ষার প্রাচীন বিদ্যাপীঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির সাথে জড়িয়ে আছে দীর্ঘ ৮৪ বছরের ঐতিহ্যের ইতিহাস।
১৯৩৮ সালের ১১ ডিসেম্বর অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক তৎকালীন ঢাকার তেজগাঁও এ বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউটের (বিএআই) নামে বাংলায় প্রথম কৃষি প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৩০০ একর জমি জুড়ে ছিল এই প্রতিষ্ঠান। ১০ জন মুসলমান আর ১০ জন হিন্দু ছাত্র ভর্তির মধ্য দিয়ে শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদীয় মর্যাদায় বিএআইর যাত্রা শুরু হয়। প্রথম ২০ জন ছাত্র কৃষি গ্র্যাজুয়েট হিসেবে ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৪৩ সালে। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত উচ্চতর কৃষি শিক্ষার ক্ষেত্রে বিএআই ছিল এ দেশে একক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
দেশ ভাগের পর ১৯৪৭ সালে এটি ‘পূর্ব পাকিস্তান কৃষি ইনস্টিটিউট’ নামধারণ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট (বিএআই)। ২০০১ সালের ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ কৃষি ইন্সটিটিউটের (বিএআই) হীরকজয়ন্তি অনুষ্ঠানে তৎকালীন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএআইকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করার ঘোষণা দেন। ১৫ জুলাই শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ এ অবস্থানে এসেছে। কৃষিবিদ গড়ার প্রত্যয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে আছেন এ প্রতিষ্ঠানের কৃষিবিদরা। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৪ টি অনুষদের ৩৫ টি বিভাগে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। এছাড়া ৫ টি আবাসিক হল, অত্যাধুনিক লাইব্রেরী, কেন্দ্রীয় গবেষণা মাঠ, মন্দির, মসজিদ, ফার্ম এবং একটি বিশাল খেলার মাঠ রয়েছে। ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন ২টি হল, টিএসসি নির্মাণ শেষ পর্যায়ে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও ছাত্ররা রিসার্চ সিস্টেম (সাউরেস) এবং ড. ওয়াজেদ মিয়া কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের মাধ্যমে গবেষণা করে নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করে যাচ্ছেন। ঢাকা শহরকে সবুজে আচ্ছাদিত করার জন্য ছাদ বাগান নিয়ে চলছে ব্যাপক গবেষণা।
উদ্ভাবনের মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী সবজি সাউ টমাটিলো-১, সাউ টমাটিলো-২; সরিষার উন্নত জাত সাউ সরিষা-১, সাউ সরিষা-২, সাউ সরিষা-৩, ভুট্টার উচ্চফলনশীল জাত সাউ হাইব্রিড ভুট্টা-১, সাউ হাইব্রিড ভুট্টা-২, ভিনদেশি ফুল 'নন্দিনী' এর পরিবেশ সহিষ্ণু নতুন জাত বঙ্গবন্ধু-১ ও বঙ্গবন্ধু-২। একই গাছে আলু ও টমেটোর জাত পমেটো, সফলভাবে অভিযোজিত ভিনদেশি সবজি ব্রাসেলস স্প্রাউট, উন্নত মানের জাত সলুক, রসুনের বিকল্প বিডি নিরা। বাংলাদেশে মূল্যবান ফসল জাফরান চাষে সাফল্য লাভ করেছে এই প্রতিষ্ঠানের গবেষক ।
এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র এ এস এম কামাল উদ্দিন দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দিয়েছেন অমৃত কলার চাষ। কাজী পেয়ারার জনক ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। শুধু তাই নয় বাংলাদেশে কৃষি শিক্ষার ভিত্তি স্থাপন করেন কাজী এম বদরুদ্দোজা।
বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকায় গবেষণায় করে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে এ প্রতিষ্ঠানের ফিসারিজ অনুষদের গবেষকরা। আবিষ্কার করেছে সুন্দরবন এলাকায় বড় জালি পটকা, কক্সবাজারের সামুদ্রিক জলসীমা থেকে গিটারফিশ, শনাক্ত করেছে সমুদ্রপৃষ্ঠের ৩-৪ মিটার গভীরতায় থাকা ‘দুইধা’, ‘দাগী দুইধা’ ও ‘দুই দাগী দুইধা’ নামের মাছ। মাছ থেকে উদ্ভাবন করেছে বিস্কুট ও চানাচুর। দেশের ব্লু ইকোনমি ও মৎস্য খাতের উন্নয়নে প্রতিনিয়ত গবেষণা করে যাচ্ছে এ অনুষদের গবেষকরা।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার কাছে আনন্দের দিন। এদিনে আমরা ত্রিমাত্রিক টানাপোড়েন থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম। আমরা যতটা সার্থকতার সাথে এই স্বাধীনতাকে কাজে লাগাতে পারব ততই আমাদের ঐতিহ্য ফিরে পাব। উন্নত গবেষণার জন্য আমরা আধুনিক যন্ত্রপাতি কিনেছি, সেন্ট্রাল ল্যাবে উন্নত গবেষণার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পরীক্ষা পেছানোর কারণে সেশনজট বাড়ছে। আমরা কমানোর চেষ্টা করছি। ছাত্রদের আন্দোলনের পরও গত পরীক্ষা আমরা পিছাই নাই। শিক্ষার্থীদের বলব, পড়াশোনা, গবেষণায় মনোযোগী হতে। রাজনৈতিক সচেতনতা খারাপ নয়, তবে সারাক্ষণ রাজনীতিকে মূখ্য করে একাডেমিক থেকে দূরে সরে যাওয়া যাবে না।