আন্তর্জাতিক ডেস্ক
জুন ৩০, ২০২৫, ১১:৫২ এএম
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে টানা ১৩ দিনের সংঘাত শেষ হলেও ‘বাকযুদ্ধের’ উত্তেজনা থামছে না। যুদ্ধে জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ ও আধিপাত্য নিয়ে পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকি চললেই। এসবের মধ্যেই গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইহুদিবাদীরা। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে একটি ধর্মীয় ফতোয়া জারি করেছেন ইরানের শীর্ষ শিয়া ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজী।
সোমবার ইরানের আধা সরকারি সংবাদ সংস্থা মেহের নিউজ এজেন্সি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
ফতোয়ায় ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে ‘আল্লাহর শত্রু’ আখ্যা দিয়ে মুসলিম বিশ্বকে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজী।
এ ছাড়া যেকোনো ব্যক্তি বা সরকার ইসলামের নেতা বা শীর্ষ ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে হুমকি দেয়, তাহলে তাকে ‘আল্লাহর শত্রু’ হিসেবে বিবেচিত হবে।
ফতোয়ায় আরও বলা হয়, মুসলিম বা ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে শত্রুর প্রতি যেকোনো সহযোগিতা বা সমর্থন হারাম বা নিষিদ্ধ। বিশ্বের সকল মুসলমানের উচিত এই শত্রুদের কথা এবং ভুলের জন্য তাদের অনুতপ্ত করা।
মাকারেম শিরাজী আরও বলেন, যদি কোনো মুসলমান তার ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের পথে ক্ষতি বা কষ্টের সম্মুখীন হয়, তাহলে সে সৃষ্টিকর্তার রাস্তায় সংগ্রামরত একজন যোদ্ধার পুরস্কার লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ যেন শত্রুদের অশুভ কর্মকাণ্ড থেকে ইসলামি সমাজকে রক্ষা করেন।
এদিকে, ইরানের আরেক ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ নুরি হামেদানি বলেন, শিয়া মারজা এবং ইসলামী উম্মাহর নেতার ওপর যেকোনো আক্রমণ ইসলামের স্তম্ভ ও সকল মুসলমানের জীবনের ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হবে। বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষ এবং ইরানের ধার্মিক জাতির কাছ থেকে এর কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কালো রেকর্ডে খুন, লুণ্ঠন এবং হত্যা ছাড়া আর কিছুই নেই। তিনি ক্রমাগত নৃশংস ইহুদিবাদী সরকারের অপরাধকে সমর্থন করে আসছেন। একইসঙ্গে তিনি ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে নিয়েও বোকামিপূর্ণ মন্তব্য করার সাহস করেছেন।
নুরি হামেদানি বলেন, সন্ত্রাসী মার্কিন সরকার এবং তার অত্যাচারী শাসকদের জানা উচিত এই হুমকিগুলো কেবল দেশের জনগণের ইচ্ছাকে ক্ষুন্ন করবে না, বরং ইসলামী উম্মাহর ঐক্য ও সৌহার্দ্যকে আরও শক্তিশালী করবে।
এর আগে, যুদ্ধবিরতির পর ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ জানান, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল ইসরাইলের, তবে সেই সুযোগ তারা পাননি। পেলে তাকে শেষ করে দিতাম।
এছাড়া সংঘাত চলাকালীন সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও খামেনিকে হত্যার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টে ট্রাম্প বলেছিলেন, আমরা ভালোভাবেই জানি আলী খামেনি কোথায় লুকিয়ে আছেন। আমরা এখনই তাকে হত্যা করছি না।
উল্লেখ্য, কোনোপ্রকার উসকানি ছাড়াই গত ১৩ জুন দিনগত রাত হঠাৎ ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযানে রাজধানী তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ও আবাসিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইহুদিবাদী সেনারা।
হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, দেশটির ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি, খাতাম আল-আনবিয়া সদরদপ্তরের কমান্ডার ও বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদ ও দশজন পরমাণু বিজ্ঞানীসহ ৬০০ এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ইসরায়েলের হামলার পর পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩ নামে’ অভিযান শুরু করে ইরান। তেহরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ভেদ করে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছে। এতে হতাহত কম হলেও ইসরায়েলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
দুই দেশের মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে গত ২১ জুন দিনগত রাতে ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। জবাবে সোমবার (২৩ জুন) রাতে কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায় তেহরান। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, ইসরায়েল ও ইরান একটি ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক’ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
তবে, ট্রাম্পের এমন দাবি নাকচ করে দেয় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। তখনও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি। পরদিন বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুর ১২ টায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ইরানি-ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জানায়, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরেই যুদ্ধবিরতি সম্মতি নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। পরে ইরানের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
ইএইচ