Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

বিয়ের জন্য নিজেকে যেভাবে প্রস্তুত করবেন

আমার সংবাদ ডেস্ক :

আমার সংবাদ ডেস্ক :

এপ্রিল ১২, ২০২৩, ০৫:০৩ পিএম


বিয়ের জন্য নিজেকে যেভাবে প্রস্তুত করবেন

মানবজীবনে বিয়ে শব্দটা ছোট হলেও এর গভীরতা অনেক। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন যে কয়টি বিষয় রয়েছে তার মাঝে বিয়ে অন্যতম। আর বিয়ে করার আগেই নিতে হবে বিয়ের প্রস্তুতি। বিয়ে করার আগে কোন কোন বিষয়গুলোতে নজর দিতে হবে, কোন কাজগুলো সেরে রাখতে হবে তার কিছু ধারনা দিতেই আমাদের এই লেখা। 

বিয়ে এমন একটি বিষয় যার উপর শুধু দুইটি মানুষ নয় বরং দুইটি পরিবারের সারা জীবনের হাসি কান্না নির্ভর করে। সুতরাং তারাহুড়া করে বা যেন-তেন ভাবে একজনের সাথে আরেকজনকে জড়িয়ে দিলেই কাজটি সঠিক হয়না বরং ভেবে চিন্তে ঠান্ডা মাথায় প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য দরকার বিয়ের প্রস্তুতি। 

বিয়ের আগের প্রস্তুতি যদি ঠিকমতো নেয়া যায় তাহলে পরবর্তী ধাপগুলো অনেকটাই সহজ হয়ে আসে। বিয়ের আগে কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন এমন কিছু বিষয় নিয়েই আমাদের এই আয়োজন। চলুন তবে শুরু করা যাক।

বিয়ের প্রস্তুতি নিবেন যেভাবে: –

বিয়ের আগে মানসিক প্রস্তুতি: বিয়ের আগে মানসিক ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। এটি জীবনের নতুন একটি অধ্যায়। আপনার এবং আপনার সঙ্গীর জীবনের অনেক কিছুই বিয়ের পর পাল্টে যাবে। ভবিষ্যৎতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। আপনার আশেপাশের সকল বিবাহিত জুটির দিকে খেয়াল রাখুন। তাদের কার্যকলাপ দেখুন, বোঝার চেষ্টা করুন। তাদের কোন পদক্ষেপগুলো সঠিক আর কোন পদক্ষেপগুলো ভুল তা বোঝার চেষ্টা করুন। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের পরিকল্পনা তৈরি করুন।

বিয়ের পূর্বে শারীরিক প্রস্তুতি: 

বিয়ের আগে ছেলে মেয়ে উভয়েরই শারিরিক প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে। সম্ভব হলে বিয়ের অন্তত ৩-৪ মাস আগে থেকেই ব্যায়াম করে শরীরের গঠন সুন্দর করতে হবে। ব্যায়ামাগারে গিয়ে ব্যায়াম করতে হবে এমন কোন কথা নেই। অনেক ব্যয়াম আছে যেগুলো বাসাতেই করা যায়। শরীর থেকে বাড়তি মেদ, ভুড়ি ঝেড়ে ফেলতে হবে। 

বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর দিকে সবার মনযোগ থাকে তাই এসময় নিজেকে আকর্ষনিয় ও মানানসই রাখতে হবে। শরীরে কোন চর্মরোগ বা অন্য যেকোন ধরনের রোগ থাকলে সেগুলোর চিকিৎসা করে ফেলতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খুবই জরুরী। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক আট ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন। বিয়ের আগের কয়েক সপ্তাহ পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমাতে হবে। সম্ভব হলে আধা ঘন্টা বা একঘন্টা বেশি ঘুমাতে হবে।

রুপচর্চা: 

ছেলে মেয়ে উভয়েরই বিয়ের আগে কিছুদিন রুপচর্চা করা উচিত। শুধু মুখে ভারী ভারী মেকআপ না লাগিয়েও সাধারনভাবে নিয়মিত রুপচর্চার মাধ্যমে নিজেকে আকর্ষনিয় করে তোলা যায়। বিয়ের কথাবার্তা চলাকালীন সময়ে এবং বিয়ের সময়েও সবার কাছে বিশেষ করে অপর পক্ষের কাছে নিজেকে আর্কষনিয়ভাবে উপস্থাপন করাটা খুবই জরুরী। বিয়ের আগের কয়েক সপ্তাহ রোদ এবং ধূলাবালিতে ঘোরাঘুরি বাদ দিতে হবে। চুল, দাত, দাড়ি-গোফসহ সকল বিষয়ে নজর দিতে হবে।

হাতে পর্যাপ্ত টাকা রাখা: 

বিয়ে মানেই অনেক খরচ। তাই বিয়ে আগে অবশ্যই হাতে বাড়তি টাকা রাখতে হবে। বিয়ের সময় বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়ে প্রচুর টাকা খরচ হয়ে যায় তাই অপ্রয়োজনীয় কোন বিষয়ে টাকা নষ্ট করবেন না। বুঝে শুনে খরচ করুন। আর কোন কোন খাতে টাকা খরচ হতে পারে সেগুলো আগেই অনুমান করে পরিকল্পনা করুন। ছেলে মেয়ে দুইজনের হাতেই এসময় পর্যাপ্ত টাকা রাখতে হবে তবে ছেলেদের বেলায় এটা একটু বেশিই জরুরী।

হবু জীবনসঙ্গীর সাথে বিয়ের আগে অবশ্যই কথা বলুন: 

আমার কাছে মনে হয় বিয়ের প্রস্তুতি গ্রহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন দিক হলো এটি। বিয়ের পাকাপোক্ত কথাবার্তা হওয়ার আগেই আপনার হবু স্বামী বা স্ত্রীর সাথে অন্তত একবার ব্যক্তিগতভাবে কথা বলুন। তার মানসিকতা বুঝতে চেষ্টা করুন। আপনি তার কাছ থেকে কিছু জানতে চাইলে সেটা জেনে নিন এবং নিজের সম্পর্কে কিছু জানাতে চাইলে সেটা জানান। সে আপনার সম্পর্কে কিছু জানতে চায় কিনা সেটাও জিজ্ঞাসা করুন। বিয়ের পরে অনেকেরই ব্যাক্তিগত অতীত নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। তাই ভবিষ্যৎতে ঝামেলা এড়াতে নিজেদের ব্যক্তিগত অতীত ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জেনে নিন এবং বোঝাপড়া করে নিন।

অতীতকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন: 

বিয়ের কথাবার্তা পাকাপোক্ত হওয়ার আগেই ভালো করে চিন্তা করে দেখুন আপনার অতীত সম্পর্কে। অতীতে যদি কারো সাথে সম্পর্ক থেকে থাকে তাহলে তাকে কি আপনি এখনও অনুভব করেন? তাকে না পাওয়ার জন্য কি আপনি হতাশ? বিয়ের আগে মাথা থেকে এসব চিন্তা বাদ দিন। যার সাথে আপনার ভবিষ্যৎতে চলতে হবে তাকে নিয়েই চিন্তা করুন, তাকে নিয়েই স্বপ্ন সাজান। 

অতীতের জন্য ভবিষ্যৎটাকে নষ্ট করবেন না। চিন্তা করে দেখুন আপনি আসলেই অতীতের মানুষটাকে ভুলে নতুন মানুষটার সাথে পথ চলতে পারবেন কিনা। যদি না পারেন তাহলে আমি বলবো যে, বিয়ে করারই দরকার নেই। কারন আপনার আরেকজনের জীবন নষ্ট করার কোন অধিকার নেই। নতুন জীবনসঙ্গীকে যদি হৃদয়ের আসনটা দিতে না পারেন তাহলে বিয়ে করার দরকার নেই।

মেনে নিতে শিখুন:

 “ডোন্ট জাজ মি!” বা “আমার জীবন, আমার সিদ্ধান্ত”- এ ধরনের চিন্তা ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসুন। সবাই যদি নিজের জীবন নিজের সিদ্ধান্ত মতো কাটাতে চায় তাহলে পৃথীবিতে কেউই টিকতে পারবেনা। এখন থেকে ভাবুন, “আমাদের জীবন, আমাদের সিদ্ধান্ত”। দুইজনের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে চেষ্টা করুন। আপনি যেভাবে চাইবেন সবকিছু সেভাবে না ও হতে পারে। 

অন্যের মতামতকে মেনে নিতে শিখুন পাশাপাশি মানিয়ে নিতেও শিখুন। বিয়ে করার আগে ছেলে মেয়ে উভয়েরই উচিত বিয়ের প্রস্তুতি গ্রহন করা। বিয়ের আগে প্রস্তুতি ও সঠিক পরিকল্পনা বিয়ের পরের জীবনকে সুন্দর ও ঝামেলাবিহীন রাখতে ভূমিকা পালন করে সুতরাং নিজের এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে পরিকল্পনা গ্রহন করুন। আপনার বিবাহিত জীবনের জন্য শুভকামনা রইলো। 

উচ্চাকাংখা বাদ দিন: 

আগে থেকেই নিজে নিজে কিছু ভেবে বসে থাকবেন না। হবু স্বামী বা স্ত্রী এবং তাদের পরিবারকে নিয়ে খুব বেশি আশা করতে যাবেন না। আপনি যেমন স্বামি বা স্ত্রী চান এবং শশুড় বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে যেমন আচরন আশা করেন বাস্তবে তেমনটা না ও হতে পারে। আপনার বহুদিনের সাজানো স্বপ্নের সাথে বাস্তবতা না মিললে তখন হয়তো স্বপ্ন ভঙ্গের জন্য আপনার মনে হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম হতে পারে যা পরবর্তিতে অশান্তির কারন হয়ে দাড়াবে । তাই আগে থেকে বেশি উচ্চাকাঙ্খা বাদ দিন, বরং আপনার ইচ্ছা-আকাংখার সাথে না মিললে কিভাবে সেই পরিস্থিতি সামলাবেন সেই বিষয়েও প্রস্তুত থাকুন। ধন্যবাদ।

এমএইচআর

Link copied!