এপ্রিল ২৫, ২০২২, ১১:৩৬ এএম
পছন্দের পোশাকের সাথে চাই মানানসই জুতা। ঈদের কেনাকাটায় জুতা অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। জুতা না হলে ঈদের আনন্দে যেন অপূর্ণতা থেকে যায়। পছন্দের জুতা কিনতে ক্রেতাদের ছুটছে এই দোকান থেকে ওই দোকানে, এই মার্কেট থেকে ওই মার্কেটে। জুতা বাজারে জমে উঠেছে বেচাকেনা।
এবার ঈদে বসেছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার জুতার বাজার। ভারত ও চায়না থেকে আসা জুতা-স্যান্ডেলে বাজার সয়লাব। যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশীয় জুতা-স্যান্ডেলের বাজারে। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমল ঘুরে উৎসবমুখর বেচাকেনা লক্ষ্য করা গেছে।
পোশাআশাকের পাশাপাশি জুতার চাহিদাও কম নয়। ঢাকা সিটির পলওয়েল মার্কেট, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা, পল্টন চায়না টাওয়ার, সিটি হার্টসহ সকল ছোট-বড় মার্কেটেই জুতা বেচাবিক্রি বেশ ভালো বলে জানান বিক্রেতারা। মার্কেটগুলোর পাশাপাশি ফুটপাত ও অনলাইনেও জুতা বেচাকেনা বেশ জমে উঠছে। এবার ঈদে নামিদামি ব্রান্ডগুলো প্রচুর নতুন কালেকশন নিয়ে এসেছে। আসন্ন বর্ষা মওসুমের কথা চিন্তা করে জুতাগুলো বর্ষায় ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। ছেলেদের জুতার মধ্যে এবার ঈদে স্লিপার, কনভার্স ও লোফার, সু-এর চাহিদাই বেশি।
নিউ মার্কেটের এপেক্স শোরুমের বিপণন প্রতিনিধি জানান, এবার ঈদে নিয়মিত বেচাকেনার পাশাপাশি কিছু স্পোর্টস সুও বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, চামড়া, রেক্সিন ও কাপড়ের জুতার মধ্যে ডিজাইন ও মজবুতির উপর ভিত্তি করে জুতার দামে কমবেশ হয়।
যাত্রাবাড়ী এলকার ব্যবসায়ী বলেন, চামড়ার স্যান্ডেলের দাম পাঁচশ থেকে তিন হাজার টাকা, বুট সু এক হাজার ৩৫০ থেকে তিন হাজার ৬৫০ টাকা, রাবার বা স্পঞ্জের স্যান্ডেল পাওয়া যাচ্ছে ১৮০ থেকে ৫০০ টাকায়। এবারের ঈদ বাজারে মেয়েদের পছন্দ ছিমছাম অল্প হিল ও স্ল্লিপার ধরনের স্যান্ডেল। মৌচাকে এপেক্সে বিশাল মূল্যছাড়ে জুতা বিক্রি করছে। ২০ থেকে ৬০ শতাংশ মূল্যছাড়ে সেখানে বেচাকেনার ধুম পড়ে আছে।
এক কর্মকর্তা বলেন, এবার ঈদের জুতায় ব্যবহার করা হয়েছে বর্ষা উপযোগী উপকরণ। তবে ডিজাইনে থাকছে আধুনিকতার ছাপ। এবারের জুতার বাজারে রয়েছে বাচ্চাদের জুতায় বাহারি ডিজাইন ও নতুনত্বের ছোঁয়া। ডোরেমন, মটু-পাতলু কার্টুন সংবলিত জুতাই বিক্রি হচ্ছে বেশি।
২৫০ থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে এগুলো। পাদুকাশিল্প মালিক সমিতির জানায়, গত দুই বছর করোনার কারণে দেশে প্রায় এক হাজার জুতার কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এ বছর ঈদকে কেন্দ্র করে আবার নতুন কিছু কারখানা গড়ে উঠেছে। নিউমার্কেটে বাচ্চার জন্য পুরান ঢাকা থেকে এসেছেন আনোয়ারা বেগম। তিনি তার বাচ্চার পছন্দের জুতা কেনে দেন।
তিনি জানান, জামা কাপড় থেকে ঈদের অনুষঙ্গ তেমনি জুতাও কোনো দিকেই কম নয়। মার্কেট ঘুরে অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায় ক্রেতাদের এবার জুতায় আগ্রহ অনেক। এদের মধ্যে অনেকেই জানান, তারা এবার পাঞ্জাবি না কিনলেও জুতা কিনবেন।
গত বছর করোনায় মার্কেট বন্ধ থাকায় জুতা কেনার সুুযোগ হয়নি। এদিকে মোবাইল ব্যাংক নগদ, বিকাশ, রকেট, এম ক্যাশের মাধ্যমে পেমেন্টে ক্যাশব্যাকের অফার থাকছে।
বিভিন্ন দোকান ঘুরে জানা যায়, বিকাশে ১০ ও রকেটে ২০ শতাংশ ক্যাশ ব্যাকসহ সর্বোচ্চ দুইশ টাকা পর্যন্ত ডিসকাউন্ট অফার চলছে। সারা বছর জুতার চাহিদা থাকলেও রোজার ঈদে তা কয়েকগুণ বাড়ে। আর এ চাহিদা মেটাতে রাজধানীর পুরান ঢাকার কারখানা ও গুলিস্তানের পাইকারি সব মার্কেটে চলছে জোর প্রস্তুতি। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জুতা কিনতে আসছেন পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, অন্য বছরের চেয়ে এবারে বাজারে এসেছে নতুন নতুন মডেলের জুতা স্যান্ডেল। ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে দাম থাকলেও বিক্রি তেমন হচ্ছে না। সারা দেশ থেকেও জুতা ব্যবসায়ীদের তেমন সাড়া মিলছে না। ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, আমাদের দেশের জুতা-স্যান্ডেলের মান অনেক ভালো। তবে ক্রেতাদের দৃষ্টি বাইরের জুতা-স্যান্ডেলের দিকে বেশি। দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বাঁচাতে সরকারের হস্তক্ষেপ চান তিনি।