Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪,

মাঠে না, বিএনপির রাজনীতি এখন বিভিন্ন দূতাবাসে: তথ্যমন্ত্রী 

মো. মাসুম বিল্লাহ

জুলাই ১৭, ২০২২, ০৬:৩৫ পিএম


মাঠে না, বিএনপির রাজনীতি এখন বিভিন্ন দূতাবাসে: তথ্যমন্ত্রী 

অন্যায়-অবিচার, দুর্নীতি-দুঃশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস স্বরণে রোববার (১৭ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন হলে আলোচনা সভার আয়োজন করে স্বপ্ন ফাউন্ডেশন। 

সভায় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির রাজনীতি এখন মাঠে না, তাদের রাজনীতি এখন রাতের বেলা বিভিন্ন দূতাবাসে যাওয়া, আর লাল-নীল রঙিন পানি খাওয়া। বিভিন্ন দূতাবাসে এরা ঘুরে বেড়ায়, পার্টি করে, ঘরের মধ্যে পার্টি করা। 

তিনি বলেন, ‘আপনাদের (বিএনপি) কাছে অনুরোধ আপনারা জনগণের জন্য রাজনীতি করেন, জনগণের কাছে যান। রাত-বিরাতে এদিক সেদিক গিয়ে কোনও লাভ হবে না। ১৪/১৮ সালে এগুলো করে কোনও লাভ হয়নি, এবারও কোনও লাভ হবে না। দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে এবারও ইনশাআল্লাহ, ধস নামানো বিজয় হবে।’

তিনি বলেন, ‘ওরা (বিএনপি) এখন আল্লাহর কাছে দোয়া করছে বাংলাদেশটা কেন শ্রীলঙ্কা হচ্ছে না। তারা দেশের কোনও মঙ্গল চায় না। বিদেশিরা আমাদের ব্যাপারে নাক গলাতে চায় না, কিন্তু বিএনপি তাদের নাকটা নিয়ে ওদের কাছে যায়, নাক কাটানোর জন্য। তাদের নাক কাটিয়ে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করার জন্য।’

বাংলাদেশের অর্থনীতি মজবুত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। অনেক দেশের অর্থনীতি এখন ঋণ খেলাপির পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। 

কানাডাভিত্তিক একটি সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গ বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন ভার্নারেবল কান্ট্রিগুলোর একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে যেখানে আর্জেন্টিনা, তুরস্ক, মরক্কো, মিশর, পাকিস্তান অনেক দেশের নাম আছে। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশের নাম নেই।’ 

তিনি বলেন, ‘আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন পৃথিবীর ৪১তম অর্থনীতি। ২০০৬ সালে বিএনপির আমলে বাংলাদেশের রিভার্জ ছিল সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার। ২০০৯ সালে রিভার্ভ ছিল ৫-৬ বিলিয়ন ডলার। সেই রিজার্ভকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে।  এখনও ৪০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ, যা দিয়ে ৬ মাস আমদানি করা সম্ভব।’

২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনার কারাবাস দিবসকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘কারাগারে বসে শেখ হাসিনা পরিকল্পনা করেছিলেন- দেশকে কীভাবে পরিচালনা করবেন। তাই আজ আমরা পৃথিবীর বুকে মধ্যম আয়ের দেশ। 

এখন আর ছেড়া কাপড় কিংবা খালি পায়ের কোনও মানুষকে দেখা যায় না। কবিতায় কুড়ে ঘর দেখা গেলেও তা বাস্তবে খুব কম দেখা যায়। এই পরিবর্তন কোনও জাদুর কারণে হয়নি।’ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী জাদুকড়ি নেতৃত্বের কারণে। 

দুর্নীতি দুঃশাসনকে সমর্থন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছিল উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতি অন্যায়-অনাচারকে দূর করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হলেও তারা সেটি না করে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে। তার কারণ তারা নিজেরাই নানান অনাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল।’ 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সেনাসমর্থিত সরকার উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ইকবাল আহমেদ টুকুর অন্যায়ে তার মেয়েকে গ্রেপ্তার করা হলে শেখ হাসিনা তার প্রতিবাদ করেছিল, বিএনপি করেনি। তবে অনেক পরে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।’ 

হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা আমার কাছে আহ্বান জানিয়েছিলেন- একসঙ্গে আন্দোলন করার। আমি বলেছিলাম, আগে আপনাদের নেত্রী গ্রেপ্তার হোক, তারপর দেখা যাবে। তাদের ম্যাডামকে গ্রেপ্তার করা হলে তারা কোনও আন্দোলন করতে পারেনি। আমাদের আন্দোলনেই খালেদা জিয়া মুক্তি লাভ করেছিলেন।’

স্বপ্ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. রিয়াজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ২০০৭ সালে ১৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেপ্তারের সময় কেউ উৎফুল্ল, কেউ নাচছিল আবার আমরা কেউ কাঁদছিলাম। তখন তিনি নাচেওনি, কাঁদেওনি। তিনি ধীরস্থিরভাবে বসে চিঠি লিখলেন। একটি কর্মীদের-দেশবাসীর উদ্দেশ্যে, আরেকটি তার অনুপস্থিতিতে দলের দায়িত্ব পালন করবে কে- সেটা নিয়ে। 

এটাই হচ্ছে তার নেতৃত্বের দুরদর্শীতা। সেদিন যদি তিনি নির্ভিকচিত্তে সিদ্ধান্ত দিতে না পারতেন তাহলে আজকে বাংলাদেশের ইতিহাস ভিন্ন হতো। গণতন্ত্র শুধু মুখে থাকতো বাস্তব চেহারা আমরা দেখতাম না। 

বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে একেবারে স্বমূলে উৎপাটন করার ১৫ই আগস্টে যে প্রচেষ্টা ছিল এবং তার ধারাবাহিকতায় ২১-এ আগস্টের যে সম্পূরক হত্যাকাণ্ড ছিল, সেই হত্যাকাণ্ড পরিপর্ণূ রূপ পেতে ২০০৪ সালে।  

যদি ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বঙ্গবন্ধুর কন্যা তার অসাধারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করতেন। এজন্যই বলছি প্রধানমন্ত্রী সবাই হতে, শেখ হাসিনা সবাই হতে পারে না। রাষ্ট্রপতি অনেকেই হতে পারে, বঙ্গবন্ধু সবাই হতে পারে না। এটাই হচ্ছে আমাদের সম্পদ। 

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, অত্যন্ত জঘন্য মানুষ ছিলেন জিয়াউর রহমান। মানুষকে অসম্মান করেছেন, মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করেছেন, জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করেছেন, জঘন্য সব কাজগুলো তিনি করেছেন। 

জিয়া-এরশাদ তারা খুবই জঘন্য ছিলেন। তারা বাঙ্গালি জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেছেন। আমি মনে করি না কোনো মৃক্তিযোদ্ধার সন্তান তাদের দল করতে পারে। জিয়াউর রহমান তো ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ছিল না, চেয়ারম্যানও ছিল না, এমপিও ছিল না, উনি কিভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। উনি তো কিছুই না। 

তিনি বলেন, রাজনৈতিক সুশিক্ষিত কর্মী এই উপমহাদেশে একমাত্র বাংলাদেশে আওয়ামী লীগেই আছে। এই বাহিনী যতো দিন থাকবে কোনো অপশক্তি বাংলাদেশে মাথাছাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। 

কুলাঙ্গার তারেক নেত্রীর সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলে, বঙ্গবন্ধুর নাম ধরে বলে, এই বেয়াদপ কোনো দিন দেশে আসতে পারবে না। যদি আসে বাংলাদেশের কর্মীরা তার জিব কর্তন করে নিবে।

স্বপ্ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন তৎকালীন স্মৃতিচারণ করে বলেন, কর্মীরা আবেগী হয়, আবেগের কারণে কর্মীরা অনেক সময় দুরেও সরে যায়। কিন্তু কর্মীরা কখনো বেইমান হয় না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয় তখন আমরা কারো নির্দেশনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম না। আদালত চত্বরে যখনই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, নেত্রীর জামিন দিবে না তাৎক্ষনিক আমরা “শেখ হাসিনার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে” “শেখ হাসিনা সরকার, বারবার দরকার” স্লোগানে মুখরিত করেছিলাম আদালত চত্বর। 

তিনি বলেন, আমরা কাউকে ছাড় দিব না, আমরা এখনো জেগে আছি। সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন সকল ভেদাভেদ ভুলে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে যাবো। 


আমারসংবাদ/টিএইচ

Link copied!