Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪,

তিলাওয়াতের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুষ্ঠাদি শুরু প্রসঙ্গে

ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক

ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক

নভেম্বর ২৭, ২০২৩, ০১:০৩ পিএম


তিলাওয়াতের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুষ্ঠাদি শুরু প্রসঙ্গে

মুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা হয়। অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানাদি স্ব স্ব ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠের মাধ্যমে শুরু করার রীতি প্রচলিত রয়েছে।

জাতীয় অনুষ্ঠানাদিতে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীগণ অংশগ্রহণ করে বলে বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠ করাই নিয়ম। মুসলিমদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির শুরুতে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত বিষয়ে শরীআর নূসুস বিশ্লেষণ প্রয়োজন।


১. মুসলিমের প্রতিটি কাজ আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে শুরু হওয়া সুন্নাহ সম্মত। আবু হুরাইরা (রা). বলেন,

عن أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :كُلُّ كَلَامٍ أَوْ أَمْرٍ ذِي بَالٍ لَا يُفْتَحُ بِذِكْرِ اللهِ فَهُوَ أَبْتَرُ - أَوْ قَالَ : أَقْطَعُ

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো কথা বা কোনো কাজ যা আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে শুরু হয় না, তা বরকতশুন্য" (আহমদ, আল-মুসনাদ, ১৪/৩২৯)।

আল্লাহর জিকিরের মাঝে সর্বোত্তম হচ্ছে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত। ফলে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত একটি গ্রহণযোগ্য কাজ। বরং তিলাওয়াতশুন্য মাজলিস সম্পর্কে নবীজি (সা.) অত্যন্ত সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا مِنْ قَوْمٍ يَقُومُونَ مِنْ مَجْلِسٍ لاَ يَذْكُرُونَ الله تَعَالَى فِيهِ، إِلاَّ قَامُوا عَنْ مِثْل جِيفَةِ حِمَارٍ، وَكَانَ لَهُمْ حَسْرَةٌ

"আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে জনগোষ্ঠীই কোন সভা থেকে, তাতে আল্লাহর যিকর না করেই উঠে যায়, আসলে তারা যেন মরা গাধা থেকে উঠে যায়। (অর্থাৎ যেন মৃত গাধার মাংস ভক্ষাণান্তে উঠে চলে যায়।) আর তাদের জন্য অনুতাপ হবে" (আবূ দাউদ, আস-সুনান, ৪৮৫৭)।

অন্য হাদিসে বরং আল্লাহর স্মরণের সাথে নবীজির (সা.) উপর সালাত ও সালাম পড়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন,

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ مَا جَلَسَ قَوْمٌ مَجْلِساً لَمْ يَذْكُرُوا اللهِ تَعَالَى فِيهِ وَلَمْ يُصَلُّوا عَلَى نَبِيِّهِمْ فِيهِ إِلاَّ كَانَ عَلَيْهِمْ تِرَةٌ ؛ فَإنْ شَاءَ عَذَّبَهُمْ وَإنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُمْ

"নবীজি (সা.) বলেছেন, যে কোন জনগোষ্ঠী কোন মজলিসে বসে তাতে আল্লাহর যিকর না করে এবং তাদের নবীজি (সা.)-এর উপর দরূদ পাঠ না করে, তাদেরই দুর্ভোগ হবে; আল্লাহ যদি ইচ্ছা করেন তো তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং যদি চান তো তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন" (তিরমিজী, আস-সুনান, ৩৩৮০)।

২. সাহাবীদের যুগ থেকে এরূপ কাজ শুরু হয়।

আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন,
عن أبي سعيد قال أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم إذا جلسوا كان حديثهم يعني الفقه إلا أن يقرأ رجل سورة أو يأمر رجلا بقراءة سورة

নবীজির সাহাবীগণ যখন পরস্পর একত্রে বসতেন (অর্থাৎ তারা ফিকহী বিষয়াদি নিয়ে কথাবার্তা বলতেন) তখন তারা কথাবার্তা শুরুই করতেন না যতক্ষণ না তাদের মাঝে কেউ কোনো সূরা তিলাওয়াত করতেন, অথবা তাদের মাঝে কাউকে কোনো সূরা পাঠ করার জন্য আদেশ করতেন" হাদীসটি মুসলিমের শর্তে সহীহ। (হাকিম, আল-মুসতাদরাক, ৩২৮)।

৩. ইলমু হাদিস ও ইলমু ফিকহ চর্চার জন্য সালাফ ও খালাফ আলিমগণের যেসব জ্ঞানের মাজালিস হতো তা শুরু হতো পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে। আবু নাদরা (রা.) বলেন, 
عن أبي نضرة قال: كان أصحاب رسول الله إذا اجتمعوا تذاكروا العلم وقرؤوا سورة

"রাসূলুল্লাহর সাহাবীগণ পরস্পর যখন একত্রিত হতেন এবং ইলমের আলোচনা-পর্যালোচনা করতেন, তখন তাঁরা কুরআনের কোনো একটি সূরা তিলাওয়াত করতেন। (খতিব আল-বাগদাদী, আল-জামি‍‍` লিআখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামি‍‍` ২/৬৪)।

খতীব আবু বকর বাগদাদী (র.) উক্ত হাদিসের আলোকে হাদিসের বৈঠক ‍‍`ইমলা‍‍` (বর্ণনা ও লিখন)-এর ক্ষেত্রে মজলিসের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করাকে শিষ্টাচার বিবেচনা করেন। 
নবীজি (সা.) থেকে মাজলিস শুরুর দিকে তিলাওয়াত সম্পর্কে কোনো কিছু প্রমাণিত না হলেও অনেকগুলো বর্ণনা থেকে মাজলিস শেষ হওয়ার সময় ভিন্ন ভিন্ন দোয়া পড়ার বিষয়টি প্রমাণিত। তম্মধ্যে একটি হাদিস উল্লেখ করার মতো।

عن رافع بن خديج - رضي الله عنه - قال: كان رَسولُ الله صلَّى اللهُ عليه وسلَّم بأَخَرةٍ إذا اجتَمَع إليه أصحابُه فأراد أن يَنهَضَ، قال: سُبحانَك اللَّهُمَّ وبحَمْدِك أشهَدُ أنْ لا إلهَ إلَّا أنت، أستَغفِرُك وأتوبُ إليك، عَمِلتُ سُوءًا وظلَمْتُ نفسي، فاغفِرْ لي؛ إنَّه لا يَغفِرُ الذُّنوبَ إلَّا أنت، قال: قُلْنا يا رَسولَ اللهِ، إنَّ هذه كَلِماتٌ أحدَثْتَهنَّ! فقال: أجَلْ، جاءني جبريلُ فقال: يا مُحَمَّدُ، هُنَّ كَفَّاراتُ المجلِسِ
 

রাফি‍‍`‍‍` ইবন খাদিজ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) নিকট যখন সাহাবীরা মিলিত হতেন এবং তিনি কোনো সভা ত্যাগ করে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তিনি এই দু’আ পড়তেন, ’’সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা অবিহামদিকা আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লা আন্‌তা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা, আলিমতু সুআন, ওয়া জালামতু নাফসি, ফাগফিরলি, ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জনূব ইল্লা আলতা (অর্থাৎ, তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে তওবা করছি; আমি হয়তো কোন ভুল (মাজলিস থেকে) জেনেছি আমি আত্মার উপর জুলুম করেছি, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আপনি ছাড়া আর কেউই ক্ষমা করে নেই।  

আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এই কথাগুলো তো নতুন! তিনি বললেন হ্যাঁ। আমার নিকট জিব্রাইল এসেছিল এবং বলল এই কথাগুলো মজলিসের ত্রুটির কাফফারা" (আন-নাসাঈ, আস-সুনান, ১০৩৬৮)।

আল্লাহ তা’আলা সুন্নাহ সম্মত আমলের তৌফিক দিন। 
 

লেখক:- সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Link copied!