ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

গুরুপাপেও মজুতদারদের লঘুদণ্ড

নুর মোহাম্মদ মিঠু

নুর মোহাম্মদ মিঠু

মে ১৪, ২০২২, ০১:৪৪ এএম

গুরুপাপেও মজুতদারদের লঘুদণ্ড

দেশে হালের আলোচিত ইস্যু হচ্ছে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকট। গত কদিন ধরেই অসাধু মজুতদারদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রায় প্রতিদিনই হাজার হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে। 

ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তেল জব্দের এ প্রক্রিয়া চলমান। সংকটের শুরু থেকেই বাজারে খোলা তেল পাওয়া গেলেও গতকালও খবর পাওয়া গেছে, দেশের কোথাও কোথাও বাড়তি দরেও মিলছে না খোলা তেল। 

খোলা তেল নিয়েও মজুতদারদের কারসাজি চলছে। মজুতদারদের এহেন ঘৃণিত কর্মকাণ্ড আইনের ভাষায় গুরুপাপ হলেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া লঘুদণ্ডের কারণেই নিরসন হচ্ছে না সংকট ও মজুতদারদের বেপরোয়াপনা।

এ যাবৎকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রতিটি অভিযান শেষে জানা গেছে, মৃত্যুদণ্ডের মতো অপরাধ করা মজুতদারদের যৎসামান্য জরিমানা করেই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এতে পার পেয়ে যাচ্ছে অসৎ মজুতদাররা।

অথচ বিদ্যমান আইনে দুই বছরের সাজা ও জরিমানার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও ভ্রাম্যমাণ আদালত কিংবা পৃথকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানেও শুধুমাত্র যৎসামান্য জরিমানায় লাগাম টানা যাচ্ছে না মজুতদারদের। 

জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট এমন পরিস্থিতিতেও প্রয়োগ করা হচ্ছে না বিশেষ ক্ষমতা আইনের। আইনজ্ঞদের মতে, বিশেষ এ আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে অসাধু মজুতদারদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা পর্যন্ত হতে পারে। এটা করা হলে অসাধু মজুতদারদের মনে ভীতির সৃষ্টি হবে এবং কমে আসবে অসাধু মনোভাব।

২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের আওতায় চলমান সংকটে মজুতদারদের কেবলই যৎসামান্য জরিমানা কিংবা ১৯৭৪ সালের বিশেষ আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলেও দেশের আটটি তেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সেবা সীমিতকরণ বা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগে গতকাল মামলা করেছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। স্বাধীন অনুসন্ধানের পর গত বুধবার প্রতিষ্ঠানটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার নিশ্চিত করার স্বার্থে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত হয়ে এ মামলা করে। 

এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে মামলার শুনানিতে অংশ নিতেও নোটিস পাঠানো হয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো : সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেড (তীর), বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড (রূপচাঁদা), মেঘনা ও ইউনাইটেড এডিবল অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড (ফ্রেশ), বসুন্ধরা অয়েল রিফাইনারি মিল (বসুন্ধরা), শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (পুষ্টি), এস আলম সুপার এডিবল অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (এস আলম), প্রাইম এডিবল অয়েল লিমিটেড (প্রাইম) ও গ্লোব এডিবল অয়েল লিমিটেড (রয়্যাল শেফ)। 

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, শুধু ভোজ্যতেল নয়, অন্য যে কোনো পণ্যের ক্ষেত্রেও যদি সিন্ডিকেট বা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ পাওয়া যায়, আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কমিশন সূত্র বলছে, প্রতিষ্ঠানটির আইনে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করার এখতিয়ার আছে। প্রাথমিক তদন্তে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যেসব অসামঞ্জস্য পাওয়া গেছে, সেগুলোর বিষয়ে আগামী ১৮ ও ১৯ মে শুনানিও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। 

এদিকে অবৈধ মজুতদারি এবং কালোবাজারির শাস্তি সম্পর্কে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪-এর  ২৫(১) ধারায় বলা হয়েছে ‘মজুতদারি বা কালোবাজারির অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে সেই ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা ১৪ বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ডে, তদুপরি জরিমানা দণ্ডেও দণ্ডিত হবে। 

তবে শর্ত থাকে যে, মজুতদারির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করে যে, আর্থিক বা অন্যবিধ লাভের উদ্দেশ্যে নয়, বরং সে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে মজুত করেছিল, তবে সে তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে ও তদুপরি জরিমানা দণ্ডে দণ্ডিত হবে।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মহিদুল কবির বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের স্বল্প সাজা দিয়ে অপরাধকে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। এত বড় ঘৃণিত অপরাধের বিরুদ্ধে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে না। 

বিষয়টি শিগগিরই হাইকোর্টকে অবহিত করা হবে বলেও জানান তিনি। বিশেষ ক্ষমতা আইনে মৃত্যুদণ্ডের সাজা হলে দোষী ব্যক্তিকে ৩৪(ক) ধারা অনুসারে ফাঁসি দিয়ে বা নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসারে গুলি করে দণ্ড কার্যকর করারও বিধান রয়েছে। 

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে নয়, অসাধু মজুতদারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করার পক্ষে মত দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা। এর মধ্যে মো. খুরশীদ আলম খান একজন। তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেটিই হোক না কেন, শুধু জরিমানা করে ছেড়ে দিলে দ্রব্যমূল্য কমবে না। স্বল্প সাজা পাওয়ায় অনেকেই অপরাধ কর্মকাণ্ডে নিরুৎসাহিত হচ্ছে না। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন বা দণ্ডবিধির প্রয়োগ করতে হবে। 

এদিকে সময় সময় সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং সেল গঠন ও নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে গত ৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী রিট দায়ের করেন। রিটকারীরা হলেন অ্যাডভোকেট মনির হোসেন, সৈয়দ মহিদুল কবীর ও মোহাম্মদ উল্লাহ। 

ওই রিটের শুনানিকালে সয়াবিন তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যারা কুক্ষিগত করেন এবং জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টিকারীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। 

রিটকারীদের অন্যতম আইনজীবী সৈয়দ মহিদুল কবীর বলেন, ঈদের আগে রিটের শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। অতি দ্রুত আমরা রিটটি শুনানির উদ্যোগ নেব। কারণ, এসব ঘটনায় ২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে দণ্ড দেয়া হলেও ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(১)-এ ধারায় বলা হয়েছে, ‘মজুতদারি অথবা কালোবাজারের কারবারের অপরাধে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ১৪ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তাকে জরিমানাও করা যাবে। 

আর গত কদিনে সয়াবিন তেল মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে কোনো পণ্য গুদামজাত করার অপরাধে কারখানা, দোকান, গুদাম সাময়িক বন্ধ করার; পণ্য যথাযথভাবে বিক্রি ও সরবরাহ না করলে সর্বোচ্চ এক বছরের শাস্তি ও জরিমানার বিধান রয়েছে। এ আইনে মজুতদার ও কালোবাজারি বিষয়ে কিছুই বলা নেই। 

১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২ ধারায় মজুতের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে : কোনো ব্যক্তি কর্তৃক যে কোনো সময়ে মজুত বা মজুত রাখার অনুমতিপ্রাপ্ত জিনিসের সর্বাধিক পরিমাণের চেয়ে বেশি কিছু মজুত করা বা সংরক্ষণ করা। একই ধারায় কালোবাজারে লেনদেনের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত সর্বোচ্চ মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে কোনো কিছু বিক্রি বা ক্রয় করা। 

এ আইন সয়াবিন তেলের অবৈধ মজুতের ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রযোজ্য বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-ডি ধারায় বলা আছে, বিশেষ ক্ষমতা আইনে যেসব কাজকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, সেসব কাজ করার চেষ্টা করা বা কাজ করার সহযোগিতা করাও অপরাধ হবে। 

উল্লেখ্য, ঈদুল ফিতরের ছুটির পর কদিন আগে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে এক লাফে ৩৮ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় গত শনিবার। কিন্তু এক লাফে এত টাকা দাম বাড়লেও আপত্তি করার সুযোগও পাননি ভোক্তারা। কারণ বাড়তি দামেও দোকানে মিলছিল না নিত্যপ্রয়োজনীয় এ তেল।

এদিকে সয়াবিন তেলের মজুতের এসব ঘটনার মধ্যে বাজারে আবার পেঁয়াজ নিয়েও সংকটের শঙ্কা করছেন অনেকে। গতকাল শুক্রবার সকালেও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিকালে প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৫০ টাকা দরে।

Link copied!