Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

কমছে সময় বাড়ছে দূরত্ব

রফিকুল ইসলাম

জুলাই ৩০, ২০২২, ০১:১৬ এএম


কমছে সময় বাড়ছে দূরত্ব

একজন সংসদ সদস্য! পুরো নির্বাচনি এলাকার ত্রাণকর্তা! সরকার বা দলের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন এককভাবে! ক্ষমতার প্রভাব দেখাতে ব্যবহার করেন সব ধরনের কৌশল!

নির্বাচনি এলাকার স্কুল, কলেজ, হাট-বাজার ও সরকারের সব প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করেন এমপি এবং তার পরিবারের সদস্যরা। নিজ বলয় ভারী করতে দখলে রাখেন দলীয় পদ-পদবি! ইউনিয়ন বা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মাঠে ছিলেন নৌকাবিরোধী।

তবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় যতই এগিয়ে আসছে, ততই দুর্বল হচ্ছে এমপিদের ক্ষমতার প্রভাব। প্রতিবাদ করতে শুরু  করেছে ভুক্তভোগীরা।

সম্প্রতি বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দ্বন্দ্ব সামনে আসায় এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

সূত্রে জানা যায়, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন রেখে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ। ধারাবাহিকভাবে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে তারা নেতৃত্বে তুলে আনছেন দলের দুর্দিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের। বাদ দিচ্ছেন বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের। ক্ষমতাসীনরা মনে করে, তৃণমূল শক্তিই আওয়ামী লীগের প্রাণ।

এ জন্য দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে তৃণমূলকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে ভিন্ন চিত্র তৃণমূলে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, কোন্দল, বলয়ের রাজনীতি ও বিভক্তি-বিভাজনে দিন দিন আরও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ।

বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের সময় যতই এগিয়ে আসছে, ততই দূরত্ব বাড়ছে স্থানীয় সাংসদ ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। এমপিদের অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, পারিবারিক ও গ্রুপিংয়ের রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা।

নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা একে অন্যের সাথে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে তর্কাতর্কি থেকে হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যাচ্ছেন। একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করছেন কেউ কেউ।

অনেকে সমাধান চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিচ্ছেন। ফলে দিন যতই যাচ্ছে পাল্লা দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে দ্বন্দ্ব। বাড়ছে উত্তাপ। তৃণমূল পর্যায়ে এমন দ্বন্দ্ব নিয়ে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

আ.লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, চলতি বছরেই লাগাম টানা হবে বিতর্কিত এমপিদের। যে সব এমপির জনপ্রিয়তা নেই, নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা নেই, দলের অভ্যন্তরে বিভেদ ও দল-উপদল সৃষ্টিকারী এবং স্থানীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ত্রাণকর্তা হয়ে উঠেছেন, তাদের চিহ্নিত করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ সঠিক যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করা হবে।

যাদের সাংগঠনিক রিপোর্ট ভালো নয়, গুরুতর অভিযোগ রয়েছে— দলের নীতিনির্ধারণী সভায় তাদের বিরুদ্ধে দলের করণীয় কী, তা ঠিক করা হবে। তবে গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা থাকার পরও কোনো এমপি প্রতিহিংসার শিকার যেন না হন।সে সব বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হবে।

তারা বলছেন, অনেক এমপি আছেন, যাদের জনপ্রিয়তা অনেক। তৃণমূল পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা আছে। শুধু বিতর্ক সৃষ্টি করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। সে সব বিষয়ও গুরুত্ব দিতে চায় আওয়ামী লীগ।

তথ্যমতে, বেশ কয়েকদিন ধরেই আলোচনায় রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী, টাঙ্গাইল-২ আসনের তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির, পটুয়াখালী-৩ আসনের এমপি এসএম শাহজাদা, কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী মুজিবুল হক, কুমিল্লা-৪ আসনের রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, নীলফামারীর জলঢাকার সাবেক এমপি গোলাম মোস্তফা।

সম্প্রতি সময়ে নিজেদের কর্মকাণ্ডের কারণে ব্যাপক সমালোচা সৃষ্টি করেছেন তারা। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা।

তবে এমপিদের সাথে তৃণমূলের দূরত্ব খুব ভালোভাবে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখনই সাংগঠনিক প্রশ্নের মুখোমুখি করা হচ্ছে না।

কারণ, আর মাত্র একদিন পর শোকের মাস আগস্ট শুরু হচ্ছে। জাতীয় শোক দিবস সামনে রেখে মাসব্যাপী কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া জাতীয় শোকের মাস আগস্টে আওয়ামী লীগ সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রাখে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ আমার সংবাদকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান টার্গেট শোক দিবস পালন করা। এ জন্য মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। শোকের মাস আগস্টের পর সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের নির্ধারিত সময়েই আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ কারণে আগস্টের থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রমে বেশি জোর দেয়া হবে। যে সব এমপি নৌকার মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন— গত কয়েক বছরে তাদের পারফরম্যান্স কী।

একই সাথে যে সব এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে বা সমালোচনা হচ্ছে— এগুলো নিয়ে দলের করণীয় নির্ধারণ করা হবে। আমরা চেষ্টা করব, দলের জাতীয় সম্মেলনের আগেই এগুলো নিয়ে সঠিক সমাধান টানতে।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ‘সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কয়েকজন এমপির বিরুদ্ধে সমালোচনা উঠে এসেছে।

ওই সকল বিষয়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের পক্ষ থেকে সঠিক তথ্য সংগ্রাহ করার চেষ্টা  হচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওঠা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দলটির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এ নেতা আরও বলেন, আওয়ামী লীগের অনেক এমপি আছে।

নির্বাচনি এলাকায় তাদের অনেক জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা আছে। কিন্তু এমন অনেক এমপির বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করা হয়। একটি মহল নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় এমন অপপ্রচার করে থাকে। তবে কেউ দলের ঊর্ধ্বে নয়। কারো বিরুদ্ধে অভিযুক্ত প্রমাণিত হলে তাদেরও সাংগঠনিক শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।’

Link copied!