Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪,

ক্রমেই বাড়ছে কারা নিরাপত্তা ও সেবা

নুর মোহাম্মদ মিঠু

জুন ৩০, ২০২২, ১২:৩৩ এএম


ক্রমেই বাড়ছে কারা নিরাপত্তা ও সেবা

আধুনিক সভ্যতায় বন্দিদের সংশোধন ও সুপ্রশিক্ষিত করে সভ্য সমাজের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিষ্ঠান কারাগার। বিভিন্ন কারণে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়া মানুষদের আইন অনুসারে শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি সংশোধন করে গড়ে তোলার দায়িত্বও কারা বিভাগের।

‘রাখিব নিরাপদ দেখাব আলোর পথ’ মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে দেশের কারাগারগুলোতে আগত বিপথগামী মানুষদের সঠিক প্রেরণা প্রদানের মাধ্যমে কৃত ভুল বুঝতে সহায়তা করা ও সংশোধন করা এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সঠিক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে সমাজে ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যেই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। 

এরই মধ্যে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি কারাবন্দি নিয়ে  দেশের ৬৮টি কারাগারেরই নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কারা কর্তৃপক্ষের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মধ্য দিয়ে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে কারাগারের নিরাপত্তা ও সেবার মান। এরই ধারাবাহিকতায় কারাবন্দিদের আবাসন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যেও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জরাজীর্ণ ও পুরাতন কারাগারগুলোকে সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের পরিকল্পনাও রয়েছে কারা কর্তৃপক্ষের। 

পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের সবকটি কারাগারেই মোবাইল বুথ স্থাপন করা হবে। পুরান ঢাকায় কেন্দ্রীয় কারাগারের জমিতে ‘পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারা স্মৃতি জাদুঘর এবং জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘরেরও সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করা হবে বলে জানা গেছে। 

এছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে ঢাকা কেরানীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি এবং বন্দি, কর্মচারী ও জনসাধারণের সুচিকিৎসার জন্য কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানা গেছে। জামালপুর, কুমিল্লা কারাগার পুনঃনির্মাণসহ নরসিংদী ও ঠাকুরগাঁও জেলায়ও কারাগার নির্মাণ করা হবে। 

এদিকে কারা সেবা উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার-কেরানীগঞ্জ ক্যাম্পাসে ইতোমধ্যে ৩০০ জন বন্দি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। যা ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারাবন্দি স্থানান্তরকালে জনপ্রতি খোরাকি ভাতা ১৬ টাকা থেকে ১০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। কারাগারের ধর্মীয় উপদেষ্টাদেরও সম্মানী ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। 

এছাড়া কারাবন্দিদের উৎপাদিত পণ্যের লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ বন্দিদের প্রদানের ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। এ ব্যবস্থায় দেশের ২৯টি কারাগারে বর্তমান উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৩ হাজার ১৫০ জন। ‘বাংলা নববর্ষ’ উপলক্ষেও বন্দিদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের জন্য বন্দিপ্রতি ৩০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইফতারি বাবদ বন্দিপ্রতি বরাদ্দও ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। কারাবন্দিদের টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বর্তমানে ১৩টি কারাগারেই ‘স্বজন লিংক’ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। 

বিগত ২০১৮-১৯ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে ৪০ হাজার ৯৫৮ কারাবন্দিকে প্যারা-লিগ্যাল সার্ভিস প্রদানের পাশাপাশি ৩২টি কারাগারে ৩৮টি ট্রেডের আওতায় বিগত চার বছরে ২২ হাজার ৪৬০ জন কারাবন্দিকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৩ হাজার ১২৭ জন বন্দিকে তাদের উৎপাদিত পণ্যের লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। 

শুধু তাই নয়, কারাগারসমূহে বিদ্যুতের ডাবল ফেইজ সংযোগ প্রদানেরও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মহিলা কারারক্ষীদের আবাসন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে দেশের ৪০টি কারাগারে নির্মাণ করা হয়েছে ৩৯৯টি ফ্ল্যাট। দেশের সব কারাগারেই ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে এলইডি ডিসপ্লে বোর্ড। যার মাধ্যমে বন্দিদের দেখা-সাক্ষাৎ, জামিনের তথ্য এবং কারা অধিদপ্তরের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার-প্রচারণা করা হচ্ছে। 

এতোসবের মধ্যেও কারা কর্তৃপক্ষকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে একাধিক চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে দেশের সবকটি কারাগারেই ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও অধিক কারাবন্দি অবস্থান করায় সীমিত জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্টের মাধ্যমে তাদের সার্বিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের বড় চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করে যাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ।

Link copied!