Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪,

নগরীতে জ্বরের দাপট

মাহমুদুল হাসান

জুলাই ১৫, ২০২২, ০৬:১৫ এএম


নগরীতে জ্বরের দাপট
ছবি-প্রতীকী

অসময়ে মৌসুমি জ্বর, করোনার নতুন ধরনের দাপট আর এডিস মশার উৎপাত। এই তিনে নগরবাসী কুপোকাত। ঘরে ঘরে এখন জ্বরের দাপট। জ্বর, সর্দি, কাশি নেই এমন ঘর নেই। ঈদকে কেন্দ্র করে নগরী ছেড়ে এই জ্বর এখন গ্রামেও ছড়িয়ে গেছে। ঢাকা থেকে জ্বর নিয়ে অনেকে গ্রামে গিয়েছে। ধানমন্ডির বাসিন্দা জিসান। ঈদ করতে এবার সিরাজগঞ্জ গেছেন। কোরবানির ঈদের আগের দিন সেখানে চার সদস্যের পরিবারের মা ও ছোট ভাইয়ের জ্বর। কাশি কমলেও জ্বর কমেনি। ভয়ে কোভিড টেস্ট করাচ্ছেন না। তবে স্থানীয় এক ক্লিনিকে ডেঙ্গু টেস্টে নেগেটিভ রেজাল্ট এসেছে। 

অন্যদিকে একটি বেসরকারি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত অবন্তি। গ্রামে বাড়ি মাদারীপুরে ঈদ উদযাপন শেষে গতকাল ঢাকায় ফিরেছেন। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে তার জ্বর। জ্বর হঠাৎ ছেড়ে যায় আবার আসে। কিন্তু কাশি কমছে না। গতকাল বিকেলে নিউ সুপার মার্কেট এলাকায় ইসলামিয়া ফার্মেসি থেকে প্রাথমিক ওষুধ নিতে এসেছেন অবন্তি। 

সেখানেই তিনি জানান, জ্বরের ধরন দেখে মনে হচ্ছে সাধারণ জ্বর নয়। কিন্তু ভয় হচ্ছে কী হয়। করোনা-ডেঙ্গু টেস্ট করাতে সাহস পাচ্ছি না। এ জন্য ফার্মেসিতে এসেছি যেন অল্পতেই ভালো হয়ে যাই।

এদিকে ফার্মেসির স্বত্ব্বাধিকারীও জানালেন, মানুষের এখন ঘরে ঘরে জ্বর। তিন বছর হলো করোনা এই বাড়ে এই কমে। আর জুলাই, আগস্ট, সেপ্টম্বর তো সবসময়ই থাকে ডেঙ্গুর প্রকোপ। তাই এখন জ্বর, ঠাণ্ডার ওষুধ বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি। 

ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বেচেন কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, অনেকে এসে শুরুতেই বলে তিন চারদিন হলো জ্বর। নরমাল ওষুধে সাড়বে না। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েন। রোগীকে বুঝালেও তারা বুঝতে চান না। অনেক সময় বাধ্য হয়ে দিতে হয়। তবে আমরা প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটি বিক্রি করি না।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, জ্বর হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এখন মৌসুমি জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এই জ্বর সাধারণ এপ্রিল-মে মাসে সংক্রমিত করলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার বিলম্বে এসেছে। এসব জ্বর দুই একদিন অপেক্ষা করলে এমনিতেই সেরে যায়। বর্ষা মৌসুম মানে ডেঙ্গুর মৌসুম। ডেঙ্গু জ্বরের সময় ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়েও জ্বর ছেড়ে দেয়ার পর আবারও জ্বর আসতে পারে। এর সাথে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চেখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে। 

এদিকে কোভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্টেরও দাপট লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে যারা নির্দিষ্ট ডোজে টিকা গ্রহণ করেছে। শরীরে জটিল কোনো রোগ নেই তারা ফের সংক্রমিত হলেও শঙ্কার কিছু নেই। এমনিতেই সেরে যাবে। তবে যারা বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগাক্রান্ত। কিংবা টিকা গ্রহণ করেনি। তাদের ঝুঁকি রয়েছে। তারা আরও বলেন, জ্বর আক্রান্ত হলে কয়েকদিন পর সুস্থ না হলে অবশ্যই কোভিড ও ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা যাবে না। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, সিজনাল ফ্লু সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে সংক্রমিত করে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার জনের শেষের দিকে এসেছে। আবার ভ্যাপসা গরম পড়ছে। এতে জ্বরের রোগী বাড়ছে। টেস্ট করালে দেখা যাচ্ছে কোভিড নেগেটিভ। এ জন্য বলব জ্বর হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সামান্য জ্বর সিজনাল জ্বর। যারা টিকা নিয়েছেন তাদের কোভিডের জ্বরও হচ্ছে সামান্য। শুধু যারা টিকা নেয়নি এবং অন্যান্য দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত তাদের পরিস্থিতি কিছুটা জটিল হচ্ছে। জটিল রোগাক্রান্ত নয় এমন কারো জ্বর হলে দু-একদিন ওয়েট করতে হবে। 

এসময় নরমাল প্যারাসিটামল খেতে হবে। এতেই সেরে যাবে। নো অ্যান্টিবায়োটিক। মুড়ি মুড়কির মতো অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। কোনো অবস্থাতেই পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, যদি চোখের পেছনে ব্যথা, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, চামড়ায় লালচে দাগ ওঠে তাহলে ধারণা করা যেতে পারে ডেঙ্গু হতে পারে। তাহলে কোভিড ডেঙ্গু উভয় টেস্ট-ই করা যেতে পারে।  

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত জুনে মোট ৭৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ মাসের গত ১৩ দিনেই ভর্তি হয়েছে ৪৩৯ জন। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গত বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৫১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৯ জন। বাকি ১২ জন ভর্তি হয়েছেন দেশের অন্যান্য জেলায়।

 গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে চিকিৎসাধীন ছিল ১৬৯ জন রোগী। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি ছিল ১২৬ জন ও বাকি ৪৩ জন অন্যান্য জেলায়। এ বছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত এক হাজার ৫২৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন একজন। সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে গত জুনে ৭৩৭ জন। এরপর জানুয়ারিতে ১২৬ জন, মে মাসে ১৬৩ জন, এপ্রিলে ২৩ জন এবং ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ২০ জন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।
 

Link copied!