Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪,

সরকার দেশের রিজার্ভ খেয়ে ফেলেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ১৩, ২০২২, ১২:৫২ এএম


সরকার দেশের রিজার্ভ খেয়ে ফেলেছে

ফরিদপুরে বিএনপির সমাবেশস্থলসহ দুই পাশের চার কিলোমিটার সড়কজুড়ে প্রায় লক্ষাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতি। শুধু সমাবেশস্থলেই প্রায় ৮০ হাজার নেতাকর্মী অবস্থান নেন। দুদিন আগে অনেকেই পৌঁছেন। মাঠে এবং মানুষের বাড়ির উঠানে মাদুর বিছিয়ে রাত কাটান। সমাবেশস্থলের দুই কি.মি আগে যানবাহন আটকে দেয় পুলিশ। করা হয় হয়রানি। চালানো হয় তল্লাশি। দুই-তিন কিলোমিটার হেঁটেই নেতাকর্মীরা আসেন। ফরিদপুরে থ্রিজি-ফোরজি সেবাও বন্ধ করে দেয় বিটিআরসি। ছিলো না কোনো নেটওয়ার্ক।

এর আগে গত ২২ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের দিন খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রায় পাঁচ ঘণ্টা মোবাইল ইন্টারনেটে ধীরগতি ছিল। গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় শহরের কোমরপুরের আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির গণসমাবেশ শুরু হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনগণের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শুধু বিএনপি নয় আজকে দেশের আলেম-ওলামাদেরও তারা হয়রানি করছে। মিথ্যা মামলায় আসামি করে তাদের জেলে পাঠাচ্ছে। তাদের জামিনও দিচ্ছে না।

ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ দেশের মানুষের মনের দাবি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে আর নির্বাচন হবে না। বিগত দুই নির্বাচনে আপনারা মানুষকে মিথ্যা কথা বলে ভুল বুঝিয়ে নির্বাচন খেলা করে ক্ষমতায় চলে গেছেন। এবার আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এবার দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না, যতক্ষণ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দেয়া হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের লড়াই অস্তিত্বের লড়াই। বেঁচে থাকার লড়াই। ভোটের, ভাতের অধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াই। এই লড়াইয়ে তরুণদের ইস্পাত কঠিন হয়ে দাঁড়াতে হবে। বর্তমান অবস্থা থেকে দেশকে উদ্ধার করতে পারে তরুণরাই।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বর্তমানে যে সরকার ক্ষমতায় আছে তারা নির্বাচিত সরকার নয়। এরা জোর করে, বন্দুক-পিস্তল দিয়ে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, গুম করে, খুন করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষমতায় টিকে রয়েছে। এই সরকার যদি আগামীতেও ক্ষমতায় থাকে তাহলে আমাদের অধিকার নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এই সরকাররকে হটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন দিতে হবে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা দেশকে এই অবৈধ ও ভোট চোর সরকারের হাত থেকে বাঁচাবো। আজকে দেশের ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। কিন্তু সরকার বলে আমরা মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। কারা মধ্য আয়ের দেশে গেছে, কাদের আয় বেড়েছে, যারা চুরি করেছে, দুর্নীতি করেছে, সরকারের সাথে রয়েছে।

তিনি বলেন, আপনারা সংবিধানের কথা বলেন, সংবিধানে যেমনটি আছে তেমনটি হবে। কী আছে সংবিধানে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো সংবিধানে ছিল, ১৯৯০ সালের পরে চার-পাঁচটি নির্বাচন হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। তখন সবাই ভোট দিতে পেরেছিল। সংবিধানকে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছে। একবার করেছিল ১৯৭৫ সালে। সবগুলো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দিয়ে, সবগুলো পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে বাকশাল চালু করেছিল।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলেছে টাকা কি আমরা চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছি? টাকা আপনারা চিবিয়ে খাননি, আপনারা গিলে খেয়ে ফেলেছেন। আপনারা রিজার্ভ গিলে খেয়ে ফেলেছেন।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বর সরকারের শেষ সময় কিন্তু জনগণ এই সরকারের এখনই পদত্যাগ চায়। ১৪ বছর দেশ চালাইছেন, অনেক উন্নয়ন করেছেন। এখন দুর্ভিক্ষের কথা বলছেন। আমাদের দুর্ভিক্ষের দরকার নেই। আগামী ৩১ ডিসেম্বর আপনাদের লাস্ট টাইম। দয়া করে ২০২২ সালের মধ্যে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন। ব্যারিস্টার খোকন বলেন, আগামী ২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষের কথা বলছেন, ১৯৭৪ সালেও দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় কচু খেয়েছে, মরা মুরগি খেয়েছে, বাস থেকে যাত্রী গুম করেছে। শেখ হাসিনা আপনি ব্যর্থ।

ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ এস এম কাইয়ুমের সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন  দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় গণসমাবেশের সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বিএনপির দুই সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাশুকুর রহমান ও মো. সেলিমুজ্জামান। কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বপন, মহিলা দলের সহ-সভাপতি ইয়াসমিন আরা হক, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মাহবুবুল হাসান ভুইয়া পিংকু, কোতোয়ালি থানা বিএনপির সভাপতি রউফ-উন-নবী, মহানগর যুবদলের সভাপতি বেনজির আহমদ তাবরীজ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।

Link copied!