Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪,

প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি নেই আট ব্যাংকের

রেদওয়ানুল হক

ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩, ১২:৩৫ এএম


প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি নেই আট ব্যাংকের

ঋণমান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে আটটি ব্যাংক। ফলে ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের আমানতে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ঋণ বিতরণে স্বচ্ছতা না থাকায় নির্ধাতির সময়ে কিস্তি পরিশোধ হয় না। এতে ঋণ মন্দ মানে পরিণত হয়। খেলাপি ঋণ অব্যাহত বৃদ্ধির ফলে এর বিপরিতে প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যাংকের ওপর চাপ তৈরি হয়। তখন তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়। তাই ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষা ও  ঝুঁকি বিবেচনায় দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থার তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের (২০২২ সাল) শেষ প্রান্তিকে আটটি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৪৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি চার ব্যাংক, বেসরকারি তিন ও বিশেষায়িত একটি ব্যাংক। গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ছিল ১৯ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। তবে কিছু কিছু ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করায় পুরো ব্যাংকিং খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯ কোটি টাকা।

তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে সরকারি বেসিক ব্যাংকের। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৫৩৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর পরই রয়েছে সরকারি অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি চার হাজার ৪২২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালী ব্যাংক। দুই হাজার ৮১৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি। এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৩৪৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

বেসরকারি তিনটি ব্যাংকের মধ্যে নানা সমস্যায় জর্জরিত ন্যাশনাল ব্যাংকের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির অঙ্ক ছয় হাজার ৬১৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৭১ কোটি ১৬ লাখ টাকা ও তৃতীয় অবস্থানে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৩৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ তিন কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে গ্রাহকের আমানত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। এতে ব্যাংকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। একই সাথে মূলধন ঘাটতিতে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়। তাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। ফলে শেয়ার হোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যাংকের ওপর। ব্যাংক খাতে সমস্যা সমাধানে একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা উচিত বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে শ্রেণিকৃত বা খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এটি মোট ঋণের অনুপাতে ছিল ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর ২০২১ সাল শেষে ১৩ লাখ এক হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা ঋণ স্থিতির বিপরীতে খেলাপি ছিল এক লাখ তিন হাজার ২৭৪ কোটি টাকা।

Link copied!