Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪,

বিপুল রাজস্ববঞ্চিত সরকার

নুর মোহাম্মদ মিঠু

ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৩, ১২:৪৭ এএম


বিপুল রাজস্ববঞ্চিত সরকার

মধ্যস্বত্ব্বভোগীদের পকেটেই ঢুকছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা-ইজিবাইকের চাঁদার টাকা। যে টাকা রাজস্বরূপে যেতে পারত সরকারের কোষাগারে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে যখন সারা দেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের পাশাপাশি অটোরিকশা-ইজিবাইকের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা প্রায় আড়াই কোটি মানুষের জীবনও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, সেখানে তাদের কাছ থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ও সব মিলিয়ে বাৎসরিক ছয় হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের একটি চক্র। অথচ সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে এসব যানবাহনে কাগুজে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে সরকার। এরপরও ট্রাফিক পুলিশের মামলা, ডাম্পিংসহ সার্বিক বাধা উপেক্ষা করেই চলাচল করছে এসব যানবাহন। এর নেপথ্যে কাজ করছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তরফ থেকেও মাঝে মধ্যেই অভিযান, মামলা, ডাম্পিং, জরিমানা হলেও অধিকাংশ সময়ই খোদ প্রশাসনই থাকছে নীরব। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়েই মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করে নিচ্ছে চক্রটি। সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অটোরিকশা-ইজিবাইকের লাইসেন্স দিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের লাগাম টানতে পারে সরকার। এতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। স্বাভাবিকভাবে জীবিকাহ নির্বাহ করার সুযোগ পাবে সারা দেশের অন্তত আড়াই কোটি মানুষ। আর শুধু ঢাকায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ।

সূত্র বলছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রায় দুই লাখ রিকশা-ইজিবাইক চলাচল করছে। আর এর সাথে জড়িত প্রায় ১০ লাখ মানুষের জীবিকা। তাদের প্রত্যক্ষ জীবিকার মাধ্যম এটি। এসবের চলাচলে কাগুজে বিধিনিষেধ থাকলেও বাস্তবে এর কার্যকারিতা নেই; বরং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার অনীহা আর উদ্যোগহীনতায় কিংবা চাঁদার টাকার বিনিময়ে চলাচলের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এতে রিকশা-ইজিবাইক চালক ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার। মধ্যস্বত্বভোগীদের এমন সুবিধা বন্ধ করে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে সীমিত আকারে হলেও এলাকাভিত্তিক রিকশা-ইজিবাইকের লাইসেন্স  দেয়ার জন্য সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দপ্তরে আবেদন করে জাতীয় রিকশা ভ্যান শ্রমিক লীগ নামে একটি সংগঠন।

জানা গেছে, এসব রিকশা-ইজিবাইক কেন্দ্র করে সারা দেশেই স্টিকার ব্যবসায়ও নেমেছে মধ্যস্বত্বভোগী চক্রটি। যারা স্টিকারের মাধ্যমেই কার্যত মাসিক ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যা বছরে দাঁড়াচ্ছে ছয় হাজার কোটি টাকা। অথচ সরকার চাইলে এসব যানবাহনের পার্টস আমদানির সময় যে রাজস্ব পায় তার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করতে পারে অনায়াশেই।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন আমার সংবাদকে বলেন, ‘দেশে ৫০ লক্ষাধিক রিকশা-ইজিবাইক রয়েছে। মন্দার অর্থনীতিতে উপার্জনের বড় হাতিয়ার এটি। সীমিত আকারেও যদি এসবের লাইসেন্স দিয়ে চলাচলের সুযোগ দেয়া হয় তাহলে আড়াই কোটি মানুষের জীবিকা নির্বাহে স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে। অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে। আমরা চাই সরকার যেন সীমিত আকারে হলেও চলাচলের সুযোগ দেয়।’ হানিফ খোকন আরও বলেন, ‘প্রতিটি গাড়ি থেকে মাসে এক হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। সে হিসাবে ৫০ লাখ গাড়ি থেকে মাসে আদায় করা হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা। যা বছরে দাঁড়াচ্ছে ছয় হাজার কোটি টাকা। সরকার চাইলেই মধ্যস্বত্বভোগীদের হটিয়ে এ খাত নিয়ন্ত্রণ করে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আদায় করতে পারে।’ 

সূত্র বলছে, এসব যানবাহন যাতে সরকারের অনুমতি না পায় সে জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট সবসময়ই সক্রিয় রয়েছে। নামসর্বস্ব শ্রমিক সংগঠনের নেতা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নেতা ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তার যোগসাজশও রয়েছে। রয়েছে পুলিশের সংশ্লিষ্টতাও। পুলিশের অসাধু কর্মকর্তারাও চাঁদার ভাগ নিচ্ছেন।

মধ্যস্বত্বভোগী ও পুলিশের অসাধু কর্মকর্তাদের চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান বলেন, ‘পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেলে এবং প্রমাণ মিললে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মহামান্য হাইকোর্ট থেকে এসব যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সড়কে চলাচলের কোনো বিধান নেই। এরপরও সড়কে উঠলে এবং আমাদের নজরে এলেই আমরা এসব বন্ধ করে দেই। চাঁদা আদায়ের সুযোগ নেই। এরপরও যদি কেউ চাঁদা আদায় করে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়, প্রমাণসাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

প্রসঙ্গত কিছু দিন পরপরই সরকারের তরফ থেকে দুর্ঘটনা রোধের কথা বলে সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। কার্যত সরকারের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব যানবাহন। যার নেপথ্যে রয়েছে মধ্যস্বত্বভোগী চক্র। সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে কেন ঢুকবে এসব চাঁদার টাকা, সরকারের রাজস্ব আদায়ে বাধা কোথায়? 

Link copied!