Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪,

রপ্তানিতে সম্মুখযোদ্ধা বিজিএমইএ

রেদওয়ানুল হক

মার্চ ১, ২০২৩, ০১:২২ এএম


রপ্তানিতে সম্মুখযোদ্ধা বিজিএমইএ

সংকটেও টিকে থাকার লড়াই

  • অর্থবছরের সাত মাসে মোট রপ্তানির ৮৪ দশমিক ৪৯ শতাংশই পোশাক খাতে
  • ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে কাজ করছে বিজিএমইএ
  • নতুন বাজার তৈরি ও দামি পণ্যের অর্ডারের ফলে রপ্তানি আয় বাড়ছে

 

গত বছর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ভয়াবহ ধস নামে। ফলে নজিরবিহীন আর্থিক সংকটে পড়ে দেশ। আমদানির চাপে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়। একই সাথে বড় ধাক্কা আসে রেমিট্যান্স প্রবাহে। এতে দেশে তীব্র ডলার সংকট দেখা দেয়। ফলস্বরূপ রেকর্ড পতন ঘটে দেশীয় মুদ্রা টাকার দামে; বিপরীতে সীমাহীন বাড়তে থাকে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যবহূত প্রধান মুদ্রা মার্কিন ডলারের দাম। এলসি জটিলতায় পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে শিল্প খাত। অন্যদিকে বাজারে দেখা দেয় আমদানি পণ্যের হাহাকার। এমন পরিস্থিতিতে কেবল রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে টিকে থাকার লড়াই অব্যাহত রয়েছে। আর এতে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে তৈরি পোশাক খাত তথা বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৫২ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল। 

এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত থেকেই এসেছিল ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। শতাংশ হিসাবে মোট রপ্তানির ৮২ শতাংশই এসেছিল পোশাক খাত থেকে।  চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জানুয়ারি শেষে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে পোশাক খাত সামগ্রিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধির চেয়ে তুলনামূলক এগিয়ে আছে। সাত মাসে এ খাতে রপ্তানি হয়েছে ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক, যা মোট রপ্তানির ৮৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রপ্তানি হয়েছিল ২৩ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক পণ্য।

ইপিবির তথ্য বলছে, গত তিন মাসে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বেশি করে রপ্তানি আয় হচ্ছে, এক্ষেত্রেও নেতৃত্ব দিচ্ছে পোশাক খাত। অথচ গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নানা সংকটের কারণে রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সব শেষ জানুয়ারিতে পণ্য রপ্তানি করে ৫১৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই আয় আগের বছরের একই মাসের ৪৮৫ কোটি ডলারের চেয়ে ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয় হয় ৫০৯ কোটি ডলার। আর ডিসেম্বরে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার আয় হয় রপ্তানি থেকে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গত কয়েক মাস ধরেই দেশে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার কথা বলে আসছিলেন প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকরা। এর সঙ্গে দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট যুক্ত হওয়ায় রপ্তানি খাতে দুরবস্থা তৈরি হওয়ায় জানুয়ারি মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক দিকে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তারা। তবে বাস্তবে তা ঘটেনি।

খারাপ পরিস্থিতিতেও রপ্তানিতে ভালো করার ব্যাখ্যা দিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের ভাগ্য ভালো যে, আমরা কিছু উচ্চমূল্যের পোশাকের বাজার ধরতে পেরেছি। বিশ্বে এখন আমাদের ইমেজ আগের চেয়ে বেড়েছে। তিনি বলেন, ভারত, কোরিয়া, জাপানের মতো অপ্রচলিত বাজারে আমাদের পণ্য রপ্তানির হার বেড়েছে। এসব কারণেই খারাপ পরিস্থিতির মধ্যেও রপ্তানি আয় শক্তিশালী হচ্ছে। গত বছর (২০২২ সাল) তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে ৪৫ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার, যেটা আগের বছর ছিল ৩৫ বিলিয়ন ডলারের মতো। ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি বেড়েছে এক বছরে। এর কারণ আমরা করোনা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য অনেক কাজ করেছি; বিভিন্ন বাজারে গিয়েছি। আমাদের বড় বাজারগুলোতে গিয়েছি। এমার্জিং মার্কেটেও গিয়েছি।’

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, রপ্তানি ধরে রাখার ক্ষেত্রে বড় কারণ হচ্ছে কাঁচামাল, তুলা, কাপড়, কেমিক্যাল সবকিছুর দাম বেড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ফ্রেইট কস্ট বা কনটেইনার কস্ট কিন্তু অনেক বেড়েছে। ফলে গার্মেন্টসে ইউনিট প্রাইস অনেক বেড়েছে। পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে রপ্তানির পরিমাণও বেড়েছে। এ ছাড়া ভ্যালু অ্যাডেড অনেক প্রোডাক্টের অর্ডার নিতে পেরেছি। বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করতে পেরেছি। ফলে বাংলাদেশ এখন দামি পণ্যের অর্ডারও পাচ্ছে। আগে বাংলাদেশে ১৫ ডলারের জ্যাকেট হতো। এখন বায়াররা আমাদের এখানে ৩০-৪০ ডলারের জ্যাকেট অর্ডার করছে। আমরা নতুন মার্কেটগুলোতে ঢুকতে পেরেছি; বেশি দামি পণ্য রপ্তানি করতে পেরেছি। আবার পণ্যের দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে রপ্তানি বেড়েছে। জানা গেছে, রপ্তানি ধরে রাখতে নতুন পণ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে বিজিএমইএ। ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

Link copied!