Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে ব্যয়

নির্দেশ মানেনি ৫৯ ব্যাংক

রেদওয়ানুল হক

এপ্রিল ৩০, ২০২৩, ১১:১০ পিএম


নির্দেশ মানেনি ৫৯ ব্যাংক
  • অন্যান্য খাতে ব্যয় ৭৫ শতাংশের বেশি, নির্ধারিত সীমা ২০ শতাংশ
  • মোট ব্যয় বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো; পরিমাণ এক হাজার ১২৯ কোটি টাকা
  • ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় ৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা
  • এক টাকাও ব্যয় করেনি চার ব্যাংক

কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মানছে না ব্যাংকগুলো। নির্ধারিত খাতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিলেও তা অনুসরণ করেছে মাত্র দুটি ব্যাংক। বাকি ৫৯ ব্যাংকের মধ্যে এক টাকাও ব্যয় করেনি চারটি ব্যাংক এবং অন্যান্য খাতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ব্যয় করেছে ৪৭টি ব্যাংক। এছাড়া শিক্ষা খাতে ৯টি, স্বাস্থ্য খাতে ১৩টি এবং পরিবেশ ও জলবায়ু খাতে পরিবর্তনজনিত প্রশমন খাতে মাত্র তিনটি ব্যাংক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, সিএসআর ব্যয়ের ৩০ শতাংশ শিক্ষা, ৩০ শতাংশ স্বাস্থ্য, ২০ শতাংশ পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন ও অভিযোজন এবং বাকি ২০ শতাংশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিসহ অন্যান্য খাতে করা যাবে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও উরি ব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো ব্যাংকই এই নীতিমালা পুরোপুরি মানেনি। এর আগে মোট ব্যয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষা, ২০ শতাংশ স্বাস্থ্য এবং ১০ শতাংশ জলবায়ু ঝুঁকি তহবিল খাতে ব্যয়ের নির্দেশনা ছিল। সেটিও মানতে পারেনি বেশিরভাগ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ৬১টি তফসিলি ব্যাংকের সিএসআর খাতে ২০২২ সালের সমন্বিত ব্যয় এক হাজার ১২৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে শিক্ষা খাতে ব্যয় ১৪২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় ১১৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ১০ দশমিক ১০ শতাংশ। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রশমন-অভিযোজন খাতে ব্যয় ২৩ কেটি ৪০ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য খাতসমূহে ব্যয় হয়েছে ৮৪৯ কোটি ২১ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের  ৭৫ দশমিক ২১ শতাংশ। অর্থাৎ অন্যান্য খাতেই অধিকাংশ ব্যয় করেছে ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে সিএসআর খাতে ২০২১ সালে ৭৫৯ কোটি ও ২০২০ সালে ৯৬৮ কোটি টাকা ব্যয় করে ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে ২০২২ সালে এ খাতে ব্যয় বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে চারটি ব্যাংক ২০২২ সালে সিএসআর খাতে কোনো ব্যয় করেনি। এ খাতে ব্যয় না করা ব্যাংকগুলো হলো— রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক পিএলসি এবং বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। আর ছয়টি ব্যাংক নিট মুনাফা অর্জন করতে না পারায় সামান্য ব্যয় করে তালিকায় নাম লিখিয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো— বেসিক, কমার্স, বেঙ্গল, আইসিবি ইসলামিক, পদ্মা ও বিদেশি হাবিব ব্যাংক। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৩৩টির শিক্ষা খাতে, ৩৫টির স্বাস্থ্য খাতে এবং ৪৭টির পরিবেশ ও জলবায়ু খাতে সিএসআর ব্যয় শূন্য। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১১টিই কোনো সিএসআর ব্যয় করেনি। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত সিএসআর ব্যয় আট কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে শিক্ষা খাতে ব্যয় দুই কোটি ৩৮ লাখ, যা মোট ব্যয়ের ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় দুই কোটি ১৪ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ২৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। পরিবেশ ও জলবায়ু খাতে ৯২ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ১১ শতাংশ। অন্যান্য খাতে দুই কোটি ৯৪ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৩৫ দশমিক ১০ শতাংশ। 

অর্থাৎ এ ক্ষেত্রেও অন্যান্য খাতে বেশি ব্যয় হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নির্দেশনা হলো প্রতিটি ব্যাংক তাদের নিজস্ব সিএসআর পলিসি করবে, যা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বোর্ড অনুমোদন করবে। যদি ব্যাংকের আফটার-ট্যাক্স নেট ইনকাম থাকে, তাহলে সিএসআর বাজেট প্রণয়ন করবে। এই বাজেটের অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারণ করে দেয়া খাতগুলোতে নির্দিষ্ট পরিমাণে খরচ করতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মতে, আফটার-ট্যাক্স নেট ইনকাম না থাকলে সিএসআর ব্যয় না করলেও চলবে উল্লেখ করে কর্মকর্তারা জানান, নিট ইনকামের কত শতাংশ সিএসআর ব্যয় করতে হবে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি কোনো নির্দেশনা নেই। কোনো কোনো ব্যাংক আফটার ট্যাক্স নেট ইনকাম থেকে সিএসআর ব্যয় করেছে, আবার কোনো ব্যাংক ইনকাম থেকে কোনো খরচই করেনি। তবে এই ব্যয় ব্যাংকগুলোর ওভারঅল চিত্র প্রকাশ করা ক্যামেলস রেটিংয়ের ম্যানেজমেন্ট এফিশিয়েন্সি অংশের রেটিংকে প্রভাবিত করে।
 

Link copied!