Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

রিজার্ভে স্বস্তির আশা বিফলে

রেদওয়ানুল হক

মে ৪, ২০২৩, ১২:৩৯ এএম


রিজার্ভে স্বস্তির আশা বিফলে
  • এপ্রিলে ধস নেমেছে রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে
  • আগামী সপ্তাহেই পরিশোধ করতে হবে আকুর ১.২ বিলিয়ন ডলার
  • সরকারি এলসি খুলতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত

বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তির বিষয়ে যে আশার কথা শুনিয়েছিলেন তা পুরোপুরি বিফলে গেছে। সদ্য সমাপ্ত এপ্রিল মাসে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান দুটি খাত প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে ধস নেমেছে। একই সঙ্গে যোগ হয়েছে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি দায় মেটানোর চাপ। যা আগামী সপ্তাহেই পরিশোধ করতে হবে। অন্যদিকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে রিজার্ভ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারিত মানদণ্ডের নিচে নেমে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হতে পারে। রিজার্ভে স্বস্তি ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে গত ৮ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মো. সারওয়ার হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিবাচক পদক্ষেপের কারণে গত ডিসেম্বর থেকে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স পজিটিভ হচ্ছে। গত জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভের স্থিতি বেড়েছে। অন্যদিকে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে আমদানির যে চাপ ছিল তা এখন আর নেই। এ ছাড়া ঈদ সামনে রেখে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এখন থেকে রিজার্ভ বাড়বে।’ বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার মার্কেট স্থিতিশীল করতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার ফল আসতে শুরু করেছে বলেও জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র। রিজার্ভ নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারাও। 

কিন্তু ঘটেছে উল্টোটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ২ মে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গেছে (তিন হাজার ৯৮ কোটি ডলার)। যেখানে আগের বছরের ৩০ এপ্রিল তা ছিল ৪৪ বিলিয়ন বা চার হাজার ৪০১ কোটি ডলার। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে রিজার্ভ কমেছে এক হাজার ৩০৩ কোটি ডলার, যা শতকরা প্রায় ৩০ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, আগামী সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। এতে রিজার্ভ আরো কমে ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে যাবে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী তা নেমে যাবে ২১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, আইএমএফের ঋণের কিস্তি ছাড় পাওয়ার শর্ত হিসেবে রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলারের ওপরে থাকতে হবে। কিন্তু রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গেলে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠকে সংস্থাটির মানদণ্ডে রিজার্ভ গণনায় জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর আইএমএফ থেকে বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী রিজার্ভ গণনা করতে হবে। যেটুকু ইতোমধ্যে ব্যবহার হয়েছে তা রিজার্ভের গণনায় আনা যাবে না। প্রসঙ্গত, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল, বিমানের ঋণ, পায়রা বন্দরসহ বেশ কিছু খাতে প্রায় আট বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়া হয়েছে। আইএমএফ বলছে এ অর্থ রিজার্ভ থেকে বাদ দিতে হবে। ফলে আকুর দায় পরিশোধের পর নিট রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে যাবে।

রিজার্ভ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের আশা বিফলে গেছে মূলত বৈদিশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান দুটি খাত রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ধসের ফলে। সাধারণত ঈদের আগে বিপুল রেমিট্যান্স দেশে পাঠান প্রবাসী বাংলাদেশিরা। কিন্তু এবছর ঈদের মাসে উল্টো কমেছে প্রবাসী আয়। গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে বৈধপথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ চলতি বছরের মার্চ ও আগের বছরের এপ্রিল এ দুই সময়ের তুলনায়ই অনেক কম। এপ্রিল মাসে ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা) এ অর্থের পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি টাকা। এ অংক আগের মাসের চেয়ে তিন কোটি ৩৯ লাখ ডলার কম। মার্চে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২ কোটি ২৫ লাখ ডলার। হিসাব অনুযায়ী আগের বছরের একই মাসের তুলনায়ও রেমিট্যান্স কমেছে তিন কোটি ২৭ লাখ ডলার। আগের বছর ঈদুল ফিতরের সময় অর্থাৎ ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১ কোটি আট লাখ ডলার। এপ্রিলে রপ্তানিতেও এসেছে বড় ধাক্কা। আগের বছরের তুলনায় সাড়ে ১৬ শতাংশ কম রপ্তানি হয়েছে এ মাসে। এই মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৯৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল বুধবার পণ্য রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে চার হাজার ৫৬৭ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের এই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল চার হাজার ৩৩৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের পণ্য। অর্থাৎ এপ্রিলে কমলেও গত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের তুলনায় এবার পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

এ দিকে ডলার সঙ্কটের কারণে বেসরকারি ব্যাংকগুলো এলসি খোলার হার কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সরকারি কেনাকাটার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর যে পরিমাণ এলসি খুলছে ওই পরিমাণ ডলার আয় হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাতছে। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারি ব্যাংকগুলো ডলার কিনেছে ১১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আর এ ডলার বিক্রি হয়েছে রিজার্ভ থেকে। উল্লেখ্য, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমদানি ব্যয় কমানোর জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আমদানি প্রবৃদ্ধি কমে নেমেছে ঋণাত্মক প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশ, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৫০ শতাংশ। এ হিসাবে এক বছরে আমদানি কমেছে ৬০ শতাংশ। কিন্তু এর পরেও রিজার্ভ কমে যাওয়ার ধারাবাহিকতা ঠেকানো যাচ্ছে না।
 

Link copied!