Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪,

আন্দোলন চান খালেদা জিয়া

আবদুর রহিম

মে ১২, ২০২৩, ১২:০৩ এএম


আন্দোলন চান খালেদা জিয়া
  • বিদেশি মনোভাব ঈদ-পূজা ও পরীক্ষা দেখিয়ে কৌশলে বিএনপিকে আন্দোলন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হতে পারে সাক্ষাতে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বেগম জিয়া

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতে মিশ্রভাবনা তৈরি হয়েছে। দলের ভেতরে একজন আরেকজনকে বিশ্বাস করছে না। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে নিয়ে সরকারের দালাল হিসেবে প্রশ্ন উঠেছে। ঘুঁটি কয়েকজন নেতার আদর্শ বিক্রির কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনে পরাজয় হয়েছে বলে দলের বড় অংশের এমনও অভিযোগ রয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সেই পুরোনো শক্তিশালী চক্র আবারও অতীত কর্ম করে যাচ্ছে। যারা একাদশে খালেদা জিয়াকে কারাগারে গিয়ে এভাবে উল্টোপাল্টা বুঝিয়েছেন। 

যেকোনোভাবে শেখ হাসিনার পরিবর্তন আবশ্যক, কিছু সময় ড. কামাল হোসেনকে মেনে নেয়া, বিএনপি ক্ষমতায় আসতে না পারলেও ৭০-৮০টি আসন পেয়ে প্রধান বিরোধী দল হবে— সে সময় এমন ষড়যন্ত্রের রোডম্যাপ দেখানো হয় বেগম জিয়াকে। যার ফলে নির্বাচনের আগে-পরে বেগম জিয়ার আন্দোলনের ছক থাকলেও কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। তার বন্দিদশাতেও কোনো আন্দোলন হয়নি। বর্তমানে বিএনপির ভেতরে সেই গুপ্তচর আবারও কাজ করে যাচ্ছে, পুরোনো পথে বিএনপিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। যতই খালেদা জিয়া কোনো নির্দেশনা দিচ্ছেন তা বিভিন্ন কৌশলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। একটি অংশ বিদেশি মনোভাব দেখিয়ে, ঈদ, পূজা ও পরীক্ষা দেখিয়ে কৌশলে আন্দোলন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

এমন পরিস্থতিতে চারটি ইস্যু নিয়ে সমপ্রতি খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করে তার মনোভাব জেনে এসেছেন শীর্ষ কয়েকজন রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী। প্রথমত, নির্বাচনকে সামনে রেখে পর্দার আড়ালে বিএনপির একটি অংশ সরকারের সাথে আসন সমঝোতার চেষ্টা করছেন। দ্বিতীয়ত, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বিএনপির ভাষ্যের সাথে খালেদা জিয়ার ভাষ্য কী? তিনি কী আসলেই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে রাজি রয়েছে কি-না। নাকি অন্যকিছু। তৃতীয়ত,  নানা অজুহাতে দলের হাইকমান্ডের একটি অংশ কোনোভাবেই আন্দোলনে যেতে চাচ্ছেন না, এর সমাধান কি? চতুর্থ, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনি কৌশল ও মনোভাব কী রয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র আমার সংবাদকে জানিয়েছেন, আসন সমঝোতার বিষয়টি খালেদা জিয়ার নজরে রয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, জোটের ভেতরে সরকারের গুপ্তচর রয়েছে। সতর্কতা অবলম্বন করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আন্দোলন ছাড়া পরিবর্তনের আর কোনো পথ নেই। যারা অতীতে আন্দোলন করে সফল হয়েছে তাদেরকেও যুক্ত করতে বলেছেন তিনি। এক ধরনের দরকষাকষি চলতে পারে, একটি সমঝোতার চেষ্টা হতে পারে। যারা এগুলো করবে তারা কেউ বিএনপির নয়। সরকারের এজেন্ট। তাদের বিষয়েও সতর্ক থাকতে বলেছেন বিএনপি প্রধান। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যতীত অন্য আর কোনো পথে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। সরকারের অধীনে বিএনপি কোনোভাবেই অংশগ্রহণ করবে না। তত্ত্বাবধায়ক আড়ালে যদি অন্য কোনো ফাঁদ সরকার তৈরি করে সেই ফাঁদে যেন কেউ না পায় দেয়। চূড়ান্ত নির্বাচনি মনোভাব হিসেবে খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকার যদি এবার জনগণের দাবি উপেক্ষা করে নির্বাচন করে তাহলে টিকতে পারবে না। তবে সরকার চাইবে বিএনপিকে ভেঙে দিতে, দলের শীর্ষ নেতাদের কিনে ফেলতে যেকোনোভাবে একটি অংশকে ভোটে নিয়ে যেতে সেগুলো থেকে এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।

গত সোমবার নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সাথে সাক্ষাৎ হয় বেগম খালেদা জিয়ার। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে মান্নার সাথে ফিরোজায় বেগম জিয়া কথা বলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মান্না আমার সংবাদকে বলেন, বেগম জিয়া কেয়ারটেকার সরকার না হলে এই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দেশবাসীকে নির্বাচন বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আন্দোলন নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। সবাইকে নিয়ে আন্দোলন জোরদার করার কথা বলেছেন। ষড়যন্ত্র করে নেতাদের বিপথগামী করার চেষ্টা করবে সরকার; এ ক্ষেত্রে সজাগ থাকতে হবে; সতর্ক থাকতে হবে; সরকারের কোনো ফাঁদে পা না দিয়ে আন্দোলন জোরদার করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আন্দোলনের বিকল্প নেই। বিএনপি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না মর্মে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার এমন মনোভাব জানার পর আগামী ২০ মে থেকে চার পর্বে দেশের সব জেলায় সমাবেশ করার পরিকল্পনা করছে দলটি। এরই মধ্যে আগামী ১৩ মে ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এ সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে। নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ ফোরাম স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে গত বুধবার রাতে সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে এক বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকও ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। চার পর্বে প্রতি শনিবার এই কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রতি পর্বে ৮ বিভাগসহ বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে ১৬টি করে সমাবেশ হবে। সে ক্ষেত্রে কোনো বিভাগে একই দিন দুই জেলায়ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

জানতে চাইলে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমার সংবাদকে বলেন, ‘এ দানবীয় সরকার থেকে দেশের মানুষ মুক্তি চায়। এ মুক্তির জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই। আপনারা জানেন ১৩ মে শনিবার বেলা ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি আদায় এবং গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশ হয়রানির প্রতিবাদে আমাদের কর্মসূচি অব্যহাত থাকবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ, গ্যাস নিত্যপণ্য ইস্যুতে আমাদের আন্দোলন চলবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘বিএনপি গণমুখী মানুষের দল। দেশ ও মানুষের বিষয়গুলোকে নিয়ে বিএনপি অতীতেও আন্দোলন করে সফল হয়েছে, এবারও হবে। আমাদের আপাতত শক্ত কর্মসূচি আসছে না। নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যে রাজপথে থাকব। ঈদের পর আমরা বড় আন্দোলনে যাবো। এখন যেহেতু ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা চলছে, বিষয়গুলো আমাদের ভাবতে হয়।’

আরএস


 

Link copied!