সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া
ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪, ০১:২১ এএম
সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া
ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪, ০১:২১ এএম
মার্চ মাসে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব আরও বাড়তে পারে। মশকনিধন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা জরুরি
—অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, কীটতত্ত্ববিদ
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আসমাত আরা। পরিবারে সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। গত বছরের অক্টোবর মাসে পরিবারের পাঁচ সদস্যের মধ্যে দুজন ভুগেছেন এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে। মশাবাহিত রোগ এখন তার পরিবারে এক আতঙ্কের নাম। তার সাথে কথা হয় আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, আমরা ঢাকায় থাকি প্রায় আট বছরের বেশি সময়। কিন্তু এখনও এত মশার উৎপাত দেখিনি। বর্ষাকালে মশা বাড়লেও শীতকালে মশা কমে আসত। সন্ধ্যা হলে দরজা জানলা বন্ধ করে কয়েল জ্বালিয়ে দিই, তবুও মশা কমছে না। এরই মাঝে তিনি গণমাধ্যমে জানতে পেরেছেন কিউলেক্স নামক এক ধরনের মশা বেড়েছে। তারপর থেকে মশা নিয়ে তার দুশ্চিন্তা আরও বাড়ছে।
এদিকে দেশে মশাবাহিত রোগ বেড়েই চলছে। গত বছর এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে রেকর্ডসংখ্যক আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে এখনও মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। আর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ। এর কারণ হিসেবে জনস্বাস্থ্যবিদরা দায়ী করছেন মশকনিধনে স্থানীয় সরকারের ব্যর্থতা আর অপরিকল্পিত মশকনিধন কার্যক্রম। এডিস মশানিধন ও ডেঙ্গু চিকিৎসা দিতে যেখানে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের, সেখানে দেশে নতুন করে দেখা দিয়েছে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব।
কীটতত্ত্ববিদের মতে, কিউলেক্স মশা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই দেখা যায়। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এসব মশা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শীতের শেষ দিকে ও গরমের শুরুর মাঝামাঝি সময়ে আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে বাড়তে থাকে এ প্রজাতির মশা। সাধারণত বিভিন্ন ডোবা-নালা, ড্রেন, ঝিল বা খালের দূষিত পানিতে কিউলেক্স মশার প্রজনন বেশি হয়। কিউলেক্স মশার কামড়ে ফাইলেরিয়া বা গোদরোগ ও জাপানি এনসেফালাইটিস হয়। যদিও এ দুটি রোগ বাংলাদেশে প্রকট নয়। তবে কিউলেক্স মশার কামড়ে জায়গায় নখের আঁচড়ে
প্রুরিগো সিমপ্লেক্স নামের অ্যালার্জিজনিত রোগ হয়। এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয় শিশুরা।
সমপ্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের করা এক গবেষণায়ও কিউলেক্স মশার বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে এসেছে। গবেষণাটি পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। গবেষণা অনুযায়ী, রাজধানীতে গত চার মাসে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে।
এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়ে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া। গবেষণায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির যাত্রাবাড়ী, উত্তর সিটির দক্ষিণখান, উত্তরার দুটি স্থান ও মিরপুর এবং ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাভার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মশা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। গবেষণা ও কিউলেক্স মশাবাহিত রোগ নিয়ে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক কথা বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশারের সাথে।
তিনি বলেন, কিউলেক্স মশা সাধারণত শীতের শেষ দিকে বেশি হয়ে থাকে। চলতি বছর বিগত বছরগুলো থেকে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেশি দেখা যাচ্ছে। যা আমাদের জন্য মশাবাহিত রোগের শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মশকনিধনে এখনই কোনো ব্যবস্থা না নেয়া হলে মার্চ মাসে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব আরও বাড়তে পারে।