Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

বাড়ছে ডায়াবেটিস চিকিৎসাব্যয়

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪, ১২:৩২ এএম


বাড়ছে ডায়াবেটিস চিকিৎসাব্যয়
  • জাতীয় ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস আজ
  • ইনসুলিনের দাম লাগামহীন বাড়ছে
  • অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর ১০ শতাংশ ডায়াবেটিসে
  • দেশে উৎপাদিত ইনসুলিন সহজলভ্য করতে আমরা কাজ করছি
    —মো. নূরুল আলম, মুখপাত্র, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর
  • ফাস্টফুড ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ডায়াবেটিস চিকিৎসা আরও সহজলভ্য করতে হবে
    —অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান, সভাপতি, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি

রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা হাসনাত আলম। তিনি ২০১২ সাল থেকে নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন করছেন। সে সময় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধসহ ডায়াবেটিস চিকিৎসার মাসিক ব্যয় হাজার টাকায় মেটানো সম্ভব ছিল। ২০১৭ সালের পর থেকে তার অন্যান্য রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যয় বাড়তে থাকে। দ্রুত বাড়তে থাকে চিকিৎসা ব্যয়ও। তখন চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হতো। কিন্তু পরবর্তীকালে এ ব্যয় আরও বাড়তে থাকে। ২০২০ সালের পর ডায়াবেটিসের সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগের চিকিৎসার ব্যয় যুক্ত হয়। এখন তিন বেলা ইনসুলিন নিতে হচ্ছে তাকে। 

একইসঙ্গে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগের চিকিৎসায় প্রতি মাসে তার অন্তত ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়। এমন বাস্তবতায় শুধুমাত্র হাসনাত আলমই একা নন। দেশে ডায়াবেটিস আক্রান্ত প্রায় এক কোটি ৩১ লাখ মানুষের মধ্যে যারা নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের সবারই। ডায়াবেটিস চিকিৎসা ব্যয় ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যেই আজ পালিত হতে যাচ্ছে জাতীয় ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য বলছে, ২০ থেকে ৮০ বছর বয়সি ১৪ দশমিক দুই শতাংশ মানুষ এই রোগে ভুগছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম। বর্তমান ধারায় চলতে থাকলে ২০৪৫ সালে দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা হবে দুই কোটি ২৩ লাখ। তখন বিশ্বে আমাদের অবস্থান হবে সপ্তম। অন্যদিকে দেশে ৭০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ বা ক্যান্সারের মতো অসংক্রামক রোগে। এর মধ্যে শুধু ১০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয় ডায়াবেটিসে। ডায়াবেটিস চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ ইনসুলিন। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব দেশেই ইনসুলিন সহজলভ্য নয়। ডায়াবেটিস চিকিৎসায় অপরিহার্য এ পণ্যটির দামই সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। 

বাজার ঘুরে দেখা যায়, অ্যাবাসাগলার ইনসুলিনের দাম আগে ছিল ১০৮৪ টাকা, এখন সেটির দাম ১২৮০। একইসঙ্গে হুমালগ কিউইকপেন ইনসুলিনের দাম ৮৭০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২৫ টাকা। ডায়াবেটিস টেস্টের স্ট্রিপের দামও বেড়েছে। অ্যাকুচেক অ্যাকটিভ স্ট্রিপের দাম ছয় মাস আগেও ছিল ১১০০ টাকা, এখন সেটির দাম ১২৬০ টাকা। অধিকাংশ রোগীকে ডায়াবেটিসের ওষুধের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, হূদরোগ ও কিডনি রোগের ওষুধও খেতে হয়; সেসব ওষুধের দামও বেড়েছে। রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণে অ্যাটোভা ১০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট প্রতিটি ১০ থেকে বেড়ে ১২ টাকা, রসুভা ১০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট ২০ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৬ টাকা।

ডায়াবেটিস রোগী ও রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসায় সরকারি উদ্যোগ থাকলেও কোনো প্রতিষ্ঠানেই প্রত্যাশিত চিকিৎসা হচ্ছে না। এমনকি কোনো কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা হলেও খরচ রোগীদেরই বহন করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় বেসরকারি হাসপাতালমুখী হচ্ছেন রোগীরা। দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে সরকার টাইপ-১ রোগীদের বিনামূল্যে ইনসুলিন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। তবে এ ঘোষণা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

ইনসুলিনসহ বিভিন্ন ওষুধের দামের বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র  মো. নূরুল আলম বলেন, ডলার সংকটের কারণে আমদানিনির্ভর ইনসুলিনের দাম কিছুটা বেড়েছে। দেশে উৎপাদিত ইনসুলিন সহজলভ্য করতে আমরা কাজ করছি।

বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগের প্রতিকার ও চিকিৎসা নিয়ে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, ফাস্টফুড ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। ফাস্টফুডের লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেয়া উচিত নয়। উন্নত দেশে স্কুল-কলেজের আশেপাশে বা বিজ্ঞাপনে ফাস্টফুডের বিজ্ঞাপন দেয়া নিষেধ। সেখানে বাংলাদেশে স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে সব জায়গায় ফাস্টফুড থাকে। এ ছাড়া প্রত্যেকটি খাবারের গায়ে উপাদান সম্পর্কে লেখা থাকতে হবে। এতে মানুষ সচেতন থাকবে তার জন্য কোনটি ক্ষতিকর। 

তিনি বলেন, গ্রামের চেয়ে শহরে ডায়াবেটিস রোগী বেশি। কিন্তু প্রি-ডায়াবেটিস গ্রামে বেশি। তাদের যদি শহরে আনা হয় আর আরামে থাকে, তাহলেই তাদের ডায়াবেটিস হবে। ৪০ বছর বয়স থেকে ডায়াবেটিস চেকআপ করা উচিত। আর যাদের ঝুঁকি বেশি, তাদের ৩০ বছর থেকে চেকআপ করা প্রয়োজন। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ডায়াবেটিস চিকিৎসা আরও সহজলভ্য করতে হবে।
 

Link copied!