Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪,

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট

শিশু চিকিৎসায় আস্থার ঠিকানা

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

মার্চ ৩, ২০২৪, ০১:৪৯ পিএম


শিশু চিকিৎসায় আস্থার ঠিকানা

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শ্যামলী এলাকা। চারদিকে দেশের প্রায় সব বিশেষায়িত হাসপাতাল। একটি হাসপাতালের গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল কয়েকটি ফুলের বাগান। প্রকৃতির বসন্তের বাহারে বিভিন্ন ফুলে সেজেছে বাগানগুলো। হাতের ডান পাশে আধুনিক ফার্মেসি। চারদিকে পরিষ্কার পরিছন্ন পরিবেশ। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট বা ঢাকা শিশু হাসপাতালে প্রবেশ করে এমন দৃশ্যই দেখা যায়। দেশের সবচেয়ে বড় শিশু হাসপাতালটিতে প্রতিদিন সারা দেশ থেকে শিশুদের চিকিৎসা নিতে আসছেন শত শত মানুষ। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিন নামমাত্র মূল্যে এক হাজার দুই শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বহির্বিভাগে রোগীদের ভোগান্তি কমাতে টিকিট কাউন্টারের সামনে আধুনিক বিশ্রামাগার থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের রুমগুলোকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। হাসপাতালটিতে বর্তমানে ৬৮১টি বেড রয়েছে। সাধারণ বেড থেকে শুরু করে  প্রি-আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র), এনআইসিইউ (নবজাতক নিবিড় যত্ন ইউনিট), সিসিএনবি, কার্ডিয়াক আইসিইউ ও এইচডিও (হাই ডিপেন্ডেনসি ইউনিট) গুলোতে শিশুরা পাচ্ছে আধুনিক ও বিশ্ব মানের সেবা। হাসপাতালটিতে হচ্ছে জটিল সব অস্ত্রোপাচার। শিশুদের হার্টের ছিদ্রের মতো রোগের জটিল অপারেশন করা হচ্ছে। এমন রোগের প্রায় ১৫০টি অপারেশন করা হয়েছে বিনামূল্যে। হাসপাতালটির মোট বেড সংখ্যার ৩৯ শতাংশ নন-পেয়িং বেড। এসব বেডে রোগীর ফ্রি চিকিৎসা অর্থাৎ বিছানা ভাড়া, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধপত্র, খাবার-পথ্য সবই বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। ডেঙ্গু, করোনা ও নিউমোনিয়ার মতো রোগগুলোতে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় চালু রয়েছে বিশেষ ইউনিট।

 অপরদিকে এই হাসপাতালে শিশু চিকিৎসার উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং সরকারের শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রায় সব ধরনের প্রশিক্ষণ এই হাসপাতালে হয়ে থাকে। বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্সসমূহ এফসিপিএস (জেনারেল পেডিয়েট্রিক), এফসিপিএস নিউনেটোলজি, পেডিয়েট্রিক নেফ্রোলজি, পেডিয়েট্রিক ইউরোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, পেডিয়েট্রিক হেমাটোলজি-অনকোলজি, পেডিয়েট্রিক পালমোনোলজি এবং এমডি রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম, এম এস পেডিয়েট্রিক সার্জারি, ডিসিএইচ, বিএসসি-ইন হেলথ টেকনোলজি, ডিপ্লোমা-ইন পেডিয়েট্রিক নার্সিংয়ের মাধ্যমে দেশে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞ, পেডিয়েট্রিক নার্স ও সহযোগী জনবল তৈরির মাধ্যমে শিশু স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট।

প্রতিষ্ঠানটির অগ্রগতি ও আগামী দিনের পরিকল্পনা নিয়ে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক কথা বলেন হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। তিনি বলেন, সারা দেশের মানুষের শিশু চিকিৎসার জন্য আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। মানুষ যখন কোথাও ভরসা পায় না তখন ছুটে আসে আমাদের কাছে। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রমের সুষ্ঠু পরিচালনা, দক্ষ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার মানোন্নয়ন, আর্থিক বিষয়াদি ও উন্নত সেবা নিশ্চিতে সব বিভাগকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে এসেছি। এতে শতভাগ সুচিকিৎসা বাস্তবায়ন হয়েছে। 

হাসপাতালটিতে অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সংযোজন উল্লেখ করে তিনি বলেন,  অ্যাডভান্সড শিশু সার্জারি অ্যান্ড স্টেম সেল থেরাপি ইউনিটের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম শিশু সার্জিক্যাল আইসিইউ এবং শিশু সার্জিক্যাল এইচডিইউ স্থাপনসহ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ মডিউলার অপারেশন থিয়েটার ও অত্যাধুনিক সার্জিক্যাল ও এনেস্থেসিয়ার যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে অপারেশনের পর শিশুদের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা নিবিড়ভাবে তদারকি ও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা অত্যাধুনিক করা হয়েছে। শিশুদের জন্য এটি একটি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান।

আমাদের কাজ করার অনেক বিভাগ রয়েছে। অর্জনের পাশাপাশি কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সরকারের বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। রোগীর চাহিদা অনুসারে আমাদের বেড সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। একটি ৯ তলা ভবনের কাজ চলমান তিনতলা পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ভবনটি সম্পন্ন হলে একটি অত্যাধুনিক লাইব্রেরি, অডিটোরিয়ামসহ হাসপাতালটির চিকিৎসা ও গবেষণায় নতুন দিগন্ত স্থাপিত হবে। এতে করে আরও আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে শিশু মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে যা এসডিজি বাস্তবায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
 

Link copied!