Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪,

ব্যর্থতা ঢেকে চাঙ্গা হওয়ার চেষ্টা

জনস্বার্থ ইস্যুতে সরব বিএনপি

আবদুর রহিম

মার্চ ৭, ২০২৪, ০৫:০৩ পিএম


জনস্বার্থ ইস্যুতে সরব বিএনপি
  • রমজান-পূর্ব সিন্ডিকেট পরিকল্পিত অঘটন ঘটাচ্ছে
  • ভরা মৌসুমে ১৫-২০ টাকার পেঁয়াজ ১০০ টাকা
  • ১৪ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৩০ শতাংশ
  • গ্যাস সংকটে রমজানে ভয়াবহ দুর্ভোগের আভাস
  • জনস্বার্থ ইস্যুতে ৯ মার্চ দেশব্যাপী গণসংযোগ

সরকার পতনের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে এখন জনস্বার্থ ইস্যু নিয়ে চাঙ্গা হচ্ছে বিএনপি। দীর্ঘ সময় আত্মগোপনে থাকা শীর্ষ নেতারাও প্রকাশ্যে আসছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে কারাগার থেকে মুক্ত নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে, আন্দোলনে নিহত-আহত এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে ছুটে যাচ্ছেন হাইকমান্ডের নেতারা। হতাশ হওয়া তৃণমূল নেতাদের মনোবল বাড়াতে নতুন কর্মসূচিও  নিচ্ছে দলটি। প্রাথমিকভাবে রমজানের আগে নিত্যপণ্যসহ বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানীসহ সারা দেশে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করবে দলটি। একই সঙ্গে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতেও রদবদল নিয়ে আসা হবে। 

ব্যর্থদের সরিয়ে  আন্দোলনের জন্য উপযুক্ত নেতাদেরও সামনে নিয়ে আসা হবে। একই সঙ্গে সরকারের দুর্বলতা নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও পুরোনো রূপ ফিরিয়ে আনা হবে। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, সরকারের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করতে একটি পর্যবেক্ষণ টিম গঠন করা হয়েছে। যারা অর্থনীতিসহ জাতীয় বিপর্যস্ত ইস্যুগুলো সূক্ষ্ম আকারে দৃষ্টি রাখবেন। 
ইতোমধ্যে গতকাল একটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি জানান, গত ১৪ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৩০ শতাংশ, দাম বাড়ানো হয়েছে ১৩ বার। 

পিডিবির তথ্য মতে, গত ১৪ বছরে ১৩ দফায় খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে প্রায় ১৩০ শতাংশ। ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুতের দাম ছিল ইউনিট প্রতি ৩.৭৩ টাকা। বর্তমানে দাম বেড়ে হয়েছে ৮.৯৫ টাকা। ইউনিট প্রতি এই দাম ২০০ ইউনিটের নিচে হলে, ২০০ থেকে ৩০০ ইউনিট হলে দাম হবে ইউনিট প্রতি ১২.০৩ টাকা। আর ৬০০ ইউনিটের উপরে কেউ যদি ব্যবহার করে তবে সেটির দাম হবে ইউনিট প্রতি ১৪.৬১ টাকা।  দলটির পর্যবেক্ষকরা আরও বলছেন, ক্যাপাসিটি চার্জের নামে গত ১৪ বছরে লুটপাট এক লাখ চার হাজার ৯২৬ কোটি টাকা। 

২০২২-২৩ সালে বিদ্যুৎ খাতে সরকার ৪৩ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ করেছিল, যার বড় একটি অংশ ব্যয় হয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে। পিডিবির তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ সালে ক্যাপাসিটি চার্জের জন্য প্রায় ১৭ হাজার ১৫৫.৮৬ কোটি টাকা ছাড়া করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে গত বছর প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, গত ১৪ বছরে ৮২টি বেসরকারি এবং ৩২টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ মোট এক লাখ চার হাজার ৯২৬ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। 

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিশেষ করে ক্যাপাসিটি চার্জ সংক্রান্ত অব্যবস্থাপনা, লুটপাট ও বিদ্যুৎ খাতে পুকুরচুরির কারণে সরকার বিদ্যুতে বিপুল ভর্তুকি দিতে বাধ্য হচ্ছে।  সরকার কমিশন ও লুটপাট করার জন্য তুলনামূলক কম টাকায় নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে কয়লা, তেল, গ্যাস ইত্যাদি পরিবেশ দূষণকারী ফসিল ফুয়েল ব্যবহার করে দেশের পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে। কয়লা, গ্যাস, তেল ইত্যাদি আমদানির নামে দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করছে। গ্যাস সংকটে দেশের শিল্প কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়িতে বাড়িতে চুলা জ্বলছে না। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে রমজান মাসে ভয়াবহ দুর্ভোগের মধ্যে পড়বে সাধারণ মানুষ। 

বিএনপি বলছে, সবজীর ভরা মৌসুমেও পেঁয়াজসহ সব জিনিসের দাম এখন আকাশচুম্বী। বাংলাদেশের ইতিহাসে ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের চড়া মূল্য নজিরবিহীন ঘটনা। এই সময় পেঁয়াজের মূল্য থাকার কথা ১৫-২০ টাকা, কিন্তু এখনো ১০০ টাকার নিচে কোনো পেঁয়াজ পাওয়া যায় না। রোজার আগে ডিম, মাছ মাংসসহ সব নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির মূল কারণ হলো সরকারদলীয় সিন্ডিকেটের লুটপাট। ডামি সরকারের মন্ত্রীরা গরিব সাধারণ মানুষের সাথে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য আচরণ করছেন। 

রহুল কবির রিজভী বলেন, রোজার প্রাক্কালে সরকারের সিন্ডিকেটের সদস্য আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পরিকল্পিতভাবে নানা অঘটন ঘটিয়ে এরই মধ্যে বাড়িয়ে দিয়েছে চিনির দাম। শুল্ক কমানোর পরদিন থেকেই দাম তো কমেইনি; বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। খেজুরের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিক গতিতে, এত দাম বৃদ্ধি হয়েছে যে, মানুষ আর খেজুর কিনতে পারছে না। প্রতি কেজিতে খেজুরের দাম ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। শিল্পমন্ত্রী বলছেন, ‘খেজুরের বদলে বরই দিয়ে ইফতার করুন, আঙ্গুর খেজুর লাগবে কেন?’। এ ধরনের বক্তব্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানের প্রতি এক ধরনের রসিকতা। খেজুর দিয়ে ইফতারির যেমন সায়েন্টিফিক ব্যাখাও আছে, তেমনি একইভাবে মহৎ অনুভূতিও রয়েছে। কারণ আমাদের প্রিয় নবী সা, খেজুর দিয়ে ইফতারি করতেন।

জনস্বার্থ ইস্যুতে নতুন কর্মসূচি : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে কিছু দিন মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার পর দুই সপ্তাহের বিরতি দিয়ে নতুন কর্মসূচিতে ফিরেছে বিএনপি। গতকাল নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ৯ মার্চ ঢাকা মহানগরীসহ দেশব্যাপী বিএনপির উদ্যোগে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করা হবে।’ 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সহপ্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, মীর আলী নেওয়াজ প্রমুখ। এর আগে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বেশ সক্রিয় দেখা যায় বিএনপিকে। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর একের পর এক হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করে তারা। তাদের ডাকা হরতালের মধ্যে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এরপর এক দফা আদায়ে সরকারের পতন ও নির্বাচন বাতিল দাবিতে নতুন কর্মসূচি দেয়া শুরু করে দলটি। 

সর্বশেষ ১৩ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন ধাপে ছয় দিনের কর্মসূচি পালন করে দলটি। এর মধ্যে ছিল ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ দেশের সব মহানগরে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ; ১৬ ফেব্রুয়ারি বাদ জুমা দেশের সব মসজিদে দোয়া মাহফিল; ১৭ ফেব্রুয়ারি সব জেলা শহরে এবং ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি সব উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ। গত মাসের কর্মসূচির পর মাঠের রাজনীতিতে দুই সপ্তাহের বেশি নিষ্ক্রিয় ছিল বিএনপি। নতুন কর্মসূচি দেয়ার ব্যাপারে সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয় বলে বিএনপি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
 

Link copied!