আমার সংবাদ ডেস্ক
জুন ২১, ২০২৫, ১২:০৭ এএম
আমার সংবাদ ডেস্ক
জুন ২১, ২০২৫, ১২:০৭ এএম
বিশ্বের ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থাকার পরও ইরানের বিমান হামলার কাছে অসহায় হয়ে পড়ছে ইসরায়েল। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়াতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় নিতে চাওয়ায় গভীরভাবে হতাশ হয়েছে পড়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তার জোট। এমনটিই জানিয়েছেন ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের কলামিস্ট গিডিয়ন লেভি।
লেভি বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় দুই সপ্তাহ মানে ‘চিরকাল’। ট্রাম্প যদি সত্যিই অপেক্ষা করেন ও এটা যদি ‘কৌশলগত বিভ্রান্তি’ না হয়ে থাকে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা প্রতিনিয়তই কমছে। গিডিয়ন লেভির মতে, ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো ধ্বংস করলেও ইসরায়েল দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ হবে না।
তিনি বলেন, ইরান আবারও তার সামরিক সক্ষমতা পুনর্গঠন করতে পারবে ও গাজা বা অন্যান্য নিরাপত্তা সমস্যা থেকেই যাবে। ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান বাস্তবতায় রাজনৈতিকভাবে নেতানিয়াহুর টিকে থাকার অন্যতম কৌশল হলো- যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে টেনে আনা। কিন্তু ট্রাম্পের সময় নিতে চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেতানিয়াহুর আকাঙ্ক্ষায় বড় ধাক্কা হিসেবেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এর আগে, মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন, কিন্তু হামলা চালানো হবে কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানায় মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল। পরে যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস জানায়, ইরান যদি তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বাতিল করতে রাজি হয়, তাহলে ট্রাম্প হামলা শুরুর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখবেন।
বুধবার (১৮ জুন) ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কিনা এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেছিলেন, আমি এটা করতে পারি, আমি নাও করতে পারি। এর আগে সিবিএস জানিয়েছিল, ইরানের ভূ-গর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা ফোর্দোতে মার্কিন হামলার কথা ভাবছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অন্যদিকে, ইরান স্পষ্ট জানিয়েছে দিয়েছে, তারা হোয়াইট হাউজের দরজায় ঝুঁকবে না। তাছাড়া ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করলে আরও কঠোর আক্রমণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে খামেনির দেশ।
তারই ধারাবাহিকতায় ইসরায়েলের ওপর গতকাল শুক্রবার বিকালে নতুন করে প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। এক প্রতিবেদনে মেহের নিউজ এজেন্সি এ খবর জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের মাটিতে বিনা প্ররোচনায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে তেহরানের কাছে ইরানি জাতি এবং দেশের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অপরাধী জায়নিস্টদের বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। এর প্রতিশোধের অংশ হিসেবে ইরান আজ ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, নতুন এই ব্যারেজে প্রায় ৩৯টি ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করা হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলজুড়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। উত্তরে হাইফা এলাকা এবং দক্ষিণে বে’র শিবা এলাকায় প্রভাব পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
জেরুজালেমেও কমপক্ষে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এক সপ্তাহ আগে থেকে ইসরায়েলি সরকার ইরানের মাটিতে শুরু করা বিনা উস্কানিতে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানও মিসাইল ও ড্রোনের ঝাঁক ছুড়ছে। মেহের নিউজ জানিয়েছে, ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর কাছ থেকে ধংসাত্মক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর ইসরায়েলি সরকারের কর্মকর্তারা ইরানিদের তাদের শহরগুলো ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিতে শুরু করেছে। আজ উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিমে ইরানি জাতি জুমার নামাজে অংশ নেন এবং ইসরায়েলি হানাদারদের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠানোর জন্য রাস্তায় নেমে আসেন। ইরানি জাতি তাদের মাতৃভূমিকে সর্বশক্তি দিয়ে রক্ষা করবে এবং তারা কোথাও পালিয়ে যাবে না।
এদিকে ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসবে না বলেও জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরএনএকে তিনি এ কথা বলেন।
আরাঘচি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা চায় ও বেশ কয়েকবার বার্তা পাঠিয়েছে। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি যে, আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। এই অপরাধের অংশীদার হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের কোনো আলোচনা নেই। ১৩ জুন ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত শুরুর পর প্রথমবারের মতো পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় বসছেন আরাঘচি। গতকাল শুক্রবার জেনেভায় ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে তার দেখা হওয়ার কথা রয়েছে।
আইআরজিসির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন খামেনি
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস (আইআরজিসি) এর সর্বোচ্চ পরিষদের কাছে যুদ্ধকালীন ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ইরান ইন্টারন্যাশনাল।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লাভিজানের একটি গোপন বাঙ্কারে সপরিবারে সরিয়ে নেয়া হয়েছে খামেনিকে। তার সঙ্গে তার প্রভাবশালী ছেলে মোজতবা খামেনিও রয়েছেন। সমপ্রতি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লিখেছেন, আমরা জানি তথাকথিত ‘সুপ্রিম লিডার’ কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি সহজ টার্গেট, তবে আপাতত তাকে হত্যা করা হবে না। কিন্তু আমাদের ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই না বেসামরিক মানুষ বা আমেরিকান সৈন্যদের দিকে আর কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হোক। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষমতা হস্তান্তরের এ পদক্ষেপ একটি সম্ভাব্য ‘প্রি-এম্পটিভ ট্রান্সফার অব অথরিটি’, যার মাধ্যমে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কমান্ড কাঠামো অক্ষুণ্ন রাখা যাবে, যদি খামেনি নিহত হন। ইসরাইল-ইরান চলমান সংঘাতের অষ্টম দিনে উভয়পক্ষ একাধিক হামলা ও পাল্টা হামলায় জড়িয়েছে। ইসরাইলের একাধিক আক্রমণে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং এর পাল্টা জবাবে ইরানও ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে।
শুক্রবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান ইসরাইলের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরাইল যদি হামলা অব্যাহত রাখে, তাহলে ইরান আগের চেয়ে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে। ইরানি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা সবসময় শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথ অনুসরণ করেছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তি কেবল তখনই সম্ভব, যখন জায়নবাদীরা সন্ত্রাসী আগ্রাসন বন্ধ করবে এবং স্থায়ীভাবে তা বন্ধ রাখার গ্যারান্টি দেবে।