নিজস্ব প্রতিবেদক
জুন ২১, ২০২৫, ১২:১১ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
জুন ২১, ২০২৫, ১২:১১ এএম
আমদানি করা এলএনজি খালাসে বিঘ্ন ঘটায় টানা তিনদিন ধরে তীব্র গ্যাস সংকটে পড়েছে মানুষ। গত মঙ্গলবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কল কারখানার চাকা বন্ধ হয়েছে, সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো হঠাৎ গ্যাস দিতে পারছে না, বাসাবাড়িতেও রান্নাবান্না বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
পেট্রোবাংলার অপারেশন অ্যান্ড মাইন বিভাগের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলছেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। শুক্রবার দুপুর নাগাদ অনেক এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তবে সব জায়গায় সরবরাহ স্বাভাবিক হতে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। সে কারণে একই সময়ে ঢাকার সব আবাসিক এলাকায় গ্যাস সংকট লাঘবের খবর মেলেনি।
রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় ভোজন বিলাস নামের একটি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন শুক্রবার দুপুরে বলেন, ‘গত দুই দিন ধরে বনশ্রী এলাকায় গ্যাস নেই। এখনও নেই। আমার হোটেলের রান্না ঘরে লাইনের গ্যাস আর সামনে রুটি পরটা ভাজার জন্য এলপি গ্যাস। গত দুই দিন এলপি গ্যাসের চুলা দিয়েই যতটা সম্ভব রান্না করতে হচ্ছে।’
একই পরিস্থিতি বাসাবাড়িতেও। গ্যাস নেই, তাই রান্নাও নেই। যাদের বিকল্প চুলা আছে তারা কিছুটা পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে পারলেও বাকিরা পড়ছেন বিড়ম্বনায়।
শান্তিনগরের বাসিন্দা সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘দীর্ঘদিন গ্যাসের সমস্যা ছিল না। ফলে ইলেক্ট্রিক চুলা কোথায় রেখেছি মনে ছিল না। একদিন গ্যাসের কষ্ট করার পর গতকাল চুলা খুঁজে বের করলাম।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘এটা তো বাড়তি ঝামেলা। গ্যাসের সমস্যা কেন হচ্ছে, পরিস্থিতি কী সহসা ঠিক হবে?’
খিলগাঁওয়ের একটি ছোট খাবার হোটেলের কর্মচারী শরীফ বলেন, “গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকেই দেখলাম হোটেলে কাস্টমারের ভিড় অন্যদিনের চেয়ে বেশি। পরে শুনলাম গ্যাস সংকটের কারণে অনেকের বাসাবাড়িতে রান্না হয়নি।”
সংকট কেন?
বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরে ভাসমান গ্যাস টার্মিনালে এলএনজির জাহাজ বেড়ানো যাচ্ছিল না। ফলে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হতে থাকে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাতীয় সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে গিয়েছিল এই কারণে। সমস্যা দেখা দেওয়ার পর থেকেই দৈনিক গ্যাস প্রতিবেদন প্রকাশ করা বন্ধ রেখেছে পেট্রোবাংলা।
তবে সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ ছিল ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি। সেই সরবরাহ দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে নেমে যায় গত কয়েক দিনে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সামিট এলএনজি এবং এক্সিলারেট এনার্জির এলএনজি টার্মিনাল দুটিতে কার্গো ভেড়ানো যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার নাগাদ সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পেট্রোবাংলার পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, দুপুর ১২টার খবর হচ্ছে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে। সেক্ষেত্রে জাতীয় সঞ্চালন ২৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের কাছকাছি। “অর্থাৎ পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। ধীরে ধীরে গ্রাহক পর্যায়েও এর প্রভাব পড়বে।”
বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর জানান, গত বুধবার দেশের অধিকাংশ স্থান থেকে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো গ্যাসশূন্য হয়ে যাওয়ার অভিযোগ আসছিল। এলএনজি টার্মিনালে সমস্যা হওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।