Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

একাত্তর জার্নালে শিক্ষক ‌‘অপদস্তের’ অভিযোগে নিন্দা

‌‘কিভাবে গবেষণা হয়, সে সম্মন্ধে তারা ন্যূনতম জ্ঞানও রাখেন না’

মো. মাসুম বিল্লাহ

নভেম্বর ৭, ২০২২, ০৩:৩১ পিএম


‌‘কিভাবে গবেষণা হয়, সে সম্মন্ধে তারা ন্যূনতম জ্ঞানও রাখেন না’

সম্প্রতি একাত্তর টেলিভিশন আয়োজিত একাত্তর জার্নালের এক টকশোতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষক অধ্যাপক ড. জাকির হোসেনকে তার গবেষণামূলক কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল, কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতি ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) শিক্ষক সমিতি।

রোববার (৬ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের আহবায়ক ও সদস্য সচিব এবং কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতির সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত স্ব স্ব প্রতিবাদ লিপিতে ওই তথ্য জানানো হয়।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষককে টকশোতে হেনস্থা করায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

প্রতিবাদ লিপিতে জানানো হয়, গত ২ নভেম্বর একাত্তর টেলিভিশনে আয়োজিত একাত্তর জার্নালের একটি টকশোতে বাকৃবির গবেষক অধ্যাপক ড. জাকির হোসেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অনুষ্ঠানের সঞ্চালকসহ অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথি দ্বারা অশোভন ও আক্রমণাত্মক আচরণ এবং প্রক্রিয়াধীন গবেষণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। টকশোতে গবেষকের গবেষণামূলক কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করায় কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতি হতবাক ও মর্মাহত হয়েছে। একাত্তর টেলিভিশনের ওই সাংবাদিকদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে ক্ষমা চাওয়া এবং গবেষণা সম্পর্কিত সঠিক প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানিয়েছে কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতি।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের প্রতিবাদ লিপিতে জানানো হয়, অধ্যাপক ড. জাকিরের গবেষণা দল কিন্তু কখনো বলেননি যে বেগুন খেলে ক্যান্সার হবে। কিন্তু একাত্তর টেলিভিশনের ওই টকশোতে উপস্থাপকসহ আরও দু’জন সাংবাদিক যেভাবে তাঁকে জেরা করলেন তা কোনোক্রমেই শিষ্টাচারের পর্যায়ে পড়ে না। ওই সাংবাদিকরা সাইন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালটির মান, প্রকাশক, কিভাবে গবেষণা হয়, কিভাবে জার্নালে প্রকাশ করতে হয় ইত্যাদি সম্মন্ধে ন্যূনতম জ্ঞানও রাখেন না বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

প্রতিবাদ লিপিতে আরও জানানো হয়, গবেষণার বিষয় সম্পর্কিত ন্যূনতম জ্ঞান না থাকা স্বত্বেও ৭১ টিভির সাংবাদিকদের টকশোতে অসৌজন্যমূলক আচরণ কখনোই কাম্য নয়। অসৌজন্যমূলক কর্মকাণ্ড গবেষক ও জনমনে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর নয়। নীল দল এবং ছাত্র সমিতি গবেষক অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ও তার গবেষণার উপর একাত্তর টেলিভিশনের ঐ সাংবাদিকদের ভিত্তিহীন ও অসৌজন্যমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করে।

সম্প্রতি ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ বিশ্বখ্যাত জার্নালে বাকৃবির কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে বেগুনে ভারী ধাতুর উপস্থিতি শীর্ষক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। ড. জাকির বেগুন নিয়ে যে গবেষণা করেছেন যেটি সাদা চোখে খুবই সাদামাটা একটি গবেষণা মনে হলেও মানবদেহের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিলে গবেষণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় জামালপুরের জেলার কিছু এলাকার চাষকৃত বেগুনে কয়েকটি ভারী ধাতু যেমন- লেড, ক্যাডমিয়াম এবং নিকেলের উপস্থিতি পেয়েছেন যা মানবদেহের সহনীয় মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় রয়েছে। এসব ভারী ধাতু ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অতিরিক্ত মাত্রায় এসব ভারী ধাতুর উপস্থিতি মানব শরীরের জন্য হুমকিস্বরূপ ও মরণব্যাধি রোগ ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগ তৈরি করতে সক্ষম।

একই দিন প্রতিবাদ জানিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) শিক্ষক সমিতি। রবিবার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. শরীফ হাসান লিমন ও যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. মতিউল ইসলামের স্বাক্ষর করা এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ৭১ টিভির টক-শো এর উপস্থাপক সহ তাঁর অন্য দু‍‍`জন সহকর্মী অবিজ্ঞানসুলভ কথাবার্তা ও আক্রমণাত্মক বাক্যবাণে সংশ্লিষ্ট গবেষককে নাজেহাল ও অসম্মানিত করেছেন। এই ধরণের অপব্যাখ্যামূলক, আক্রমণাত্মক ও অবিজ্ঞানসুলভ কথাবার্তা প্রমিত সাংবাদিকতা ও স্বাভাবিক সৌজন্যতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

No description available.

বিবৃতিতে শিক্ষক নেতারা আরও জানান, সংবাদ মাধ্যমের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের যেভাবে সাধারন মানুষের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ আছে বোধকরি, অন্য কোন পেশায় সে সুযোগ নেই। কাজেই সংবাদ মাধ্যমগুলো সুযোগ্য মানুষদের বিচরনে মুখরিত হোক। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির প্রত্যাশা এই যে, সাংবাদিকতার মহান চর্চায় সৌজন্যতা, সম্মান ও জ্ঞান নির্ভরতার প্রাধান্য পাবে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি একাত্তর টেলিভিশনের উল্লিখিত টক-শো‍‍`তে অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন এর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

 

ইএফ

Link copied!