Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০১ মে, ২০২৪,

এমপিও-জনবল নীতিমালা লঙ্ঘন করে

অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষকে ‘উপদেষ্টা’ পদে নিয়োগ : বেতন অর্ধলক্ষ টাকা

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি

আগস্ট ১২, ২০২২, ০৬:০২ পিএম


অবসরে যাওয়া অধ্যক্ষকে ‘উপদেষ্টা’ পদে নিয়োগ : বেতন অর্ধলক্ষ টাকা

কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ছৈয়দপুর কামিল (মাস্টার্স) মাদরাসায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল নীতিমালা লঙ্ঘন করে অবসরে যাওয়া একজন সাবেক অধ্যক্ষকে অর্ধলক্ষ টাকা বেতনে ‘উপদেষ্টা’ পদে নিয়োগ দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য মাদ্রাসার তহবিল থেকে মাসিক পরিশোধ করতে হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে অসুদপায়ে ‘অধ্যক্ষ’ নিয়োগ চেষ্টাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. ফিরোজ আহমেদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়েছে।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ এ উল্লেখ আছে, ‘বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর কোন প্রতিষ্ঠান প্রধান/সহঃ প্রধান/শিক্ষক-কর্মচারীকে কোনো অবস্থাতেই পুনরায় নিয়োগ কিংবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যাবে না। নীতিমালা অনুযায়ী ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ায় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি অত্র প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের পদ থেকে অবসরে যান আবু তাহের মো. সালেহ উদ্দিন। কিন্তু পরে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ফিরোজ আহম্মেদের যোগসাজসে কমিটির অন্য সদস্যদের আপত্তি থাকার পরও আবু তাহের মো. সালেহ উদ্দিনকে একই প্রতিষ্ঠানে ৫০ হাজার টাকা বেতনে ‘উপদেষ্টা’ পদে পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয়। যা মাদরাসা জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ।
  
মাদরাসার কিছু কাগজ পত্রেও ‘উপদেষ্টা’ পদে নিয়োগের সত্যতা মিলেছে। গর্ভনিং বডির সভাপতি মো. ফিরোজ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ইছমাইল স্বাক্ষরিত অফিসের একটি নথিতে দেখা যায় চলতি বছরের ১৬ মে স্বাক্ষরিত ওই নথিতে আবু তাহের মো. সালেহ উদ্দিনকে প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা পদে উল্লেখ করে চার মাসের বেতন বাবদ ২ লক্ষ ও অগ্রিম দুই মাসের বেতন আরও ১ লক্ষসহ মোট ৩ লক্ষ টাকা প্রদানের বিবরণ রয়েছে। ওই অর্থ প্রদান করা হয়েছে ছৈয়দপুর কামিল মাস্টার্স মাদরাসার নামে কৃষি ও অগ্রণী ব্যাংকের দুটি হিসাব নম্বর থেকে।

রবিবার সরেজমিনে মাদরাসায় গেলে একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী জানান, গত ২০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের কোন উন্নতি নেই। জরাজীর্ন টিনের ঘরে হোস্টেলের ছাত্ররা থাকছে। সভাপতি নিজের মনগড়া একক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এ প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষকে উপদেষ্টা বানিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ হাজার টাকা বেতন দেয়া হচ্ছে। সভাপতি মোহাম্মদ ফিরোজ সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইছমাইলকেও অসুদপায়ে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের পাঁয়তারা করছেন। একক স্বেচ্ছাচারিতার জন্য তাঁর নিকট আত্মীয় আরও দুইজনকে কমিটিতে রেখেছেন।

এছাড়াও সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইছমাইলের বিরুদ্ধে ‘অধ্যক্ষ’ পদে যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের আবেদনপত্র বাছাইয়ে বাতিল করার অভিযোগও রয়েছে। আমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির আবেদনপত্র তিনি বাছাইয়ে বাতিল করে দেন ।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিজে নিয়োগ নিবেন বলে আমার আবেদন বাতিল করে দিয়েছেন। পরে আমি মন্ত্রণালয়, ডিজি অফিস আবেদন করলে ডিজির নির্দেশে আমার আবেদন পুনরায় গ্রহণ। আমি স্বচ্ছ একটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার দাবি করছি।  
  
ম্যানেজিং কমিটির সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সামসুল হক বলেন, মাদরাসায় ‘উপদেষ্টা’র পদ নামে কোন পদ নেই। সাবেক অধ্যক্ষ আবু তাহের মো. সালেহ উদ্দিন চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠান থেকে অবসর নেন। এরপর তিনি এখানে কি করে আবার উপদেষ্টা নিয়োগ পেলেন ? তাঁর বেতনের পুরো টাকা এ প্রতিষ্ঠান বহন করছে। অথচ এ প্রতিষ্ঠানে দৃশ্যমান কোন অবকাঠামোর উন্নয়ন নেই, ছেলেদের হোস্টেল জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে, হোস্টেলে নিম্নমানের খাবার দেয়া হচ্ছে, মাদরাসার দীর্ঘদিনের সুনাম আজ কয়েকজনের অপকর্মের কারণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।  

মাদরাসার অধ্যাপক মাও.আবদুল লতিফ বলেন, আগের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ইছমাইল হোসেন ভারপ্রাপ্ত থাকাবস্থাই মাদরাসার রেজুলেশন বই নিজের বাসায় নিয়ে যান। মনগড়া রেজুলেশন করে গোপনে পত্রিকায় অধ্যক্ষের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর তিনিই আবার অধ্যক্ষ পদে আবেদন করেন।

গর্ভনিং বডির সদস্য মো. শাহ আলম বলেন, মাদরাসায় অধ্যক্ষ নিয়োগ হবে কেউ জানে না। সভাপতি গোপনে  নিয়োগের সার্কুলার দিয়েছেন। সার্কুলার দেয়ার আগে তিনি কমিটির কারও সাথে পরামর্শ করেননি। সভাপতি নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত, সবাইকে জানিয়ে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে অনেক লোক আবেদন করত। কিন্তু তিনি কাউকে জানাননি। মাদরাসায়  লক্ষ লক্ষ টাকার আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছ কোন হিসাব নেই।

বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মজিবুর রহমান ‘উপদেষ্টা’ পদে ৫০ হাজার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এটি আইনে বা কোন নীতিমালায় নেই, এরপরও কমিটির সভাপতি নিয়োগ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানে উন্নতির জন্য। তিনিই এ প্রতিষ্ঠানের অল ইন অন।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অভিযুক্ত মো. ফিরোজ আহমেদ বলেন, মাদরাসার স্বার্থে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে উপদেষ্টা   পদে রাখা হয়েছে। তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়। পত্রিকা বিজ্ঞপ্তি কে কখন দিয়েছে আমি জানি না, আমার মনে নেই, আমি ঢাকায় থাকি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আগের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইছমাইল দিয়েছেন হয়তো।

উপদেষ্টা পদে নিয়োগের কথা স্বীকার করে সাবেক অধ্যক্ষ আবু তাহের মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, গভর্নিং বডি মনে করেছেন আমাকে রাখবেন রেখেছেন, তবে আমি কোন স্টাফ নই। মাদরাসার ফান্ড থেকে আমাকে চলার জন্য ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। তবে নীতিমালায় এসব নেই বলে তিনি স্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ইছমাইল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, আমিনুল ইসলামের আবেদনপত্রটি কমিটি বাদ দিয়েছেন। পুরাতন রেজুলেশন বই আমার কাছে নেই মাদরাসায় আছে। প্রতিষ্ঠান যদি ইচ্ছে করে তাহলে উপদেষ্টা পদে একজনকে নিয়োগ দিতে পারেন।

দেবিদ্বার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম আলী জিন্নাহ বলেন, কোন প্রতিষ্ঠানের প্রধান অবসরে গেলে শূন্য পদে নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত কে দায়িত্বে থাকবে তাও সুস্পষ্ট বিধান আছে। কিন্তু অবসরে যাওয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে ৫০ হাজার টাকা বেতনে উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেয়ার আইনগত কোন বিধান নেই, এ ধরনের কোন পদও নেই। যা প্রতিষ্ঠানের অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান।

আমারসংবাদ/এসএম

Link copied!