Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪,

ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার আসামি যুবলীগের বড় পদে!

কুমিল্লা প্রতিনিধি

কুমিল্লা প্রতিনিধি

সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২, ০৫:২১ পিএম


ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার আসামি যুবলীগের বড় পদে!

একজনকে আহ্বায়ক, দুই জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৩৮ জনকে সদস্য করে ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি কেন্দ্রীয় যুবলীগ। এক দশক পর কমিটি কমিটি ঘোষণা হওয়ায় পদপ্রাপ্ত নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনন্দনে ভাসছেন। তবে বঞ্চিতদের সমর্থকরা জানাচ্ছেন তীব্র ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া।

দলীয় সূত্র জানা যায়, কুমিল্লায় রাজনৈতিক বিরোধে গত দেড় দশকে যে কয়টি খুনের ঘটনা ঘটেছে; তার মধ্যে আলোচিত একটি হলো ছাত্রলীগ নেতা এম. সাইফুল ইসলাম প্রধান হত্যাকাণ্ড। তৃণমূল থেকে উঠে আসা সাইফুল কুমিল্লা শহর ছাত্রলীগের সভাপতির পদে থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হওয়া মামলার ৯ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি হলেন সদ্য ঘোষিত কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস ছোবহান খন্দকার সেলিম। এ কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে কুমিল্লা সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) মো. কামরুল হাসান শাহীনকে। শাহীন অর্থমন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালের বড় ভাইয়ের ছেলে। কমিটির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে লাকসাম পৌরসভার মেয়র অধ্যাপক মো.আবুল খায়েরকে। দ্বিতীয় যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস ছোবহান খন্দকার সেলিম সাবেক রেলমন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

সাইফুল ইসলাম প্রধান হত্যা মামলার বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক কামরুল হাসান শাহীন বলেন, ওই মামলাটি ছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক। সেখানে আবদুস ছোবহান খন্দকার সেলিমের মতো অনেক নেতাকর্মীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আসামি করা হয়েছে। সেলিম ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তার বিরুদ্ধে এখন মিথ্যা মামলার বিষয় নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

তবে কুমিল্লা সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস যুবলীগ নেতা আতিকুর রহমান খান পিন্টু বলেন, এই কমিটিতে মাঠের পরিশ্রমী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে আমি কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে আন্দোলন-সংগ্রামসহ সকল কর্মসূচি পালন করেছি। আমি নিজে আহ্বায়ক বা সভাপতি পদপ্রত্যাশী ছিলাম। কিন্তু সাইফুল হত্যা মামলার এজাহারে আমার নাম দশ নম্বরে থাকায় আমাকে পদে রাখা হয়নি। আমি দলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কিন্তু যেই অভিযোগে আমি বাদ পড়েছি, সেই মামলার ৯ নম্বর আসামি কীভাবে শীর্ষ পদ পেয়েছে- এটা কুমিল্লার তৃণমূল যুবলীগ কর্মীরা জানতে চায়।

হত্যাকাণ্ডের শিকার ছাত্রলীগ নেতা সাইফুলের ছোট ভাই কুমিল্লা মহানগর যুবলীগ নেতা এম. কামরুল হাসান নান্নু বলেন, ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল আমার ভাইকে কুপিয়ে ও গুলি করে গুরুতর আহত করা হয়। পরদিন ১২ এপ্রিল সকালে তিনি মারা যান। ভাবতে অবাক লাগে আমার ভাইয়ের খুনিরা আজ বড় বড় পদ পেয়ে পুরস্কৃত হয়। এর চেয়ে বেদনার কী হতে পারে?

এ বিষয়ে জানতে সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মামলার প্রসঙ্গে সদ্য ঘোষিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস ছোবহান খন্দকার সেলিম বলেন, ওই মামলাটি একটি পলিটিক্যাল (রাজনৈতিক) মামলা। সেটাকে নিয়ে এখন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এনিয়ে ষড়যন্ত্র করে তারা কিছু করতে পারবে না।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালে ৬৭ সদস্যবিশিষ্ট ৩ বছর মেয়াদী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে শাহীনুল ইসলামকে সভাপতি ও মঞ্জুর মোর্শেদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। তিন বছর মেয়াদী সেই নেতৃত্ব দিয়েছে দেড় দশকের বেশি সময়। ২০১২ সালের ১৭ জুন ওই কমিটি ভেঙে দেয় কেন্দ্রীয় যুবলীগ। এরপর থেকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কোনও কমিটি ছিল না। দীর্ঘ ১০ বছর পর গত শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ।

Link copied!