Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

নীলফামারীতে হারিয়ে যাচ্ছে হাঁড়ি পাতিল, ভাল নেই কুমারেরা

আল-আমিন, নীলফামারী

আল-আমিন, নীলফামারী

মার্চ ২৫, ২০২৩, ০২:৪০ পিএম


নীলফামারীতে হারিয়ে যাচ্ছে হাঁড়ি পাতিল, ভাল নেই কুমারেরা

বাব দাদার হাতে খুঁটি, হাঁড়ী, পাতিল, সারোয়া, কলস, শ্লিম, পেচি, ব্যাংক, প্লেট, রুটি বানা তাওয়া, চারি, কান্টা, ফুলের টপ, থালা, মাটির খেলনা বানা (তৈরী) শিখছো। এখন স্মামীর সংসারে ২১ বছর থাকি এই কাম (কাজ) করি। স্বামী, বেটি দুইটা ছেলে একটা ওলাও এই কামই করে। তাও সংসার চলে না। কথা গুলো বলেন, নীলফামারী সদরের সোনারায় ইউনিয়নের উত্তর মুসরত কুকাপাড়া গ্রামের কুমার পাড়ার নমিতা পাল (৩৯)।

স্বামী খগেন্দ্র পাল (৪৫) বলেন, ‘প্লাস্টিকের ভাড়া পাতিল বের হয়ে হামার মাটির জিনিশ কেউ নেয় না। বছরে একবার পহেলা বৈশাখ, হিন্দুর বিয়া বাড়ী ও বিভিন্ন পুজা পার্বনে একটু বেচাকেনা হয় এখন তাও হয় না। এক সময় এই ব্যবসার যতেষ্ট কদর ছিল। বাড়ীতে এসে পাইকাররা বায়না দিয়ে যেত এখন আর সেই দিন নাই। কামাই খুব হইত। কিন্ত এখন পেটে চলে না।’

ওই ইউনিয়নের মুসরত কুকাপাড়ায় রয়েছে এই শিল্পের প্রায় ৬৫ পরিবার। এ ছাড়াও জেলায় বিছিন্নভাবে ২৩০ পরিবার এই পেশায় জীবন যাপন করে। কিন্ত মাটির অভাব, প্রয়োজনীয় পুঁজি ও পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে চরম অস্তিত্ব সংকটে নীলফামারীর মৃৎশিল্পিরা। উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর ন্যায্য মুল্য না থাকায় এই শিল্পের সাথে জড়িতরা অন্য পেশায় যেতে বাদ্য হচ্ছে। সাত পুরুষের ঐতিহ্যবাহী পেশাকে কোন রকমে ধরে রেগেছেন তারা। বাজারে প্রচলিত প্লাস্টিক সামগ্রীর সাথে পাল্লা দিতে না পেরে তারা এখন কোনঠাসা। ফলে গ্রাম বাংলার এই শিল্পের ঐতিহ্য হারানোর পাশাপাশি তাদের দুর্দিন যাচ্ছে।

একই গ্রামের মৃৎশিল্পি বিকাশ চন্দ্র পাল (৪০) বলেন, ‘পুরুষদের প্রধান কাজ মাটি কিনে সেগুলো কাদা করা ও ভাটায় পোড়ানো। এরপর এসব সামগ্রী নিজ হাতে তৈরী করেন বাড়ীর নারী ও ছেলেমেয়েরা। আর এসব তৈরী সামগ্রী বাজারে বিক্রি করি আমরা। কিন্ত দিন দিন চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন হাত পড়েছে কপালে।’

জেলা শহরের ওইসব সামগ্রী বিক্রি করতে এসে কৈলাস চন্দ্র পাল (৪৫) বলেন, ‘মাটির তৈরী হাঁড়ি, পাতিল,কলস, সারোয়া, পেচি, তাওয়ার এক সময় খুব চাহিদা ছিল। বাজারে আসার সাথে সাথে ক্রেতা সামলাই যেত না। এখন হাটে আসা যাওয়া ভ্যান ভাড়াই উঠে না। আগে গরমে পানি রাখার একটি কলস বিক্রি হতো ৩০-৪০ টাকা। এখন ফ্রিজ বের হয়ে কলসের কোন চাহিদা নাই। হঠাৎ এক-আধটা বিক্রি হয়, তাও পানির দামে দিতে হয়।’

সদর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. ফিরোজ সরকার বলেন, ‘কুমারপাড়ার ওই পরিবার গুলো বিছিন্নভাবে বসবাস করায় তাদের কোন সমবায় সমিতি নাই। তাদের এক জায়গায় করে সমবায় সমিতির মাধ্যমে সহযোগিতা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, প্লাষ্টিকের উৎপাদিত পণ্যের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে কুমার শিল্প।’

এ ব্যাপারে, নীলফামারী ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের ব্যবস্থাপক (বিসিক) হোসনে আরা খাতুন জানান, এ শিল্পের লোকজনদের সমিতির মাধ্যমে আর্থিকভাবে সহায়তা করা যেতে পারে। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় মাটির তৈরী জিনিশপত্রের আদলে তৈরী করছেন প্লাস্টিক পন্য নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রতিনিয়ত ব্যবহার কমছে মাটির তৈরী পন্য সামগ্রীর। এতে বিপাকে পড়েছে এই শ্রেনী পেশার মানুষ। তিনি বলেন, আমাদের শর্ত পুরণের মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করা যেতে পারে।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারীভাবে কোন ধরনের সহায়তার সুযোগ থাকলে তা অবশ্যই করা হবে। এটি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য আর ওই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে কুমাররা (মৃৎশিল্পরা)

আরএস

Link copied!