Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

লিচুতে বাগানি ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি!

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

মে ২৭, ২০২৩, ০৩:৩৩ পিএম


লিচুতে বাগানি ও ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি!

বাগানে বাগানে ঝুলছে লাল টসটসে রসালো বাহারী সব লিচু। প্রতিটি গাছের থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা লিচু দেখতে আসছে ফরিয়া মহাজনসহ লিচু প্রেমী দর্শক ও ক্রেতারা। উপজেলা জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় লিচুর বাগান। 

তার অধিকাংশ বাগানই রয়েছে নাজিরপুর গ্রামে। যেদিকেই চোখ যায় শুধু লাল সবুজ রঙের সমাহার। এমন মন মাতানো দৃশ্য চোখে পড়বে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর গ্রামে। 

তবে এবছর এই চিত্রটা ভিন্ন, প্রচন্ড তাপদাহ এবং প্রাকৃতিক কারনে অধিকাংশ বাগানের লিচু ফেটে পঁচে যাচ্ছিলো। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই বাগান থেকে কাঁচা ফাটা লিচু পেরে দাম কম থাকায় ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছিলো এই এলাকার লিচু বাগানি ও ব্যাবসায়ীরা। আগাম জাতের মোজাফফর লিচুর শেষ মূহুর্তে দাম বৃদ্ধি হওয়ায় গুরুদাসপুরের লিচু বাগানি ও ব্যাবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে। 

এমনটি হয়েছে আবহাওয়া অনুকুলে থাকার জন্য। গুরুদাসপুর কৃষি অফিস সুত্রে জানাযায়, গুরুদাসপুরে ৪১০ হেক্টর জমিত ৫৭০ টি বাগান রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই মোজাফফর জাতের লিচু। শুধু মাত্র ১৫ থেকে ২০ হেক্টর জমিতে চায়না-৩ এবং বোম্বে লিচু রয়েছে। এবছর লিচুর বাজার মুল্য অনুসারে ৭৫ থেকে ৮৫ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলার সব চেয়ে বড় লিচুর আড়ত নাজিরপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর এলাকার কানু মোল্লার বটতলা। এই লিচুর আড়ত থেকে প্রতি মৌসুমে সরকার রাজস্ব পান। এ বছর ৫ লাখ ৩০হাজার টাকায় ডাক হয়েছে। দেশের নানাপ্রান্ত থেকে ফরিয়া ও মহাজনরা আসেন লিচু ক্রয়ের জন্য। 

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন বাগান ও আড়তে গিয়ে দেখাযায়-সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত লিচু ভাঙ্গার কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকসহ পরিবারের সদস্যরা। সেগুলো নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় আড়তে। লিচুকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে স্থায়ী ও অস্থায়ী সব আড়ত। ভোর থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে লিচু পারা ও বাছাইয়ের কাজ তার পর দুপুর থেকে শুরু হয় বেচো-কেনা চলে সন্ধা পর্যন্ত। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা, মহাজন, পাইকার ও ফড়িয়াদের কেনাকাটায় মুখরিত থাকে আড়তগুলো।

এছাড়াও জমি থেকে পাইকারী ও ক্ষুদ্র মৌসুমিফল ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে লিচু সংগ্রহ করছেন নগদ টাকায়। কেউবা আবার অগ্রিম টাকাতেও কিনে রেখেছেন বাগান। গুরুদাসপুরে বেড়গঙ্গারামপুর কানু মোল্লার বটতলায় বসে নাটোরের সবচেয়ে বড়লিচুর মোকাম। ওইখানে ১৫ থেকে ২০টি ফল বিক্রির আড়ত রয়েছে। 

এছাড়াও মোল্লাবাজার, বিয়াঘাট সুজার মোড়,মশিন্দসহ বেশকয়েকটি স্থানে চলছে পুরোদমে খুচরা ও পাইকারি লিচু বেচাকেনা।এছাড়া ফরিয়া ও মহাজনরা লিচু ক্রয় করে প্রতিদিন নিয়ে যাচ্ছেন দেশের নানাপ্রান্তে।

নাজিরপুরের মাহমুদপুর গ্রামের লিচু বাগানি মো.জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এবছর আমার ৫টি লিচুর বাগান রয়েছে। প্রায় শতাধিক গাছ ছিলো অধিকাংশই মোজাফফর জাতের লিচু ছিলো। খরার কারনে কিছু লিচু নষ্ট হয়েছে। তবে নমলা লিচুগুলো ভালো হয়েছে। সেই সাথে শেষ মূহুর্তে  দাম টাও ভালো পাচ্ছি। যে কারনে খরচা বাদে মোটামুটি ভালই লাভ হবে।

বেড়ঙ্গারামপুর কানু মোল্লার লিচুর বাজার আড়ত সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত মোল্লা জানান, প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫টি ট্রাক বোঝাই ঝুড়িভর্তি লিচু যাচ্ছে দেশের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ,কুমিল্লা ও চট্রগ্রমসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে। প্রতি ছোট ঝুড়িতে ১হাজার.মাঝারীতে ২ ও বড়গুলোতে ৩হাজার লিচু থাকে। প্রতি হাজার লিচু আকার অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে ১৬শ থেকে ৩২শ টাকায়।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, মুলত লিচুর আবাদ গুরুদাসপুরেই বেশি হয়। গুরুদাসপুরের কৃষকদের মাঝে লিচু আবাদে আগ্রহ বাড়ছে। এবছর বৈরি আবহাওয়ার কারনে লিচু চাষিরা খিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।তবে ভালো দাম পাওয়ায় ক্ষতি পুশিয়ে নিতে পারবেন বলে তিনি মনে করছেন।এখানে চায়না,বোম্বাই জাতের লিচু কম চাষ হয়। মোজাফ্ফর জাতের লিচুর চাষই বেশি হয়। সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ না দিলে চাষিরা আরো ক্ষতিগ্রস্থ হতো।

এইচআর

Link copied!