Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

বেপরোয়া অটোরিকশা বাড়ছে দুর্ঘটনা

পরাণ আহসান, ভোলা

পরাণ আহসান, ভোলা

ডিসেম্বর ২, ২০২৩, ০৬:২৯ পিএম


বেপরোয়া অটোরিকশা বাড়ছে দুর্ঘটনা

ভোলায় জেলা সদরসহ প্রায় ৭ উপজেলা শহর এবং আঞ্চলিক মহাসড়কে অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ইজিবাইকের যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। এসমস্ত এলাকায় পদে-পদে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা যেন মানুষের জন্য এক অসহনীয় দুর্ভোগে পরিণত হয়ে পড়েছে।

তবে আবার কিছু উপকারও হচ্ছে বলে মনে করছে অনেকে। উপজেলা গুলোতে ঘুরে দেখা যায়, যেখানে সেখানে যানজট আর যানজট লেগেই আছে এবং সেই সাথে কয়েক দিন পর পর ছোট বড় দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়।

সরেজমিন ঘুরে আরো দেখা যায়, জেলা সদর সহ উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়কের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখা হয় এসব অটো। অটোরিকশাগুলো রাস্তায় যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকার কারনে বাস,জরুরী পন্যবাহী গাড়ী, জরুরি রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স  যথাসময়ে গন্তব্যে পৌছতে পারছে না। এতে দুর্ভোগের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।

এসব অটোরিকশার অদক্ষ ও কিশোর চালক হওয়ার কারণে ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেছেন জনসাধারণ। এসব ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা ইজিবাইক বিদ্যুৎ চালিত হওয়ায় বিদ্যুতের ঘাটতিও হচ্ছে অনেক বেশি। এসব যানবাহনে বিদ্যুৎ এর অবৈধ লাইন নিয়ে চার্জ দেয়ার ও চুরি করে অটোচার্জ করার অভিযোগ রয়েছে।

এতে বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে অনেক। রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। সরকার এসব ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা অবৈধ ঘোষণা করা সত্বেও সমগ্র জেলাই চলছে তা। জেলার ভোলা-চরফ্যাশন একমাত্র প্রধান আঞ্চলিক মহাসড়কের, গুইঙ্গার হাট, বাংলা বাজার, বোরহানগঞ্জ, কুঞ্জের হাট, ডাউরি বাজার, লালমোহন, গজারিয়া, চরফ্যাশনসহ প্রধান প্রধান বাজার,চার রাস্তার মোড়ের উপর তাদের ইচ্ছেমত দাঁড়িয়ে থাকে।

চলাচল করছে বিশৃঙ্খলভাবে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না এসব অটোরিক্সা চালকরা। দাপটের সাথেই চলে এসব অবৈধ অটোরিক্সা। আবার এদের সমিতিও রয়েছে। কিছু হলেই সমিতির নেতারা থানা পুলিশ সামাল দেয়। অবৈধই যেন বৈধতায় রূপ নিয়েছে। যেন দেখার কেউ নেই। লালমোহন উপজেলার ১২-১৫ বছরের  দুই ইজিবাইক চালক রাকিব ও আল আমিন প্রশ্ন রেখে আমার সংবাদকে বলেন, আমি শুধু চরফ্যাশন লালমোহন এই দুই উপজেলা নয় জেলার বিভিন্ন প্রান্তসহ ভোলা জেলা শহরেও অটো চালাই।

অবৈধ হলে পুলিশতো আমাকে আটকাতো তাছাড়া আমাদের সমিতি আছে। কিছু হলে তারা দেখেন। বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলার আরো দুইজন অটোচালক রাসেল ও মোস্তাফিজ জানায়, দেড় দুই বছর ধরে অটো চালাই। এখনো কেউ বলেনাই এটা চালানো অপরাধ।

আজ শনিবার ২ ডিসেম্বর সকাল থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও বিভিন্ন প্রধান প্রধান বাজার গুলোতে গিয়ে দেখা যায় এসব চালকরা প্রধান সড়ক, বাজারে ওপর যত্রতত্র অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে অটোস্ট্যান্ড বানিয়ে ফেলেছে।

এসব স্থানে অটোরিকশা রাখা এখন নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আঞ্চলিক মহাসড়ক সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, প্রদান প্রদান বাজার গুলোতে ডানে বামে -সামনে পিছনে,কিংবা কোনো হর্ণ বা ভেপু না বাজিয়ে হঠাৎ হঠাৎ ঘুরিয়ে ফেলে এসব অটোরিকশা। এতে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় হতাহত হচ্ছে বহু সংখ্যক মানুষ।

জেলার বিভিন্ন উপজেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়কেতো বটেই ফুটপাত ও এখন অটোরিকশার দখলে থাকায় পথচারিদের পায়ে হেটে চলার আর অবশিষ্ট কোন জায়গাই থাকছে না। ফলে পথচারীরা পড়েছে কঠিন বিপাকে। সড়ক বা ফুটপাত দখলে থাকায় মানুষ আর স্বাভাবিকভাবে হাটা চলা করতেই পারছে না।

এদিকে যত্রতত্র অটোরিকশা ইজিবাইকের পার্কিং এবং যেখানে সেখানে স্ট্যান্ড বানিয়ে ফেলা নিয়ে সাধারণ মানুষ, পথচারী দোকানদার দের সাথে অটোরিকশা চালকের মধ্যে বাকবিতণ্ডা মারামারির ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। কিছু কিছু রাস্তা পারাপারে ছোট ছোট ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ে মারাত্মক ঝুঁকিতে। না জানি কখন কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায় কার ভাগ্যে। এ আশঙ্কায় থাকে শিক্ষার্থী, অভিবাবক ও পথ চারিগণ। শুধু তাই নয় হাট-বাজারের ভেতর ছোট চিপা গলির রাস্তায়ও ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে অটোরিকশা।

ভোলা থেকে ৭০ কিঃমিঃ দূরে যাওয়ার পথে অটোযাত্রী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, কোন প্রকার ট্রেনিং বা দক্ষতা ছাড়াই এসব কিশোর বালক শ্রেণীর চালকের অটোরিকশায় যাতায়াত করছি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। না চড়েও বা কি করব। কখন যে দুর্ঘটনা ঘটে যায় তা আল্লাহই ভাল জানেন।

প্রসঙ্গত জেলা শহরের বাংলা স্কুল মোড়, নতুন বাজার, যোগীর গোল, জজ কোর্টের সামনের এলাকাসহ গোটা শহরের গুরুত্বপূর্ণ  সড়ক গুলোতে  অটোরিকশার ভীড়ে যাতায়াত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে  অটোরিকশায় রাতের বেলা এলইডি লাইট ব্যাবহারের কারনে বিপরিত দিক থেকে আসা যাত্রী বা চালকরা কিছুই না দেখার কারণে রাতের বেলা রাস্তায় দুর্ঘটনাসহ চলালাচলে অনেক সমস্যা হচ্ছে।

বলতে গেলে প্রতিদিনই ছোট থেকে বড় নানান ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ উঠেছে অটোরিকশা চালকরা অনেক সময় খাম খেয়ালিভাবে ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের বিশেষ করে মহিলাদের সাথে খারাপ আচরণ করে।  উঠতি বয়সের ঢাকলকরা বিভিন্ন সময়ে স্কুল, কলেজের ছাত্রীদের সাথে ইভটিজিং করারও অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায় এবং স্থানীয় মানুষ অনেকটা ক্ষোভের সাথে জানান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের নেই কোন প্রশিক্ষণ বা লাইসেন্স। অবৈধভাবে পৌরসভার বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই তারা বনে গেছেন অটোরিকশা ড্রাইভার। আর এই ট্রেড লাইসেন্স এর কারনে দৈনিক শ্রমিক থেকে হয়ে গেছে অটোরিকশা ইজিবাইক চালক দিনমুজুর থেকে শুরু করে কিশোরা অটোরিকশা চালানোর কারণে দুঘটনার ঝুঁকি বেড়ে গেছে বহুলাংশে।

অথচ প্রশাসন দেখেও কেন যেন না দেখার ভান করছে। কেউ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে ভূক্তভোগিদের অভিযোগ। ফলে বেপরোয়া হয়ে পড়েছেন অটোরিকশা চালকরা। এতে অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ভোলা জেলায় ৭টি উপজেলায় কয়েক হাজারের ও অধিক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ইজিবাইক  চলাচল করছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয় ভোলা বিআরটি এ‍‍`র কর্মকর্তাদের একাদিক বার মুঠোফোনে কল করে তাদের কাউকে পাওয়া না গেলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আরিফুজ্জামান দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন উক্ত বিষয়টি গত আইনশৃঙ্খলা মিটিং আলোচনা হয়েছে, আমরা সিদ্বান্ত নিয়েছি যাতে এরকম যত্রতত্র পার্কিং এধরনের বিষয় গুলো না থাকে,সামনে জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচনের কারনে সংশ্লিষ্ট কৃতপক্ষের সাথে মিটিং টা করতে পারছিনা খুব দ্রুতই মিটিং করে আমরা একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আছাদুজ্জামান (ক্রাইম এ্যান্ড অপস্) কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সড়ক যানজট মুক্ত ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এইচআর

Link copied!