Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

পাহাড়ে সমলয়’ পদ্ধতিতে ৫০ একর জমিতে বোরো ধান চাষ

পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধি

পার্বত্যাঞ্চল প্রতিনিধি

ডিসেম্বর ২০, ২০২৩, ০৫:৫৯ পিএম


পাহাড়ে সমলয়’ পদ্ধতিতে ৫০ একর জমিতে বোরো ধান চাষ

কৃষিকাজে এখন আর সনাতন পদ্ধতি ব্যবহারের প্রয়োজন পড়েনা বললেই চলে। যন্ত্রপাতির সাহায্যেই প্রায় সব কিছু করা হয়।  ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে ট্রেতে বোরো ধানে বীজতলা তৈরী কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে টেকসই যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগের অংশ হিসেবে ‘সমলয়’ পদ্ধতি।

কৃষকরা মাঠে একসঙ্গে একই জাতের ধান, একই সময়ে যন্ত্রের মাধ্যমে রোপণ করতে পারবেন। ধান চাষে এ রকমের একটা কার্যকরী উপায় বের করেছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। পদ্ধতিটির নাম দিয়েছেন তারা ‘সমলয়’।প্রনোদনা কর্মসুচীর আওতায় মাটিরাঙ্গা উপজেলার  তবলছড়ি ইউনিয়ন এর সিংহপাড়ায় ৪ হাজার ৫০০ ট্রেতে বোরো ধানের বীজ বপন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকালে মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি ইউনিয়ন এর সিংহপাড়ায় ট্রেতে বীজতলা তৈরী কর্মসুচীর উদ্বোধন শেষে সুবিধাভোগী কৃষকদের সাথে মতবিনিময় সভায় সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডেজী চক্রবর্তী।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.আমির হোসেন এর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসিনা বেগম, মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সবুজ আলী, কৃষক মো. হায়দার আলী,কৃষক মো. আমির হোসেন ও কৃষক মো. জসিম উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সবুজ আলী বলেন, সমলয় ট্রে পদ্ধতিতে চারা টেনে তুলতে হয় না, তাই চারার শিকড় ছিঁড়ে না। ফলে শিকড় দ্রুত মাটি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে এবং গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে। ট্রে-তে চারা উৎপাদনে জমির অপচয় কম হয়। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। কৃষক ফসল একত্রে মাঠ থেকে ঘরে তুলতে পারেন।

সমলয়  পদ্ধতিতে  ৫০ একর জমিতে বোরো ধান চাষের জন্য ট্রে পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি, সার, বীজ, কীটনাশকসহ ফসল কাটা পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সকল খরচ বহন করবে সরকার। একজন কৃষক শুধুমাত্র জমি দিয়ে সহযোগিতা করছে। এ পদ্ধতি অবলম্বনে কৃষকেরা লাভবান হবেন বলে জানান তিনি। এতে ধানের উৎপাদন খরচ কমানোসহ শ্রমিক সংকট নিরসন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। কৃষকরা এবছর সমলয় চাষ পদ্ধতি শিখে আগামীতে নিজেরা এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করবে এবং অন্য কৃষকদের উৎসাহিত করবে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিস সুত্র জানায়, প্রনোদনা কর্মসুচীর আওতায় মাটিরাঙ্গা উপজেলার  তবলছড়ি ইউনিয়ন এর সিংহপাড়ায় ৪ হাজার ৫০০ ট্রেতে বোরো ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। সমলয় পদ্ধতিতে ৫০ একর জমিতে উপশী আফতাব বিএল ৭০ হাইব্রিড জাতের বোরো ধান চাষ করে ৭৩ কৃষক। এই বীজ ৫০ একর জমিতে রোপণ করা যাবে।

এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারা পরবর্তী ২৫দিনের মধ্যে রাইস ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে মাঠে রোপণ করা হবে। চারা রোপনের পাঁচ মাসের মাথায় ধান কাটা হয়। আধুনিক কৃষি যন্ত্রগুলো অল্প সময়ে অনেক বেশি কাজ করে। এগুলো পরিচালনার জন্য জনবল লাগে কম। ট্রে পদ্ধতিতে চারা টেনে তুলতে হয় না, তাই চারার শিকড় ছিঁড়ে না। ফলে শিকড় দ্রুত মাটি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে এবং গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে।

সিংহপাড়া ব্লকের কৃষক মো. আলী হায়দার বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরী বা চাষাবাদ পদ্ধতি আগে কখনো দেখিনি। প্রথমবারের মতো আমরা ৭৩জন কৃষক এ পদ্ধতিতে ৫০ একর জমিতে চাষাবাদ করছি। আশা করি ফলনও ভালো হবে। এ বছর ফলন ভালো হলে ভবিষ্যতে এ পদ্ধতির চাষাবাদ বাড়বে।কৃষক মো. আমির হোসেন বলেন, এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে শ্রমিকের মজুরি কম লাগবে। এতে ধানের উৎপাদন খরচ কমে যাবে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডেজী চত্রুবর্তী বলেন, সমলয় পদ্ধতিতে ট্রেতে ধান চাষে পাহাড়ে নতুন দ্বার উম্মোচিত।  বর্তমান সরকার কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে টেকসই যান্ত্রিকীকরণের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার একটি হচ্ছে  সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতি।এপদ্ধতিতে পাহাড়ে কৃষিতে নতুন দ্বার উম্মোচিত হয়েছে যেখানে একটি মাঠে  সকল কৃষক সবাই মিলে একসঙ্গে একই জাতের ধান একই সময়ে যন্ত্রের মাধ্যমে রোপণ করবেন।

এ পদ্ধতিতে বীজতলা থেকে চারা তোলা, চারা রোপণ ও ধানকর্তন সব প্রক্রিয়া যন্ত্রের সাহায্যে সমসময়ে সম্পাদন করা হবে। ফলে কৃষকের ধান চাষে সময়, শ্রম ও খরচ কম লাগবে। এ ক্ষেত্রে কৃষক লাভবান হবেন এবং কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ পদ্ধতির প্রবর্তন সহজ হবে বলে জানান তিনি।

এইচআর
 

Link copied!