Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি করে চলে সংসার

কালিহাতী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

কালিহাতী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

মার্চ ২৩, ২০২৪, ১২:৪৪ পিএম


হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি করে চলে সংসার
ছবি: আমার সংবাদ

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার মুড়ির চাহিদা দেশজুড়ে। পবিত্র রমজান মাসের ইফতারির রকমারি উপাদানের মধ্যে মুড়ি অত্যাবশ্যকীয়। মুড়ির চাহিদা বছরব্যাপী থাকলেও রোজার সময় এবং ঈদের আগে  উৎপাদন ও বিক্রি বহুগুণে বেড়ে যায়। ফলে মুড়ি ব্যবসায়ীরা বছরজুড়ে অপেক্ষায় থাকেন রমজান মাসের জন্য। বর্তমানে এখানকার মুড়ি তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ীদের দম ফেলার ফুরসত নেই।

জানা যায়, টাঙ্গাইলসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় মুড়ি সরবরাহ হয়ে থাকে জেলার কালিহাতী উপজেলা কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে। এখানকার উৎপাদিত  মুড়ির সুনাম দেশের বিভিন্ন স্থানে। এখানে দুইভাবে মুড়ি উৎপাদিত হয়, হাতে ভেজে ও মেশিনের সাহায্যে।

মুড়ি উৎপাদনকারী এলাকাগুলোর মধ্যে নারান্দিয়া শতাধিক বাড়িতে হাতে ভেজে মুড়ি উৎপাদিত হয়।

এ ছাড়া উপজেলার সিংহটিয়া, নগরবাড়ী, দৌলতপুর, লুহুরিয়া সহ প্রায় ১৫টি গ্রামের কয়েক শ পরিবার হাতে ভেজে মুড়ি তৈরি করে থাকে। একজন ব্যক্তি এক দিনে এক থেকে দেড় মণ চালের মুড়ি ভাজতে পারেন।প্রতি মণ চালে ২৪ থেকে ২৫ কেজি মুড়ি হয়। প্রতি কেজি মুড়ি পাইকারি ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং খুচরা ১০০- ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সিংহটিয়া গ্রামের অটোরিকশা চালক ইদ্রিস আলী বলেন, আমার  স্ত্রী সপ্না আক্তার (৩৫) সে বাড়িতে মুড়ি ভাজেন আর আমি অটোরিকশা চালিয়ে বাড়িতে আসার পর আমি নিজেও সপ্নাকে মুড়ি ভাজার কাজে সহযোগিতা করি। আগে ধান সিদ্ধ করে রোদে শুকানোর পর আবার সেই ধান মেশিনে মাড়াই করে মুড়ি ভাজার জন্যে চাল তৈরি করা হয়। পরে সেই চাল দিয়ে লবণজলের মিশ্রণে আগুনে তাপ সহ্য করে বিশুদ্ধ মুড়ি ভাজতে অনেক পরিশ্রম হয়।

পরিশ্রমের তুলনায় তেমনটা লাভ হয় না।’ আগের তুলনায় এখন অনেকেই ধান মাড়াই না করে বাজার থেকে চাল ক্রয় করে সেই চাউল দিয়ে মুড়ি ভাজা হয়।

সিংহটিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রী জরিনাকে সাথে নিয়ে ১২ বছর যাবত মুড়ি ভেজে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। ‘মুড়ি ভাজার প্রতি মণ ধান এক হাজার ৩০০-৪০০ টাকা। এক মণ ধানের মুড়ি ভাজতে খড়ি, লবণ, যাতায়াত ও ধান ভাঙানোর খরচ আরো ১৫০ টাকা।’ তবে পরিশ্রমের লাভ বেশির ভাগই চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। আশেপাশের এলাকার মধ্যে বল্লা হাট, পৌজান হাট, এলেঙ্গা হাট ও হামিদপুর হাটে মুড়ি  বিক্রি করা হয়। এবং  যাতায়াতব্যবস্থা ভালো থাকায় কালিহাতী, টাঙ্গাইল শহর, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, বগুড়া  ও গাজীপুরের মুড়ি সরবরাহ করা হয়।

আজাহার স্ত্রী বেদেনা (৪৫), মিনহাজের স্ত্রী ফাহিমা (৪৩) এবং মোতালেব স্ত্রী  সাজেদা (৩০) বলেন, আমাদের ছেলে -মেয়ে ও সংসার সামলিয়ে প্রতিদিন মুড়ি ভাজার কাজ করি। বিভিন্ন এলাকায় থেকে মানুষ চাউল এনে দেয় আমাদের কাছে হাতে  মুড়ি ভাজার জন্যে প্রতি কেজি চাউলের মুড়ি ভাজা জন্য খরচ নেওয়া হয় ১২০-১৩০ টাকায়। একাধিক ব্যক্তিরা আরো জানা  হাতে ভাজা মুড়ির স্বাদই আলাদা।

পাইকড়া ইউনিয়নের সিংহটিয়া গ্রামের অনন্ত মোদক বলেন, মেশিনের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৪০-৫০ মন চালের মুড়ি ভাজাতে তিনজন লোক লাগে। মুড়ি প্যাকেট জাত করে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি বিক্রি করা হয়। তিনি আরো বলেন, আর প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না হাতে ভাজা মুড়ি উৎপাদনকারী।

কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহাদাত হুসেইন জানান,হাতে ভাজা মুড়ি প্রস্তুতের কাজে যারা নিয়োজিত তাদের সাথে কথা বলেছি সরেজমিন পরিদর্শন করে। তাদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অন্য কোন সাহায্য সহযোগিতা দরকার হলে আমরা করার চেষ্টা করব।

এআরএস

Link copied!