Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫,

অপরিপক্ব ফলে সয়লাব বরিশালের বাজার

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো

মে ১৯, ২০২৫, ০৪:৪৪ পিএম


অপরিপক্ব ফলে সয়লাব বরিশালের বাজার

জ্যৈষ্ঠ মাস মানেই মিষ্টি মৌসুমি ফলের সমাহার। তাই একে ‘মধু মাস’ও বলা হয়। কিন্তু এ মাসে বরিশালের বাজারগুলোতে পরিপক্ব হওয়ার আগেই ভরে উঠেছে অপরিপক্ব আম, কাঁঠাল, লিচুসহ নানা ফল।

এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে অপরিপক্ব ফল বাজারে ছাড়ছে। ফলে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। চিকিৎসকরা বলছেন, এসব কৃত্রিমভাবে পাকানো ফল খেয়ে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ছে। অথচ প্রশাসনের দৃষ্টি নেই বললেই চলে।

বরিশালের বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে রঙিন, আকর্ষণীয় আম, কাঁঠাল, লিচু সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এসব ফলের রঙ দেখেই আকৃষ্ট হচ্ছেন ক্রেতারা। কিনে নিয়ে বাড়ি ফেরার পর কাটতেই বোঝা যাচ্ছে—ফলটি ভেতরে একেবারে কাঁচা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এভাবে অপরিপক্ব ফলকে কেমিক্যাল দিয়ে কৃত্রিমভাবে পাকানো হচ্ছে। আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে—প্রায় সব ফলেই ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ইথিলিন গ্যাসসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ।

বরিশালের পোর্ট রোড এলাকার ফলের আড়তগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, টসটসে আমগুলো হাতে নিলেই উঠে আসছে সাদা পাউডারের প্রলেপ। ফল রাখা হয়েছে প্লাস্টিকের ঝুড়িতে, কেমিক্যালে মোড়া অবস্থায়। এখান থেকেই প্রতিদিন এসব ফল ছড়িয়ে পড়ছে জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে।

এক ফল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “মৌসুমের শুরুতে দাম বেশি থাকে। তখন মুনাফা বেশি হয়। কিন্তু অপরিপক্ব ফল স্বাভাবিকভাবে পাকতে দিলে অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই কেমিক্যাল দিয়ে পাকাতে বাধ্য হচ্ছি।”

ক্রেতারা বলছেন, বাজারের ফলগুলো দেখতে যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, খাওয়ার সময় আতঙ্ক থেকেই যায়—‘এই ফল কি রাসায়নিক দিয়ে পাকানো?’

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড আর্দ্রতার সংস্পর্শে এলে অ্যাসিটিলিন গ্যাস উৎপন্ন করে। এটি দ্রুত ফল পাকায়, কিন্তু শরীরে গেলে ত্বকে জ্বালা, শ্বাসকষ্ট, পেটের সমস্যা, এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।

এ বিষয়ে বরিশাল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, “বাজারে কেমিক্যালযুক্ত ফল রয়েছে—এমন অভিযোগ আমরা শুনেছি। যদিও কেমিক্যাল পরীক্ষা আমাদের দায়িত্ব নয়, তারপরও আমরা শিগগিরই বাজারে অভিযান চালাব।”

তবে বিএসটিআই বরিশাল অফিসের উপপরিচালক মো. আব্দুল হান্নান বলেন, “আমাদের দায়িত্ব কেবল মান নিয়ন্ত্রণ এবং ওজন পরিমাপ। ফলে কেমিক্যাল আছে কি না, সেটা দেখা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কাজ।”

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বরিশাল অফিসের উপপরিচালক এস.এম. মাহবুব আলম বলেন, “ফল পরীক্ষা করার মতো যন্ত্র কিংবা জনবল আমাদের নেই। প্রশাসনিক ক্ষমতাও সীমিত। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করব।”

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বরিশাল জেলার অফিসার গোলাম রাব্বি বলেন, “আমাদের দপ্তরে ফল পরীক্ষার উপযুক্ত কীট বা যন্ত্র নেই। তাই সতর্কতা ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।”

সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—যারা কেমিক্যাল দিয়ে ফল পাকিয়ে বাজারজাত করছে, তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? তারা ফলে নয়, মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছে বিষ! এই চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও উঠেছে সর্বত্র।

ইএইচ

Link copied!