জেলা প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ
মে ২৫, ২০২৫, ০৫:৪৪ পিএম
জেলা প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ
মে ২৫, ২০২৫, ০৫:৪৪ পিএম
মানিকগঞ্জে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানোর অভিযোগে গ্রাম্য সালিশে অভিযুক্ত সামসুল হককে (৫৫) শারীরিক হেনস্তা ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। স্থানীয় এক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতার সভাপতিত্বে এই সালিশ অনুষ্ঠিত হয়।
ঘটনার পর নির্ধারিত সময়ে জরিমানার টাকা পরিশোধ না করে, উল্টো ভুক্তভোগী পরিবারকে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
ভুক্তভোগী কিশোরী সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে মায়ের সঙ্গে খালার বাড়িতে বেড়াতে আসে। তার বাবা রাজধানীতে রিকশা চালান। পারিবারিক অস্বচ্ছলতা ও দাম্পত্য টানাপড়েনের কারণে মেয়েকে নিয়ে বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন মা।
চলতি মাসের ১২ তারিখ (সোমবার) দুপুরে পাশের বাড়ির সামসুল হক, সম্পর্কিত দাদা পরিচয়ে, কিশোরীকে পান বানানোর কথা বলে ফাঁকা ঘরে নিয়ে যান। সেখানে তিনি কিশোরীর সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করার চেষ্টা করেন। কিশোরী কান্না শুরু করলে তিনি পালিয়ে যান।
পরে ঘটনাটি পরিবারের কাছে জানায় কিশোরী। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়ভাবে সালিশির মাধ্যমে মীমাংসার উদ্যোগ নেয়া হয়।
১৩ মে রাত সাড়ে ৯টায় আটিগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত আব্দুল হাকিম লর্ডের ছেলে সোহেল রানার বাড়িতে সালিশ বসে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সালাম ফকির (৭০) সালিশের সভাপতি হন।
সালিশে আরও উপস্থিত ছিলেন- সোহেল রানা (৪০), বাদল ফকির (৫০), গ্রাম পুলিশ সাখাওয়াত হোসেন (৪৮), মুশতাক আহমেদ (৪০), শফিকুল ইসলাম টুলু (৬০), নিয়ন খাঁ (৫৫), আব্দুস সামাদ (৫০), মো. ইউনুস (৫৫) প্রমুখ।
রাত দেড়টা পর্যন্ত চলা এই সালিশে সামসুল হক দায় স্বীকার করলে তাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয় এবং এক লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়। জরিমানা সাত দিনের মধ্যে পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়।
তবে অভিযুক্তের পরিবার পরে জরিমানার টাকা না দিয়ে, উল্টো ভুক্তভোগী পরিবারকে ভয়ভীতি দেখায় এবং এলাকা ছাড়ার হুমকি দেয়।
অভিযুক্ত সামসুল হকের মেয়ে অঞ্জনা বেগম (২৫) বলেন, “তুচ্ছ একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে আমাদের বাবাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। শুরুতে বলেছিলাম—ঘটনা সত্য হলে মেডিকেল টেস্ট হোক। কিন্তু তারা তা না করে সালিশে বসে ৪০ হাজার টাকা আগেই নিয়ে নেয় এবং পরে আবার এক লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করে।”
অভিযুক্তের ভাগ্নে অনিক মাহমুদ বলেন, “সালিশে যা সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা আমরা মেনে নিয়েছিলাম। এরপরও তারা ভয় দেখাচ্ছে, বলছে টাকা না দিলে খারাপ ফল ভোগ করতে হবে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সালাম ফকির বলেন, “সালিশে শুনেছি সামসুল কিশোরীকে জড়িয়ে ধরেছে। এক লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত হয়। তবে পরবর্তীতে কী হয়েছে, জানি না। আমি আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই।”
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ বলেন, “ধর্ষণচেষ্টার মতো স্পর্শকাতর ঘটনায় সামাজিকভাবে মীমাংসার সুযোগ নেই। এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত চলছে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ইএইচ