Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ০২ জুন, ২০২৫,

বরিশালে জমে উঠেছে অনলাইন পশুর হাট

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো

আরিফ হোসেন, বরিশাল ব্যুরো

মে ৩০, ২০২৫, ০৩:২২ পিএম


বরিশালে জমে উঠেছে অনলাইন পশুর হাট

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে বরাবরের মতো এবারও বরিশালে জমে উঠেছে অনলাইন পশুর হাট। তবে স্থানীয় ক্রেতার চেয়ে ঢাকার ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

খামারিরা জানাচ্ছেন, এ বছর অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিক্রি বাড়ায় কোরবানির পশু বিক্রিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে।

বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ৯১ হাজার ১৫৭টি। বিপরীতে পশু রয়েছে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫৮টি—অর্থাৎ প্রায় ৬৬ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানিয়েছে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর।

অনলাইনেই আগাম বিক্রি

বরিশালের বিভিন্ন খামারে ইতোমধ্যেই অনলাইনে পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। কোরবানির দুই দিন আগে থেকেই গরু ক্রেতাদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে। 

বাবুগঞ্জ উপজেলার নতুনহাট এলাকার এইপি অ্যাগ্রো খামারের ব্যবস্থাপক রাফিউর রহমান অমি জানান, খামারে ‘দেশী’, ‘দেশাল’ ও ‘শাহিওয়াল’ জাতের আড়াই শতাধিক গরু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫% গরুই ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আগাম বিক্রি হয়ে গেছে।

গরুগুলো বিক্রি হয়েছে কেজি দরে ‘লাইভ ওয়েট’ অনুযায়ী। ১০০ থেকে ৫০০ কেজি ওজনের গরু ৪৭০ টাকা কেজি, আর ৫০০ কেজির বেশি ওজনের গরু বিক্রি হয়েছে ৪৯০ টাকা কেজি দরে। খামারের বড় সাইজের গরুর মধ্যে ‘রাজা’ ও ‘বাদশা’ নামের দুটি গরু সাড়ে ৭০০ কেজি ওজনের ছিল, যেগুলো বিক্রি হয়েছে মোট সাড়ে ১১ লাখ টাকায়।

বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে গরু

বরিশাল নগরীর লাকুটিয়া সড়কের সাদ-সাইফ অ্যাগ্রো খামারে দেড়শ গরুর মধ্যে ১০০টি গরু ইতোমধ্যে বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক গরু ঢাকার ক্রেতারা কিনেছেন। খামার থেকে গরু কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের খাজনা দিতে হয় না, গরু রাখার সুবিধাও মেলে—এগুলোই আকর্ষণের প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন মো. সাইদ।

তারা জানিয়েছে, বরিশাল নগরীতে গরু পৌঁছে দেওয়া হবে সম্পূর্ণ ফ্রিতে, আর বাইরের জেলার জন্য মাত্র এক হাজার টাকা পরিবহন খরচ নেয়া হবে।
চাহিদার চেয়ে পশু বেশি

বরিশাল বিভাগে এবার পশুর চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক বেশি। বিভাগের ছয় জেলার চাহিদা ও সরবরাহের পরিসংখ্যান নিচে তুলে ধরা হলো:

  •    পটুয়াখালী: চাহিদা ১,২৮,১৮৮টি, সরবরাহ ১,৩৩,৩৭১টি (উদ্বৃত্ত ৫,১৮৩টি)
  •     বরিশাল: চাহিদা ১,১০,৭৭৭টি, সরবরাহ ১,৪৭,৬৭৪টি (উদ্বৃত্ত ৩০,৫৯৭টি)
  •     ভোলা: চাহিদা ৯০,২৫৩টি, সরবরাহ ১,০২,৭৭৯টি (উদ্বৃত্ত ১২,৫২৬টি)
  •     বরগুনা: চাহিদা ৩৫,৯৯৯টি, সরবরাহ ৪২,৪৯০টি (উদ্বৃত্ত ৬,৪৯১টি)
  •     পিরোজপুর: চাহিদা ১৮,৯৪৫টি, সরবরাহ ২৩,৯৩০টি (উদ্বৃত্ত ৪,৯৮৫টি)
  •     ঝালকাঠি: চাহিদা ১২,৬৯৫টি, সরবরাহ ১৩,৬১৪টি (উদ্বৃত্ত ৯১৯টি)

এর মধ্যে গরুর চাহিদা রয়েছে ৩,২৫,৯২৮টি, মহিষ ৯,৪৩০টি, ছাগল ১,১০,১৯৩টি, ভেড়া ১২,২৮২টি ও অন্যান্য ২৫টি।

হাটের সংখ্যা ও প্রস্তুতি

বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, “গত বছরের কোরবানির পশু সংখ্যার তুলনায় এবার তিন থেকে পাঁচ শতাংশ বেশি ধরে চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাস্তবে আরও বেশি পশু রয়েছে, কারণ অনেক গৃহস্থের লালন-পালিত পশু হিসেবের বাইরে থাকে।”

তিনি আরও বলেন, “বরিশালের গরুর মাংসের স্বাদ ভালো হওয়ায় অন্যান্য জেলায় এখানকার গরুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।” বরিশাল বিভাগে এবছর মোট ২৯৬টি কোরবানির পশুর হাট বসবে। এর মধ্যে ভোলায় ৯৩টি, বরিশালে ৭০টি, পটুয়াখালীতে ৪৫টি, বরগুনায় ৪০টি, ঝালকাঠিতে ২৮টি এবং পিরোজপুরে ২০টি।

ইএইচ

Link copied!