Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫,

কর্মস্থলে ফেরার যুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চলের কর্মজীবীরা

আরিফ হোসেন,বরিশাল ব্যুরো 

আরিফ হোসেন,বরিশাল ব্যুরো 

জুন ১১, ২০২৫, ০৬:৩৪ পিএম


কর্মস্থলে ফেরার যুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চলের কর্মজীবীরা
  • গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া
  • বাস-লঞ্চ থেকে শুরু করে থ্রিহুইলার রিকশা সর্বত্র এই নৈরাজ্য
  • লঞ্চে যাত্রীদের চাপ দ্বিগুণ, নেই পা ফেলার জায়গা
  • লঞ্চ-বাসে যাত্রীদের গাদাগাদি
  • স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা সংক্রমণ ঘটার আশঙ্কা

সরকার থেকে বারবার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হলেও তাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে সব ধরনের পরিবহন-মালিক শ্রমিক জোট। বাস-লঞ্চ থেকে শুরু করে থ্রিহুইলার রিকশা সর্বত্র এই নৈরাজ্য সমানে চলছে বরিশাল শহর থেকে শুরু করে গোটা দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ঈদ বা কোরবানিকে কেন্দ্র করে দুই থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে পথে পথে। অতিরিক্ত ভাড়ায় দিশেহারা হচ্ছে দিন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। বেশি ভাড়া না দিতে না চাইলে হতে হয় হয়রানি। 

তারপরেও ভাড়া নৈরাজ্য থামছে না যেমনটি বলছিলেন বরিশাল থেকে মতিঝিল যাওয়া বাসে যাত্রী সাব্বির। তিনি ৪শ’ টাকার বাস ভাড়া ৭শ’ টাকা ভাড়া দিতে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে। কারণ কোরবানি ঈদের চার দিনের ছুটি শেষ। স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারকে ছেড়ে রুজির নিশ্চয়তায় বাড়তি ভাড়া গুণে কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে সাব্বিরের মত হাজার হাজার মানুষকে।

একটি বেসরকারি প্লাস্টিক কোম্পানিতে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকুরি করেন করিম। গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার র্কীতিপাশা গ্রামে। করিম পেশায় দিনমজুর। থাকেন পুরোনো নয়াপল্টনে। গত ৬ জুন ঈদের ছুটিতে পরিবার পরিজনদের সাথে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি আসেন। 

ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরতে ঝালকাঠি বাসের টিকিট না পাওয়ায় বুধবার (১১জুন) ঝালকাঠি থেকে বরিশাল বাস র্টামিনালে আসেন। এসে এখানে দেখতে পান বাসে দীর্ঘ লাইন। ঢাকা সায়েদাবাদের গাড়িতে ভাড়া জিজ্ঞেস করলে বাসের লোকের কাছে। তখন বাসের লোক বলেন ভাড়া ৭০০ টাকা। তখন করিম বললেন কেন ভাই ভাড়া তো ৫শ’ টাকা। ৭শ’ টাকা কেন চাচ্ছেন। তখন করিমকে বাসের হেলপার বলেন ঢাকা যাওয়া লাগবে না। আপনি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রতিনিয়ত ভাড়া নেয়া হয় ৫০০ টাকা। আর ঈদের নামে অতিরিক্ত ভাড়া। টিকিটে লেখা ৫০০ টাকা । নেয়া হচ্ছে ৭০০ টাকা। ঈদের চার দিন পরে অর্থাৎ ১১ জুন অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ঢাকা ফেরত যাচ্ছেন। 

শুধু করিমই নয় রাজধানী ছেড়ে গ্রামে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন জায়গায় এসেছেন কয়েক হাজার কর্মজীবী মানুষ। তবে ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে এই কর্মমুখী মানুষ গুলো।

জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঈদের আগে দফায় দফায় বলেছিলেন এবারে ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হলে আইনের আওতায় আনা হবে। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত কতগুলো পরিবহণ মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বা আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এর কোন সঠিক তথ্য মেলেনি। 

এই নৈরাজ্য কেবল বরিশালেই নয় গোটা দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে চলছে। ঈদে ঘরমুখী হতে এবং ঢাকায় যেতে অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে কর্মজীবীদের। কেবল ভাড়া বেশি নয় যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে। সবমিলে অতিরিক্ত ভাড়াসহ নানা দুর্ভোগ শিকার ভোগ করেই ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীতে ফিরছে কর্মজীবী মানুষ।

সরেজমিনে বুধবার বিকেলে বরিশাল লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ছুটি শেষে আবারও তারা কর্মস্থলে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। বরিশাল নদীবন্দর টার্মিনালে রাজধানীমুখী মানুষের চাপ বেড়েছে দ্বিগুণ। লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী উঠছে। যা দেখার কেই নেই বলেই চলে।

এদিকে নৌ-পথে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকায় ফেরা অধিকাংশ যাত্রী ছিল লঞ্চে। লঞ্চের ডেক থেকে শুরু করে কেবিন এমনকি কেবিনের সামনের গলিপথেও মানুষের ভিড় দেখা গেছে। টার্মিনালের পল্টুনে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।

অর্থাৎ আগামী ১৫ জুন থেকে সরকারি অফিস শুরু হবে। তাই আগে ভাগেই ঢাকায় ছুটছেন অনেকে। 

এদিকে বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ ফের বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাত নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু যাত্রীদের যে চাপ দেখা যাচ্ছে তাতে দুর্ভোগের পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

সানাউল্লাহ নামের বরিশালের এক যাত্রী বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মরার ভয় নেই। আল্লাহ যেদিন মৃত্যু লেখে রেখেছেন সেদিন মারা যাব। বুধবার বেসরকারি অফিস খুলেছে। একদিন ছুটি বেশি নেই নাই। তাই বাধ্য হয়েই বুধবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। লঞ্চ যাত্রীদের চাপ বেশি। লঞ্চে পা রাখার জায়গা নেই। কোনোভাবে ডেকের এককোণে একটু বিছানা চাদর বিছিয়ে নিয়েছি। কার বৃহস্পতিবার অফিস করতে হবে। 

একইভাবে, বরিশাল নদী বন্দরের লঞ্চ টার্মিনালেও প্রতিবারের মতো এবারও উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। প্রতিযোগিতা চলছে কে আগে লঞ্চে উঠবে এবং ডেকে জায়গা দখল করবে। প্রতিটি লঞ্চেই যাত্রীর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ছিল। যাত্রীরা বলেন, ঈদের ছুটি শেষে অতিরিক্ত যাত্রী হয়েই তাদের কর্মস্থলে ফিরতে হয়। তবে যাত্রীর চাপ আরও দুই-তিন দিন থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, বর্তমানে বরিশাল থেকে চারটি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীর চাপ বাড়লে লঞ্চ বাড়ানো হবে। তিনি আরও বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে লঞ্চের স্পেশাল সার্ভিস গত ৩ জুন থেকে শুরু হয়ে ১৪ জুন পর্যন্ত চলবে। বরিশাল সদর নৌ-থানার ওসি সনাতন চন্দ্র সরকার বলেন, নদী বন্দরে যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌ-পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে।

ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বরিশালের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের কাউন্টারগুলো ও নদী বন্দরের লঞ্চ টার্মিনালে নিয়মিত যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “সড়কে যেন কোন ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল করতে না পারে সেদিকে আমাদের কঠোর নজর রয়েছে।” পাশাপাশি, পথচারী এবং বাস-লঞ্চের যাত্রীদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে কথা হলে পুলিশ কমিশনার বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার  হয়েছে এরকমের কোন যাত্রী অভিযোগ করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত বাস ও টিকিটি কাউন্টারকে আইনের আওতায় আনা হবে।

বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, “লঞ্চ যাতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছাড়তে না পারে, সেজন্য বরিশাল জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট টিমের পাশাপাশি নৌ-বন্দর কর্তৃপক্ষ সার্বিক কাজ করে যাচ্ছে।”

ইএইচ

Link copied!