বরিশাল ব্যুরো
জুন ১২, ২০২৫, ০৭:০২ পিএম
বরিশাল ব্যুরো
জুন ১২, ২০২৫, ০৭:০২ পিএম
দিন যত যাচ্ছে, ততই ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বাড়ছে বরিশাল বিভাগে। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অসংখ্য রোগী। এর মধ্যে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বেশ কিছু সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। তবে বেড সংকটের কারণে অনেক রোগীকে মেঝেতে বসে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
বাড়ছে আতঙ্ক, বাড়ছে মশার উপদ্রব
ডেঙ্গুর প্রকোপের পাশাপাশি নগরজুড়ে মশার উপদ্রব বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন নগরবাসী। অনেকেই বলছেন, আগে মশার ওষুধ ছিটানো হলেও এখন তা দেখা যায় না। সন্ধ্যার পর বাড়ছে মশার উপদ্রব। ফলে বাড়ছে উদ্বেগ।
সিটি কর্পোরেশন বলছে, মশক নিধনে তারা নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তবে নগরবাসীর দাবি, নজরদারি ও ওষুধ প্রয়োগে আরও তৎপর হতে হবে।
হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক জানান, গত মাসের মাঝামাঝি থেকে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে হাসপাতালের প্রতিটি ইউনিটেই ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে এবং রোগীদের ওষুধসহ সব ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
বরিশালের উজিরপুর থেকে আসা হাবিবুল নামে এক রোগী জানান, “প্রথমে প্রচণ্ড জ্বর ও শরীর ব্যথা ছিল। টেস্ট করার পর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরে হাসপাতালে ভর্তি হলে ডাক্তার ডেঙ্গু ওয়ার্ডে পাঠান।”
২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু তিনজনের, আক্রান্ত ১২৪ জন গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগের দুইটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ছয়টি সদর হাসপাতাল এবং উপজেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১২৪ জন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মৃতদের মধ্যে রয়েছেন- ইসরাত জাহান (২০), পিরোজপুরের নেছারাবাদ এলাকার বাসিন্দা (শের-ই-বাংলা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন), চাঁন মিয়া (৭৫) ও গোশাই দাস (৮৫) — বরগুনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এ পর্যন্ত ৭ মৃত্যু, বরগুনায় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত
চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৪৮৬ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩২৪ জন। এ পর্যন্ত বিভাগে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে সাতজনের, যার মধ্যে পাঁচজনই বরগুনার বাসিন্দা।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, “বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা ও মশার বিস্তার বাড়ে। তবে এবার বৃষ্টি ছাড়াও ডেঙ্গুর প্রভাব দেখা যাচ্ছে, যার মূল কারণ জনসচেতনতার অভাব।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারি হাসপাতালে যত রোগী ভর্তি হয়েছে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। কারণ অনেকেই বেসরকারি হাসপাতালে বা বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন, যাদের তথ্য আমাদের কাছে নেই।”
ডা. মণ্ডল বলেন, “সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা। বাড়ির চারপাশে জমে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে। পরিষ্কার রাখতে হবে ফুলদানির পানি, এসির ট্রে, টব, ছাদ ও ড্রেন। আর জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”
নগরবাসী, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে মত দেন সংশ্লিষ্টরা। বরিশালবাসী চাইছে, অবিলম্বে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করা হোক এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
ইএইচ