রাইসুল ইসলাম লিটন, টাঙ্গাইল
জুন ১২, ২০২৫, ০৭:৩৫ পিএম
রাইসুল ইসলাম লিটন, টাঙ্গাইল
জুন ১২, ২০২৫, ০৭:৩৫ পিএম
বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে যমুনা নদীর তীব্র ভাঙনে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবার ও বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে দক্ষিণ গয়লা হোসেন দাখিল মাদ্রাসা, ডেকিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ গয়লা হোসেন নূরানি মাদ্রাসা, দক্ষিণ গয়লা হোসেন জামে মসজিদ, দক্ষিণ গোলাশন কবরস্থান এবং আব্দুল মান্নান সেতুসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৫৩ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ গয়লা হোসেন দাখিল মাদ্রাসা যমুনা নদীর ভাঙনে ইতিপূর্বে অন্তত ১৪ বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে এটি ওমরপুর এলাকায় অবস্থিত হলেও আবারও ভাঙনের মুখে পড়েছে।
একইভাবে ডেকিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও প্রায় ১৫-১৬ বার ভাঙনের কবলে পড়ে স্থান পরিবর্তন করেছে।
ভাঙনের শিকার একাধিক বাসিন্দা জানান, একসময় যাদের শত শত বিঘা জমি ছিল, তারা আজ পরের জমিতে ঠাঁই নিচ্ছেন। ওমরপুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, “ভিটেমাটি হারিয়ে অনেক কষ্টে এখানে বাড়ি করেছি। এবার যদি ভেঙে যায়, তাহলে কোথায় যাব জানি না। জমির মালিকরা এখন আর জমি দিতে চায় না।”
আবুল হোসেন নামের আরেকজন বলেন, “আমার পরিবার ১৩ বার যমুনার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন আর ঘর সরানোর উপায় নেই। অনেকেই অন্যের জমিতে সামান্য লাভের ভিত্তিতে বসবাস করছে।”
ওমরপুরের আরও এক বাসিন্দা আইয়ুব আলী জানান, “পানাকুড়া, কেশবমাইজাল, চরপৌলি, নয়াপাড়া, তেঁতুলিয়া, রশিদপুরসহ প্রায় ৩০-৩৫টি গ্রাম মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। ১৯৮৮ সাল থেকে আমি যমুনার ভয়াবহতা দেখছি।”
স্থানীয়রা জানান, তারা প্রতিবছরই ভাঙন প্রতিরোধের দাবিতে মানববন্ধন করে থাকেন। এবছরও এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন।
কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জানান, “যমুনার ভাঙনে অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবার ও বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে। প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেললে ভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব।”
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, “ভাঙন রোধে আমরা দ্রুত প্রতিরক্ষা কাজের পরিকল্পনা নিচ্ছি। ইতোমধ্যে বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে অনুমোদন পাওয়া যাবে।”
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা আক্তার বলেন, “ভাঙন কবলিত ইউনিয়নগুলোর বিষয়ে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে।”
স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আরও বহু পরিবার ও প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এলাকায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
ইএইচ