বরিশাল ব্যুরো
জুন ১৪, ২০২৫, ০৩:২৩ পিএম
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া এলাকায় একটি মেলার প্যান্ডেল, যাত্রা মঞ্চ ও জুয়ার আসরে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ‘অনৈতিক কার্যকলাপ’ ও ‘অশ্লীলতার’ অভিযোগ তুলে ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে এ হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল আলম জানান, প্রায় এক মাস আগে বৈশাখী মেলার অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়।
আয়োজকরা নতুন করে ‘ঈদ আনন্দ মেলা’র জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলেন। তবে তার আগেই শুক্রবার (১৩ জুন) দিবাগত রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে একদল লোক মেলার মাঠে হামলা চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে।
তিনি আরও জানান, হামলাকারীরা পাশের একটি ভবনেও হামলা চালায়, যেখানে যাত্রার শিল্পীরা অবস্থান করতেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই হামলাকারীরা সরে পড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পহেলা বৈশাখ থেকে মাসব্যাপী বৈশাখী মেলার আড়ালে যাত্রা ও পুতুলনাচের নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’ এবং রাতভর জুয়ার আয়োজন করা হতো। স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে মেলার অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ রেখে শুধু যাত্রা চালানো হচ্ছিল।
চলতি মাসের শুরুতে একই স্থানে ঈদ আনন্দ মেলার আয়োজনের জন্য আবেদন করা হয়, যার অংশ হিসেবে পুতুলনাচসহ বিভিন্ন স্টল নির্মাণ করা হয়। তবে 'বরিশাল সোসাইটি' নামক একটি সংগঠন জেলা প্রশাসনের কাছে এই মেলার অনুমতি না দেওয়ার জন্য পাল্টা আবেদন করে। এ নিয়ে এলাকায় কয়েকদিন ধরে চরম উত্তেজনা চলছিল।
শুক্রবার রাতে তৌহিদী জনতার ব্যানারে দেড় শতাধিক ব্যক্তি লাঠিসোটা নিয়ে এসে নির্মাণাধীন স্টল ও যাত্রা প্যান্ডেলে হামলা চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত তারা ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইব্রাহিম বিশ্বাস বলেন, “বৈশাখী মেলা বন্ধ হলেও রাতে যাত্রা গানের আয়োজন চলছিল। শুক্রবার রাতে একদল লোক এসে সবকিছু ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।”
মেলা কমিটির সভাপতি ও বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সিজন সিকদার বলেন, “বৈশাখী মেলার পর শুধুমাত্র যাত্রা চলছিল। ঈদ আনন্দ মেলার অনুমতি না পাওয়ায় দুই দিন আগে আমরা সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিই। এরপরও রাতে কিছু উশৃঙ্খল লোক হামলা চালায়।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “হামলাকারীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন স্থানীয় জামায়াতের কয়েকজন ব্যক্তি, যারা পূর্বে মেলা কমিটির কাছে চাঁদা দাবি করেছিলেন। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় ‘অশ্লীলতা’র অভিযোগ তুলে পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে।”
তবে চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে জামায়াতে ইসলামী বাবুগঞ্জ উপজেলা শাখার নেতারা জানান, “এই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ।”
বাবুগঞ্জ থানার ওসি জানান, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইএইচ