ফেনী প্রতিনিধি
জুলাই ১১, ২০২৫, ০৬:০৯ পিএম
ফেনীতে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের ফলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ফুলগাজী, পরশুরামের পর এবার ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার শতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অনেক এলাকায় বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক।
মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ২১টি স্থানে ভেঙে যাওয়ায় নতুন নতুন এলাকায় পানি ঢুকছে। এতে ৪ উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বন্যা দুর্গত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অংশ নিয়েছে।
শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টি না থাকায় নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পরশুরামে পরিস্থিতির উন্নতি শুরু হলেও ফুলগাজী ও আশপাশের নিম্নাঞ্চলে পানি স্থির অবস্থায় রয়েছে।
তবে ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলায় নতুন করে গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। ফেনী-ফুলগাজী এবং ফেনী-ছাগলনাইয়া আঞ্চলিক সড়কের কিছু স্থানে এখনও পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, চার উপজেলায় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের খাদ্য সহায়তায় প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে।
শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর, রাধানগর ও পৌর এলাকার অন্তত ১০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। ফেনী সদর উপজেলার কাজীরবাগ, মোটবী, ছনুয়া ও ফাজিলপুর ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় বসতবাড়ি ডুবে গেছে, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে এবং কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৫৮.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টি কমায় পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদার বলেন, মুহুরী নদীর পানি বর্তমানে বিপদসীমার দুই মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির চাপ কমে যাওয়ায় নতুন করে বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা নেই। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ভাঙনস্থানে মেরামত কাজ শুরু হবে।
ফেনীর জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “পরশুরামে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, ফুলগাজীতেও কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে ছাগলনাইয়ার প্রধান সড়ক দিয়ে পানি গড়িয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “বৃষ্টিপাত না হলে আশা করছি আজকালের মধ্যেই বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।”
ইএইচ