Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

করোনাকালীন সুবিধা প্রত্যাহার 

খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা

রেদওয়ানুল হক

জুন ৫, ২০২২, ০৮:৫৪ পিএম


খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা
  •  মার্চ শেষে খেলাপির পরিমাণ এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা
  •  রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে মোট ঋণের ২০ শতাংশই খেলাপি
  • খেলাপি বাড়ছে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকে
  •  সুশাসনের অভাবে বাড়ছে খেলাপি : ড. জাহিদ, সাবেক অর্থনীতিবিদ, বিশ্ব ব্যাংক


আর্থিক খাতের মহামারি খেলাপি ঋণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে। নানা সুযোগ দেয়ার পরও নিয়মিত বাড়ছিল খেলাপির অঙ্ক। করোনাকালীন সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়ায় গত তিন মাসে (ডিসেম্বর-মার্চ) এটি এক লাফে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি বেড়ে গেছে। যা শতকরা হিসাবে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন এসব তথ্য উঠে এসেছে।  
 
তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। যা গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা ৮৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে আরো ১০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। 

অন্যদিকে, গত মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ২৯ হাজার হাজার ৭৩৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ পরিমাণ গত বছরের মার্চ পর্যন্ত ছিল ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ঋণের স্থিতি বেড়েছে ১৮ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। 

খেলাপি ঋণের সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ঋণের কিস্তিতে সুবিধা (মরিটোরিয়াম) তুলে দেওয়ার পরে খোলাপি ঋণ দ্রুত বেড়ে গেছে। কারণ করোনার দুই বছরে খেলাপি খুব একটা দেখানো যায় নি। যদিও খেলাপি ছিল। আর সবচেয়ে বেশি খেলাপি হলো সরকারি ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর। মুষ্টিমেয় কয়েকটি সরকারি ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকের বেশি। বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ঋণ নেয় এসব ব্যাংক থেকে। কারণ ফেরত দেওয়ার চাপ কম এবং বিশেষ উপায়ে ম্যানেজ করার সুযোগ বেশি। তারা ঋণ ফেরত দেন না। আর ব্যাংকের পর্ষদ এসব ঋণ প্রদানে প্রশ্রয় দেয়। অথচ পর্ষদের কাজ হলে এ ধরণের ঋণ দিতে খবরদারি করা। ব্যাংকের প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করা। 

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো পর্ষদের অনুমিত ছাড়া বড় বড় ঋণ দিচ্ছে ও খেলাপি হচ্ছে। যার মূলে রয়েছে ব্যাংকগুলোতে সুশাসনের অভাব। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ‘খেলাপিকে ব্যবসায়িক মডেলে রূপ দিচ্ছে’ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়িরা। তারা ঋণ পরিশোধ না করে মামলার দিকে যাচ্ছেন। কাল ক্ষেপন করছেন। ব্যাংকও ঋণ অবলোপন করছে। আর টাকা ভাগাভাগির নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে।’ 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালের পুরো সময় ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নীতিসুবিধার কারণে ওই সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করেও কেউ খেলাপি হননি। এর পর ২০২১ সালেও শর্ত সাপেক্ষে এ সুবিধা অব্যাহত ছিল। এখন এই বিশেষ সুবিধা না থাকার কারণে ব্যাংক খাতে বেড়ে চলছে খেলাপি ঋণের অংক। 

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করেছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৮ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। যা মোট  ঋণের ২০ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। আর গত মার্চ পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৫৭ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। 

একইভাবে, চলতি বছরের মার্চ শেষে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৩৩ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১৫ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। এছাড়া গত মার্চ পর্যন্ত বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৬৩ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। এসব ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ ২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

আরএইচ/ইএফ

Link copied!